কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: কর্নাটকে শিক্ষার গৈরিকীকরণের বিরুদ্ধে এবার শাসক বিজেপির অন্দরেই প্রতিবাদ উঠল। দলের এক বিধায়ক বলেন, এভাবে শিক্ষার গৈরিকীকরণ মেনে নেওয়া যায় না। শিক্ষার সঙ্গে রাজনীতিকে মেলানো ঠিক নয়। ইতিমধ্যে দুই কন্নড় লেখক পাঠ্যবই থেকে নিজেদের লেখা প্রত্যাহার করে নিতে চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। তাঁরা সরকারের কাছেও একই দাবি জানিয়েছেন। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, শিক্ষাক্ষেত্রে নির্লজ্জের মতো রাজনীতিকে টেনে আনার বিরুদ্ধেই ওই দুই লেখকের এই পদক্ষেপ। সব মিলিয়ে এই পরিস্থিতিতে চাপের মুখে পড়েছে কর্নাটকের বিজেপি সরকার।
সূত্রের খবর, স্কুলের পাঠ্যবইয়ে আরএসএসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কেশব বলিরাম হেডগাওয়ারের একটি বক্তৃতা স্থান পেয়েছে। কিন্তু কেরলের শ্রীনারায়ন গুরু কিংবা তামিলনাড়ুর পেরিয়ারের মতো সমাজ সংস্কারকদের কোনও বক্তৃতা বা বাণী কর্নাটকের পাঠ্যবইয়ে নেই। এর বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ শুরু হয়েছে বিজেপি শাসিত ওই দক্ষিণি রাজ্যে। কর্নাটকে দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে এবার সঙ্ঘ পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা হেডগাওয়ারের একটি বক্তৃতা রয়েছে। সেখানে কন্নড় লেখক দেবানুর মহাদেব এবং জি রামকৃষ্ণের দুটি লেখাও রয়েছে। দলিত সাহিত্যিক মহাদেব এক বিবৃতিতে বলেন, আমার ওই লেখাটি দশম শ্রেণির পাঠ্যবই থেকে তুলে নিলে আমি খুশি হব। একান্তই যদি তা না করা যায়, তাহলে যেন পরিষ্কার করে বলে দেওয়া হয় যে আমার অনুমোদন ছাড়াই ওই লেখাটি পাঠ্যবইয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
মহাদেব আরও বলেন, যাঁরা এল বাসবরাজু, এ এন মূর্তিরাও, পি লঙ্কেশ এবং সারা আবু বকরের লেখা পাঠ্যবই থেকে বাদ দেন, তাঁদের কন্নড় ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণাই নেই। তিনি কটাক্ষের সুরে প্রশ্ন তুলেছেন, কারা এসবের দায়িত্বে থাকেন। বামপন্থী পণ্ডিত হিসেবে পরিচিত জি রামকৃষ্ণ এক বিবৃতিতে বলেন, রাজ্যে স্বাভাবিক বুদ্ধিমত্তাকে ধ্বংস করার প্রচেষ্টা চলছে। পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে শিশুমনকে বিষাক্ত করে তোলার চক্রান্ত হচ্ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে এই রাজনীতিকরণ ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
সরকারি সূত্রে খবর, স্কুলের পাঠ্যবই রিভিউ সংক্রান্ত কমিটির শীর্ষে রয়েছেন সঙ্ঘ পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ রোহিত চক্রতীর্থ। সম্প্রতি প্রথম থেকে দশম শ্রেণির বইয়ে অনেক বিষয়ের অদলবদল করা হয়েছে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়েও একইভাবে বিষয়ের অদলবদল করা হয়েছে। সম্প্রতি রাজ্য সরকার প্রি ইউনিভার্সিটির পাঠ্যবইয়েও রিভিউয়ের ব্যাপারে চক্রতীর্থকেই দায়িত্ব দিয়েছে। বিশিষ্টদের অভিযোগ, সামগ্রিকভাবে শিক্ষার গৈরিকীকরণের লক্ষ্যেই কর্নাটক সরকার এসব কাজ করছে।
আরও পড়ুন: Weather Update: কলকাতায় আজও হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা, স্বস্তি মিলছে না দক্ষিণবঙ্গে
এসবের প্রতিবাদে মুখ খুলেছেন রাজয বিধান পরিষদের বিজেপি সদস্য এ এইচ বিশ্বনাথও। তিনি বলেন, আমি নিজে একসময় প্রাথমিক শিক্ষামন্ত্রী ছিলাম। এসব আর সহ্য করা যাচ্ছে না। পাঠ্যবই রাজনৈতিক যুদ্ধ করার বিষয় নয়। এখন রাজ্যে শিক্ষাকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কে এই রোহিত চক্রতীর্থ? তিনি কী অধ্যাপক? তিনি সঙ্ঘ পরিবারের লোক। এটাই তাঁর একমাত্র পরিচয়। বলা হচ্ছে, রোহিত নাকি দুটি বই লিখেছেন। দুটি বই লিখেই তিনি পণ্ডিত হয়ে গিয়েছেন? রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী বি সি নাগেশ চক্রতীর্থের পাশেই দাঁড়িয়েছেন।