আগ্রা : খুব উদ্বিগ্ন হয়ে হাসপাতালে ঢুকলেন এক ব্যক্তি। চোখে মুখে তাঁর ভয়ের ছাপ। দেখা মনে হবে খারাপ কিছু ঘটেছে। উদ্বিগ্ন হয়ে ডাক্তারদের খুঁজছেন তিনি। হাসপাতালের কয়েকজন ডাক্তারকে দেখতে পেয়ে তাঁদের দিকেই এগিয়ে গেলেন। তাঁর মুখ চোখের অবস্থা দেখে তাঁকে কী হয়েছে জিজ্ঞেসা করলে নিজের হাতে ধরে থাকা মূর্তিটা এগিয়ে দেন ডাক্তারদের দিকে। প্রথমটা খেয়াল না করলেও পরে তাঁরা বুঝতে পারেন, ওই ব্যক্তি হাতে একটি কৃষ্ণের মূর্তি রয়েছে। কিন্তু মূর্তির হাতটা ভেঙে গেছে।
আরও পড়ুন : রাম-কৃষ্ণকে সম্মান দিতে আইন তৈরির প্রস্তাব আদালতের
প্রথমে চিকিৎসকরা ব্যাপারটা বুঝতে পারেনি। তাঁদের অবস্থা দেখে প্রায় কেঁদে ফেলেই ব্যক্তি বলেন, তাঁর কৃষ্ণের হাত জুড়ে দিতে হবে। ওই ব্যক্তি একজন পুরোহিত। তিনি সকালে কৃষ্ণকে স্নান করাচ্ছিলেন, সেই সময় দুর্ঘটনাবশত কৃষ্ণের হাত ভেঙে যায়। এখন যে ভাবেই হোক তাঁর কৃষ্ণের হাত জুড়ে দিতে হবে। এই শুনে রীতিমত ভিরমি খাওয়ার দশা ডাক্তারদের। তাঁরা ভেবেছিলেন, ওই পুরোহিতের পরিজনের কিছু হয়েছে হয়তো। কিন্তু মূর্তির হাত জুড়তে হবে, এটা তাঁরা কল্পনা করেননি। কিন্তু পুরোহিত ততক্ষণে কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছেন। এই ঘটনাটি ঘটে আগ্রার এক জেলা হাসপাতালে। পুরোহিতের নাম লেক সিং। তিনি অর্জুন নগরের খেড়িয়া মোড়ের একটি মন্দিরে ৩০ বছর ধরে পুজো করছেন। তাঁর এই কান্নার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অনিচ্ছা সত্ত্বেও লেক সিংয়ের কৃষ্ণকে হাসপাতালে ভর্তি করে নেওয়া হয়। রেজিস্ট্রেশনে রোগীর নাম লেখা হয় “শ্রী কৃষ্ণ”। কিন্তু চিকিৎসা করবেন কিভাবে, ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছিলেন না চিকিৎসকরা। এরপর পুরোহিত লেক সিংকে খুশি করতে কৃষ্ণের মূর্তির হাতে একটি ব্যান্ডেজ বেঁধে দেন তাঁরা।
প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানিয়েছেন, সকাল ৯টা নাগাদ প্রায় কাঁদতে কাঁদতে হাসপাতালে এসেছিলেন লেক সিং। তারপর ডাক্তারদের নিজের কৃষ্ণের মূর্তি দেখিয়ে তার চিকিৎসা করার জন্য কাকুতিমিনতি করতে দেখা যায় তাঁকে। লেক সিং জানিয়েছেন, সকালে তিনি যখন তাঁর কৃষ্ণের মূর্তিটিকে স্নান করেছিলেন, তখন তাঁর হাত থেকে মূর্তিটি পিছলে যায়। মাটিতে পড়ে কৃষ্ণের হাত ভেঙে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাঁর দেবতা কৃষ্ণকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন। কিন্তু কেউ তাঁর অনুরোধে কান দিচ্ছিল না। কৃষ্ণের চিকিৎসা হচ্ছে না দেখে তিনি খুবই ভেঙে পড়েছিলেন। হাসপাতালের চিকিৎসক অশোক কুমার আগরওয়াল জানান, ওই পুরোহিতের অনুভূতিতে আঘাত দিতে চাননি চিকিৎসকরা। তাই তাঁকে খুশি করতেই কৃষ্ণের মূর্তির হাতটা ব্যান্ডেজ করে দেন তাঁরা।