কাজের চাপ বেড়েছে মানসিক চাপ। তারপর আবার আর শহরের তীব্র গরমে নাজেহাল হয়ে উঠেছেন। এই ক্লান্তি কাটানোর সেরা উপায় হল কোথাও গিয়ে ঘুরে আসা। ঘোরার কথা মনে হলেই প্রথমে মনে আসবে সবুজ ঘেরা পাহাড়ে হারিয়ে যাওয়ার কথা। তা হলে আর দেরি না করে শান্ত, নিরিবিলি প্রকৃতি মাঝে মহানন্দা অভয়ারণ্যের (Mahananda Sanctuary)মাথার উপর ছোট পাহাড়ি গ্রামের ঘুরে আসুন। প্রকৃতির টানে সবুজ ঘেরা পরিবেশের মধ্যে দু একদিন ছুটি কাটানোর আর্দশ স্থান এই ছোট পাহাড়ি গ্রাম। থাকার জন্য রয়েছে একাধিক হোমস্টে। ৪২০০ ফুট গড় উচ্চতায় এই গ্রামের নাম লাটপাঞ্চার (Latpanchar), যার দূরত্ব শিলিগুড়ি থেকে মাত্র ৪১কিমি। গ্রামের যে অংশেই যাবে গোটা অংশ জুড়ে শুধুই কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য।
শিলিগুড়ি থেকে গাড়ি করে যেতে হবে কালিঝোরায়। পশ্চিম সিকিমের পেলিং ভ্রমণ সেরে এবারের ভ্রমণ সূচির দ্বিতীয় পর্বে ছিল লাটপাঞ্চার, সঙ্গে অহলদাড়া ও সিটং। কালিঝোরায় থেকে লাটপাঞ্চার য়াওয়ার পথে ধেখতে পাবেন রাস্তার দুপাশে শাল গাছের ঘন জঙ্গল। মাঝে মধ্যে পথে পড়ছে দু একটি ছোট ছোট ঝর্ণা। প্রায় ঘন্টাখানেক সে পথে চলে অনেকটা উঠে, জঙ্গলের শেষে পৌঁছাবেন, লাটপাঞ্চার। বেশ বড় গ্রাম।
এখানকার মূল আকর্ষণ হর্নবিল পাখি। এই পাখি দেখার আকর্ষণে বহু দূর দূর থেকে মানুষ ছুটে আসে। রাতজাগা এই পাখির ডানা ঝাপটানোয় শব্দ গোটা অঞ্চলে ডুড়ে শুনতে পাবেন। হর্নবিল ছাড়াও অনেক না দেখা পাখি এখানে পাবেন। প্রায় ২০০র বেশি প্রজাতির পাখি এই অঞ্চলে দেখা যায়। সকলের চোখ খুলেই দেখতে পাবেন কাঞ্চনজঙ্ঘার নৈর্সগিক দৃশ্য। পাশাপাশি দেখতে পাবেন কাব্রু এবং সিনিয়ালচু শৃঙ্গ। খুব ভোরে পৌঁছাতে না পারলে রাতের বেলায় সেখানে পৌঁছে যাবেন। থাকারও ব্যবস্থা আছে। এখানকার প্রাকৃতিক শোভাও অসাধারণ।
নামথিং পোখরির লেক। লেকের পাশেই দেখতে পাবেন গেছো ব্যাং, ফড়িং। এছাড়াও দেখতে পাবেন গাছের গুঁড়ির নীচে লুকিয়ে থাকা স্যালাম্যান্ডার। অবশ্যই ঘুরে আসবেন লেপচা মনাস্ট্রি থেকে। এখানে মনের এক প্রশান্তি মিলবে। অহলদাড়ার মাটির তৈরি প্রাচীন মনাস্ট্রি, রাস্তা থেকে কিছুটা ভিতরে একটা মাঠের মত জায়গায়। মনাস্ট্রি দেখে আবার ফিরতি পথে চা বাগানও ঘুরে দেখতে পারেন। পাহাড়ের কোলে চা বাগান সৌন্দর্যে আপনি মুগ্ধ হবেন। এই খাড়াই পথ ধরেই ট্রেকিং করে আরো অনেকটা গেলে পৌঁছে যাওয়া যায় পাহাড়ের উপর ‘পাঁচ পোখরি’ বলে একটা ছোট্ট লেকও দেখতে পাবেন।এর থেকে একটু এগিয়েই পথের পাশে পড়বে ‘নামথাং পোখরি’ (Namthang Pokhri)। পাহাড় ঘেরা শুকিয়ে যাওয়া একটি লেক। খুব সুন্দর পরিবেশ। চারপাশে ধুপি গাছের সারি। নামথাং পোখরিতে কাশফুলও চোখে পড়ল।
আরও পড়ুন: Kartick Aaryan | Kabir Khan | অজানা নায়ক কার্তিক
অহলদাড়া (Ahaldara)। এক অদ্ভুত সুন্দর ভিউ পয়েন্ট। ভিউ পয়েন্ট আগে অনেক দেখেছি। কিন্তু এত সুন্দর এ তল্লাটে নেই। ঢেউ খেলানো পাহাড়ের ঢাল উঠে গেছে সর্বোচ্চ স্থান অবধি। ৫০০০ফুট উচ্চতার অহলদারা লাটপাঞ্চার থেকে ৫কিমি। মেঘমুক্ত দিনে নাকি এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য অতুনীয়। একপাশে চোখে পড়বে চা বাগান। পাহাড়ের শিরের একদিকে রবীন্দ্রনাথে স্মৃতি বিজরিত মংপু।
লাটপাঞ্চার থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের কোলে সিটং (Sittong) গ্রাম। লাটপাঞ্চার থেকে সিটং ৭-৮ কিমি। সিটংয়ের আরেক নাম ‘অরেঞ্জ ভিলেজ’। পুরো গ্রামটা জুড়েই কমলা লেবুর গাছ। গাছে গাছে ভরে রয়েছে কমলালেবু। এখানে পাখি, প্রজাপতি, ফুল, সুন্দর করে সাজানো ছোট ছোট বাড়ি, কমলালেবুর বাগান, দেখতে পাবেন। অহলদাড়ায় বেড়ানো হয়ে গেলে হাতে সময় থাকলে ঢুঁ মারতে এই গ্রামটিতে। একটা দিন এখানে থাকতে পারলে সত্যিই ভালো লাগবে।
খন যাবেন
অক্টোবর থেকে এপ্রিল সবথেকে ভালো। মার্চ মাসে হর্নবিলরা বাসা বাঁধে। তবে জুন থেকে অক্টোবরের মধ্যে গেলে স্যালাম্যান্ডার বেশি পাওয়া যায়।
কী ভাবে যাবেন
হাওড়া থেকে ট্রেন ধরে পৌঁছে যেতে হবে, নিউ জলপাইগুড়ি। শিলিগুড়িতে থেকে শেয়ার জিপে পৌঁছে যাবেন লাটপাঞ্চার। দূরত্ব কম বেশি ৪৮ কিলোমিটার। এছাড়া কলকাতা থেকে সরাসরি গাড়ি নিয়ে চলে যেতে পারেন।