কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: হাত কাঁপছে। তবু এক হাতে ধরে রয়েছেন লাঠি। বয়স হয়েছে চোখের চশমা আজ ঘোলাটে। কিন্তু কিন্তু মনের জেদ আর সাহস আজও অদম্য। তিনি গন্ধর্ব সিং। বয়স ১১০ বছর। নিজেকে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে একজন প্রতিবাদী কৃষক হিসেবে সগর্বে পরিচয় দেন। কেন্দ্রের কৃষি বিলের বিরুদ্ধে যখন দিল্লি উপকন্ঠে গাজীপুর সীমান্তে প্রতিবাদ দেখাচ্ছেন কৃষকেরা। তখন তিনি সেখানে যান। নিজেকে যুক্ত করেন কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে। গাজীপুর ছাড়াও টিকরি এবং সিঙ্ঘু সীমান্তেও গেছেন তিনি। প্রতিবাদী কৃষকদের হয়ে আওয়াজে তুলেছেন ওই জমায়েত গুলিতে।
বয়সের ভারে শরীর নুইয়ে পড়লেও মনের তেজে যেন তিনি আজও এক যুবক। দীপ্ত কণ্ঠে স্মৃতিচারণায় তিনি জানালেন, ত্রিশের দশকের শেষের কথা। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তখন ক্রমেই গর্জে উঠছে ভারত। কৃষকরাও ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে। গাজীপুর সীমান্তে এসে প্রতিবাদী কৃষকদের জমায়েতের সঙ্গেই কোথাও যেন ব্রিটিশ আমলের মিল খুঁজে পেলেন তিনি। তিনি বলেন, সেই সময়ে ইংরেজদের শোষন আমি দেখেছি। কিন্তু সেই শোষণ আজ আমাদের ভারতীয়রাই করছে।এই ভারতের জন্য আমরা লড়াই করিনি।”
প্রতিদিন ভোরবেলা উঠে পড়েন গন্ধর্ব সিং। উঠে তিনি রোজ একটাই প্রার্থনা করেন বিজেপি মুক্ত ভারতের। তারপর গীতা পাঠ করেন। সন্ধে হলেই প্রতিবাদীরা যখন বিপ্লবের গান গায় তখন নীরব শ্রোতা হয়েই সেই গান শুনে তিনি। কৃষক নেতা রাকেশ টিকাইতকে একজন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ নেতা হিসেবে মনে করেন শতকোর্ধ্ব স্বাধীনতা সংগ্রামী।
বৃদ্ধ এই স্বাধীনতা সংগ্রামীর স্পষ্ট জবাব, ” আজাদী কা মাতলাব ইয়ে তো নেহি থা বিজেপি কা গোলামী করে। ইয়ে সরকার সিরফ কানুন ঠোপতি হ্যায়”। অর্থাৎ “স্বাধীনতার মানে এই শিরোনামে বিজেপির দাসত্ব করতে হবে। এই সরকার শুধুমাত্র আইন জারি করতেই জানে।” দীপ্ত গলায় জানালেন গন্ধর্ব সিং। কৃষকদের প্রতিবাদের সঙ্গে চোখ বুজলে আজ তার মনে পড়ে গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনের কথা। তখন তাঁর শৈশব। সেই দিনগুলোর কথা আজও মনে পড়ায় বৃদ্ধ গন্ধর্ব কে।
ইংরেজ সাম্রাজ্যের থেকেও মোদী সরকার কে ভয়ঙ্কর বলে মনে করেন তিনি। তার স্পষ্ট জবাব “ইংরেজ নে হিন্দুস্তান কা বাটোয়ারা কিয়া। মোদী দিল কা বাটোয়ারা কার রাহা হ্যা।” একবিংশ শতকে এসে দেশের সমস্ত জাতি সম্প্রদায় কে অর্থনৈতিকভাবে সামাজিকভাবে ধ্বংস করছে মোদী সরকার দাবি গন্ধর্বের।
ইংরেজরা যেমন তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই দেশদ্রোহীতার নাম জুড়ে দিত। ঠিক একইভাবে মোদী সরকার সেই বিভাজন সৃষ্টি করে দেশদ্রোহিতার নামে শোষণ করছে বলে জানালেন এই বৃদ্ধ। মোদীর দেশপ্রেমের জিগির আসলে ক্ষমতায় টিকে থাকা আর বিভাজন করার একমাত্র হাতিয়ার। তীব্র অনুশোচনা আর শ্লেষ ঝরে পড়ল বৃদ্ধ প্রতিবাদী ষর গলায়। বয়স হয়েছে। কিন্তু তাঁর প্রতিবাদের এই তেজ যেন মনে পড়ায় অসহযোগ আন্দোলন কিংবা গান্ধীজীর ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় কালকেই। ১৯১১ সালে জন্ম গন্ধর্ব সিংয়ের। তখন ভারতের বুকে রীতিমতো দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ। তারপর চার দশক পর ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। গন্ধর্ব তখন একজন যুবক। তারপর ৭ দশক বছর পেরিয়ে গেছে। স্বাধীনতার ৭৫ বছরে পা রাখতে চলেছে ভারত। কিন্তু গন্ধর্বদের মতো প্রবীণ স্বাধীনতা সংগ্রামীরা হয়তো আজও আফসোস করেন। কারণ হয়তো তারা যে ভারতের জন্য লড়াই করেছিলেন সেই ভারতকে খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁরা…..।