গুয়াহাটি: শকুনের চোখ ভাগাড়ের দিকে বলে যতই গালমন্দ করা হোক না কেন, পরিবেশ সুরক্ষার স্বার্থে এই প্রাণীটিকে (Endangered Vultures) উপেক্ষাও করা যায় না। যে কারণে জাতীয় উদ্যান গড়ে শকুন সংরক্ষণের ব্যবস্থাও করেছে রাজ্য। এ হেন বিপন্ন শকুনের (Endangered Vultures) ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’তে উদ্বিগ্ন অসম রাজ্য প্রশাসন। এক নয়, প্রায় শতাধিক শকুনের মৃত্যুই প্রশাসনের উদ্বেগের কারণ।
কামরূপ জেলার ছায়াগাঁও থেকে প্রায় ১০০টি শকুনের মৃতদেহ উদ্ধারে প্রশাসনের টনক নড়েছে। ঘটনাস্থল থেকে আরও কয়েক’টি শকুন মরণাপন্ন অবস্থায় উদ্ধার হয়। ধুঁকতে থাকা সেই শকুনগুলির চিকিত্সা চলছে। ঘটনাস্থল থেকে বনকর্মীরা যে নমুনা সংগ্রহ করেছেন, তাতে মনে করা হচ্ছে, কীটনাশক মেশানো ছাগলের দেহ থেকে বিষক্রিয়াতেই শকুনগুলির এই মর্মান্তিক পরিণতি হয়েছে। তবে, শকুন-মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে ময়নাতদন্ত রিপোর্টের অপেক্ষা করছেন বন দফতরের আধিকারিকরা।
অসম রাজ্য বনদফতর সূত্রে খবর, কামরূপ জেলার ছায়াগাঁও থানার মিলানপুর থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ৯৭টি শকুনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধার হওয়া আরও ১২টি শকুনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। একই জায়গা থেকে একটি ঈগলকেও অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
কামরূপ পশ্চিম বন বিভাগের জেলা বনাধিকারিক ডিম্পি বোরা শুক্রবার জানান, শকুনের মৃতদেহগুলির আশপাশে কয়েকটি হাড় পড়ে ছিল। সেগুলি ছাগলের। আমাদের আশঙ্কা, কীটনাশক মেশানো ছাগলের মৃতদেহ খাওয়ার কারণেই বিপন্ন এই প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে। জেলা বনাধিকারিকের কথায়, ‘এটা বড় অপরাধ। এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হব।’ তাকে গ্রেফতারের আগে পোস্ট মর্টেমের রিপোর্টের অপেক্ষা করা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
About 100 vultures have been found dead and many critical at Milanpur, Chaiygaon.
The doctors and field staffs are trying their best to treat the critical ones pic.twitter.com/WUUJa1G1nx
— Assam Forest Department (@assamforest) March 17, 2022
ছায়াগাঁওয়ের এই জায়গায় চলতি বছরের গোড়াতেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু, সে বার এত বিপুল সংখ্যক শকুনের মৃত্যু হয়নি। ভবিষ্যতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে লোকজনকে সতর্ক করার কথাও জানিয়েছেন ডিএফও।
বিপন্ন বৃত্তান্ত
ভারতীয় উপমহাদেশে কয়েক দশক আগেও চার কোটি শকুন ছিল। এখন সেখানে মাত্র ১০ হাজারের মতো বাংলা শকুন টিকে আছে। পড়শি বাংলাদেশে এদের সংখ্যা ২৫০-র আশপাশে। যে কারণে আক্ষরিক অর্থেই শকুন এখন বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী।
আরও পড়ুন: Diamond Harbour: স্বামীর সঙ্গে একই বিছানায় পুরুষ-সতীন?
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, শকুনকে বিপন্ন করে তুলেছে গবাদিপশু চিকিৎসায় ব্যবহৃত ‘ডাইক্লোফেনাক’ নামে ব্যথানাশক ঔষধ। যে কারণে ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে ইতিমধ্যে ডাইক্লোফেনাকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই বিষক্রিয়া দেখা গিয়েছে কিটোপ্রোফেনের ক্ষেত্রেও। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডাইক্লোফেনাক দেওয়া হয়েছে, এমন মৃত পশুর মাংস খেলে কিডনি নষ্ট হয়ে ২-৩ দিনের মধ্যে শকুনের মৃত্যু ঘটে। এ কারণে গত তিন দশকে উপমহাদেশে ৭৫% শকুন মারা গিয়েছে। ভারতে প্রতি বছর ৩০ শতাংশ শকুন মৃত্যুর কারণ ডাইক্লোফেনাক।