নয়াদিল্লি: বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে দিল্লির জাহাঙ্গিরপুরী মামলার শুনানি। দাঙ্গাবিধ্বস্ত জাহাঙ্গিরপুরীতে উচ্ছেদ অভিযানের উপর স্থগিতাদেশ দাবি করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা হয়েছে। আগামিকাল বৃহস্পতিবার মামলার শুনানি, তার আগে জাহাঙ্গিরপুরীতে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। দেশের প্রধান বিচারপতির নির্দেশের পরও কিন্তু বুলডোজার থামেনি। উচ্ছেদ বন্ধ রাখতে শেষপর্যন্ত ফের হস্তক্ষেপ করতে হয় প্রধান বিচারপতিকে। আদালতের রেজিস্ট্রিকে ‘কোর্ট-অর্ডার’ দিল্লি পুলিসের ডেপুটি কমিশনারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে। গুঁড়িয়ে ধুলো হয়ে গিয়েছে অসংখ্য ঘর-বাড়ি-দোকান।
উত্তর-দিল্লি পুরসভার ১০৪ আসনের মধ্যে সিংহভাগই (৬৪ আসন) ভারতীয় জনতা পার্টির দখলে। বোর্ডে বিজেপি’র দাপট। দ্বিতীয় স্থানে আম আদমি পার্টি (২১ আসন)। ধারে ভারে অনেকটাই পিছিয়ে আপ। জাহাঙ্গিরপুরীতে উচ্ছেদ অভিযানের সিদ্ধান্ত এই বিজেপি শাসিত বোর্ডের। কোনও রকম নোটিস, আগাম ঘোষণা ছাড়াই বুধবার সকাল ৯টায়, লোকলস্কর, বুলডোজার, পুরকর্মীদের নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়ে যায়। সঙ্গে প্রায় দেড় হাজার পুলিস ও আধা-সামরিক বাহিনী। খাকি উর্দিতে জাহাঙ্গিরপুরী ছয়লাপ। উত্তর-দিল্লি পুরবোর্ড চিঠি লিখে চারশো পুলিস ফোর্স চেয়েছিল। সেখানে প্রায় তিন থেকে চার গুণ বাড়তি পুলিস মোতায়েন করা হয়।
"Anti-encroachment drive has been stopped in Jahangirpuri area," says Special Commissioner of Police, Law & Order, Delhi Police pic.twitter.com/1yOj3cqWkG
— ANI (@ANI) April 20, 2022
জাহাঙ্গিরপুরীর বাসিন্দারা অবশ্য পুরসভার তরফ থেকে কোনও নোটিস পাননি। বুলডোজার তাই শুরু থেকেই সক্রিয়। জামিলার ঠেলাগাড়ি তাই দুরমুশ করে দেয় পুরসভার লোকজন। জামিলা এবং তাঁর স্বামী গত দু’দশক ধরে এই ঠেলাগাড়িতে চাপিয়েই এটা-সেটা বিক্রি করে থাকেন। বললেন, ‘এ সব হচ্ছে শুধুমাত্র প্রতিশোধ আর বদলার রাজনীতি। আর কিছু না।’ জামিলার মত করে ভাবছেন জাহাঙ্গিরপুরীর অনেকেই। তাঁদের দাবি, বেছে বেছে শুধু একটি সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর-দোকানই ভেঙে দিচ্ছে প্রশাসন।
একটি ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে বুলডোজারের সামনে কাতর প্রার্থনা জানাচ্ছেন এক মহিলা। শেষ সম্বলটুকু যেন কেড়ে না নেওয়া হয়। ঘর তো ভেঙেচুরে গিয়েছে, পড়ে রয়েছে এই সামান্য় কয়েকটা পোঁটলা। তাও বুলডোজারে ক্রেন মুখে করে তুলে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে পুরসভার গাড়িতে। আস্তাকুড়েয়। জাহাঙ্গিরপুরীর মানুষ বলছেন, ‘পাঁচ দিন ধরে তেমন করে কোনও খাবারই জুটছে না। পরিবারের সামান্য রোজগেরে লোকটাকেই তো পুলিস তুলে নিয়ে চলে গিয়েছে।’ এ শুধু একটা ঘরের না, জাহাঙ্গিরপুরীর প্রায় প্রত্যেক ঘরেরই একই কাহিনি। ‘দুশো-তিনশো টাকাই তো রোজগার করে জোটে প্রতিদিন। এখনও তাও নেই বাচ্চাদের খাওয়াব কী?’
উত্তর-দিল্লি পুরসভার সাফাই, জাহাঙ্গিরপুরীর উচ্ছেদ অভিযান স্রেফ রুটিন কাজ। বেআইনিভাবে দখল করা সরকারি জমি ও রাস্তা সাফ করতেই এই অভিযান। রুটিন অভিযান মেনে নিলেও প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যায়, আগের থেকে কেন কোনও রকম নোটিস দিল না বিজেপি শাসিত পুরবোর্ড? কেন সব কিছুতেই মামলা শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়?