নয়াদিল্লি: পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র ভারতবর্ষে ভোট পরিচালনা করে নির্বাচন কমিশন। ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সংবিধান-স্বীকৃত কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কমিশন কী আদৌ নিরপেক্ষ? স্বাধীন সংস্থা হলেও অতীতে বহুবার নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মোদি জমানায় বিরোধী দলগুলি বারংবার কমিশনের নিরপেক্ষতা প্রশ্ন তুলেছে।
আরও পড়ুন: নির্বাচন কমিশন মদত না দিলে বিজেপি ৩০ আসনও পেত না: মমতা
চলতি বছর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন পরিচালনা করার ক্ষেত্রেও কমিশনের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। করোনা পরিস্থিতিতে ৮ দফায় ভোট করানো নিয়েও কমিশনকে তুলোধোনা করেছে তৃণমূল, সিপিএম, কংগ্রেস সহ বেশ কয়েকটি দল। তাৎপর্যপূর্ণভাবে চুপ ছিল বিজেপি। তৃণমূলের তরফে বারবার অভিযোগ তোলা হয়, বিজেপির অঙ্গুলিহেলনেই ৮ দফায় ভোট করিয়েছে কমিশন।
লোকসভা তো বটেই, রাজ্যসভার ভোটও পরিচালনা করে থাকে কমিশন। এই রাজ্যসভার নির্বাচন নিয়েই একটি তথ্য সামনে এসেছে আর যা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। ২০১৬ সালের জুন মাসে হরিয়ানা থেকে রাজ্যসভার সাংসদ নির্বাচিত হন বিজেপি প্রার্থী বীরেন্দর সিং এবং বিজেপি সমর্থিত নির্দল প্রার্থী সুভাষ চন্দ্র। সুভাষ চন্দ্রের সাংসদ নির্বাচিত হওয়া নিয়েই নানা প্রশ্ন উঠেছে।
আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশের জেলা পঞ্চায়েত নির্বাচনে গেরুয়া ঝড়
হরিয়ানা বিধানসভায় ৯০টি আসন রয়েছে। ২০১৬-র রাজ্যসভার দুটি আসনের জন্য তিনজন প্রার্থীর মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়। তাঁরা হলেন, বিজেপি প্রার্থী বীরেন্দর সিং, বিজেপি সমর্থিত নির্দল প্রার্থী সুভাষ চন্দ্র এবং কংগ্রেস-আইএনএলডি সমর্থিত নির্দল প্রার্থী আর কে আনন্দ। প্রথম রাউন্ডে বীরেন্দর সিং ৪০টি, আর কে আনন্দ ২১টি এবং সুভাষ চন্দ্র ১৫টি ভোট পান। ১৪টি ভোট বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।
১৪টি ভোট বাতিল হয়ে যাওয়ায় বীরেন্দরের জিততে ২৬টি ভোট প্রয়োজন ছিল। বীরেন্দর তাঁর প্রাপ্য ৪০টি ভোট থেকে ১৪টি ভোট বিজেপি সমর্থিত প্রার্থী সুভাষ চন্দ্রকে ট্রান্সফার করেন। এর ফলে সুভাষ চন্দ্রের প্রাপ্ত ভোট দাঁড়ায় ২৯। কংগ্রেস-আইএনএলডি সমর্থিত নির্দল প্রার্থী আর কে আনন্দ ২১টি ভোট পেয়ে তৃতীয় হন। ফলে সহজেই জয় পান সুভাষ চন্দ্র।
আরও পড়ুন: করোনার তৃতীয় ধাক্কা সামলাতে তৈরি হচ্ছে ১৫০০ অক্সিজেন প্লান্ট
বিতর্ক দানা বেধেছে বাতিল হওয়া ১৪টি ভোট নিয়ে। সাধারণত রাজ্যসভার ভোটদানের ক্ষেত্রে বেগুনি কালির পেন ব্যবহার করা হয়। কমিশনের যুক্তি, ১৪ জন কংগ্রেস বিধায়ক কালো কালি দিয়ে ভোট দেন। সে কারণেই তাঁদের ভোট বাতিল করা হয়। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া বেগুনি কালির পেন দিয়ে ভোট দেন বিজেপি বিধায়করা। অভিযোগ, বিজেপির শেষ বিধায়ক ভোট দেওয়ার পর বেগুনি কালির পেন সরিয়ে কালো কালির পেন কংগ্রেস বিধায়কের হাতে তুলে দেন।
১৪ জন কংগ্রেস বিধায়ক কালো কালির পেন দিয়েই ভোট দেন। বেগুনি কালির পেনের বদলে কালো কালির পেনে ভোট দেওয়ায় সেই ভোটগুলি বাতিল করে কমিশন। এর ফলে সহজ জয় পান বিজেপি প্রার্থী বীরেন্দর সিং এবং বিজেপি সমর্থিত নির্দল প্রার্থী সুভাষ চন্দ্র। কংগ্রেস বিধায়করা কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও কমিশন নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। সেই সময় মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ছিলেন নাসিম জাইদি।
আরও পড়ুন: বিজেপি এজেন্টের কাজ করছেন রাজ্যপাল, তোপ তৃণমূলের
প্রশ্ন উঠছে, কমিশনের উপস্থিতিতে যেখানে পেন বদল করা সম্ভব হয়েছে, সেখানে কমিশন যে ব্যালট বক্সে ভোট করাচ্ছে, তা যে ভুয়ো নয়, তার গ্যারান্টি কে দেবে? এর আগেও কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে, হয়তো ভবিষ্যতে উঠবে! প্রশ্ন একটাই এভাবে ভোট পরিচালনা করা হলে আদৌ কী গণতন্ত্র জিতবে?