নয়াদিল্লি: নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি দেশের মসনদে বসার পর থেকেই ডিজিটাল ইন্ডিয়ার ধুঁয়ো তুলেছে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে ডিজিটাল ইন্ডিয়া ক্যাম্পেন চালিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি সহ নানা ক্ষেত্রকে ডিজিটালাইজড করার হিড়িক উঠেছে। কিন্তু কাজের কাজ যে কিছুই হয়নি, তা আবারও সামনে এল। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার কঙ্কালসার চেহারা উঠে আসল কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের একটি রিপোর্টে।
ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দেশের ২২ শতাংশ স্কুলে ইন্টারনেট পরিষেবা ছিল না। সরকারি স্কুলের পরিসংখ্যানও তো আরও হতাশাজনক। ১২ শতাংশেরও কম সরকারি স্কুলে ইন্টারনেটের সুবিধা রয়েছে। মাত্র ৩০ শতাংশ স্কুলের কম্পিউটার ঠিকমতো কাজ করে। এর জেরে করোনা পরিস্থিতিতে ধাক্কা খেয়েছে অনলাইন পঠনপাঠন। ভবিষ্যতেও এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে পারে শিক্ষাব্যবস্থায় এমনটাই আশঙ্কা শিক্ষাবিদদের।
ইউনিফাইড ডিগ্রি ইনফরমেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন প্লাস (UDISE+) সারা দেশের ১৫ লক্ষেরও বেশি স্কুল থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। করোনার প্রথম ঢেউয়ের জেরে ২০২০-র মার্চেই দেশজুড়ে স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে যায়। ১৫ মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরেও স্কুল এখনও খোলেনি। ফলে অনলাইন পঠনপাঠনই ভরসা পড়ুয়াদের। করোনা কাটিয়ে কবে স্কুল খুলবে তাও অনিশ্চিত। এই পরিস্থিতিতে এহেন রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসায় অস্বস্তিতে কেন্দ্র।
তবে দেশের সব রাজ্যের পরিস্থিতি অবশ্য এক নয়। কয়েকটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ও কেরলের ৯০ শতাংশ স্কুলে কম্পিউটার রয়েছে। সেগুলি ঠিকঠাক কাজও করে, এমন তথ্য মিলেছে রিপোর্টে। ছত্তিশগড়, ঝাড়খন্ড, তামিলনাড়ু, গুজরাট, মহারাষ্ট্রের সিংহভাগ স্কুলে কম্পিউটার রয়েছে। যোগীরাজ্যের মাত্র ৫ শতাংশ সরকারি স্কুলে কম্পিউটার রয়েছে। কেরল, দিল্লি ও গুজরাটের স্কুলগুলিতে ইন্টারনেট ব্যবস্থা সন্তোষজনক।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ দেবাশিস সরকার বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থায় পড়াশুনো চালাতে চাইলেও দেশের সিংহভাগ পড়ুয়ার কাছে ডিভাইস বা ইন্টারনেট পরিষেবা নেই। ২০২০-র শুরু থেকেই দেশের শিক্ষকসমাজ একথা বলে আসছে। সরকারি রিপোর্টেও বারংবার উঠে এসেছে, অনলাইন পদ্ধতিতে পড়াশুনো চালানোর মতো ক্ষমতা বা সামর্থ্য দেশের অধিকাংশ পড়ুয়ার নেই। দুর্ভাগ্যের কথা এটাই, সরকার যে রিপোর্ট দিচ্ছে, নিজেই তার বিপরীত পথে হাঁটছে।’