নয়াদিল্লি ও লন্ডন: ব্রিটেন (Britain) শেষবার রাজ্যাভিষেক (Coronation) দেখেছিল ১৯৫৩ সালে। স্বাধীন ভারতের (Independent India) তখন সবেমাত্র মাত্র জন্ম হয়েছে। রানির (Queen Elizabeth II) সেই অভিষেক অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথির মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুও (Jawaharlal Nehru)। পরে বিবিসিতে (BBC) এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে রাজকীয় জাঁকজমক দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী (First Prime Minister of India)। কিন্তু, ২০০ বছর রাজ করা ব্রিটিশ রানির অভিষেকে নেহরুর উপস্থিতি নিয়ে নিজের ঘরে সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি। অনেক ভারতীয় তাঁর এই হাজিরা নিয়ে বিরূপ প্রশ্ন তুলেছিলেন। এবার চার্লসের (King Charles III) রাজ্যাভিষেকে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন সস্ত্রীক উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় (Vice President Jagdeep Dhankar)। এখন সব সমালোচকদের মুখে কুলুপ।
আরও পড়ুন: Daily Bengali Horoscopes | Ajker Rashifal | আজকের রাশিফল | ০৭ মে, ২০২৩
তৃতীয় চার্লসের মাথায় রাজার মুকুট বসল। সেই অনুষ্ঠানকে ঘিরে গোটা ব্রিটেন যেন আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠল। রাজ্যাভিষেকে বিভিন্ন দেশের শীর্ষ সারির নেতা উপস্থিত ছিলেন। প্রায় ৭০ বছর আগের কথা। ১৯৫৩ সালের ২ জুন। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অভিষেকেও সদ্য স্বাধীন ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন নেহরু। সেবারই তিনি প্রথম টিভি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন বিবিসিকে। অনুষ্ঠান সম্পর্কে আবেগে বিহ্বল পণ্ডিতজি লন্ডনবাসীর শৃঙ্খলাপরায়ণতা ও ভব্যতা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু, সবেমাত্র ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা থেকে মুক্ত, পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করা ভারতের অভ্যন্তরে কটু কথায় বিদ্ধ হতে হয়েছিল তাঁকে। কোনও ভারতবাসীর তাঁর এহেন ব্রিটিশ অনুরক্তি দেখে খুশি তো হননি, উপরন্তু কঠোর নিন্দা শুনতে হয়েছিল।
সাক্ষাৎকারে বিবিসি সাংবাদিকও এই প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, ইংরেজদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর তিনি এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় কি দেশে নিন্দার ঝড় উঠবে না? জবাবে নেহরু বলেন, হতে পারে। কিন্তু, যা দেখেছেন তার সঙ্গে কোনও কিছুরই মূল্য হয় না। পরাধীন ভারতে এলিজাবেথকে এর আগে তিনবার অভিষেক সম্মানে ভূষিত করা হয়েছিল। ১৮৭৭, ১৯০৩ এবং ১৯১১ সালের সেই তিনটি অনুষ্ঠানেও বিভিন্ন দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তি এসেছিলেন। নয়াদিল্লির কনট প্লেস থেকে ১৭ কিমি দূরে সেই দিল্লি দরবার বসেছিল করোনেশন পার্কে।
১৮৫৭ সালে স্বাধীনতার প্রথম যুদ্ধের বছরখানেক পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত থেকে ব্রিটিশ সরকার ক্ষমতা নিয়ে নেয় এবং সেদেশের সংসদে গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া আইন পাশ হয়। রানির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয় ১৮৫৮-তে। সেই উপলক্ষে ইংরেজ আমলা টমাস হেনরি থ্রনটন একটি গণ-উৎসবের আয়োজন করেন। কিন্তু রানি ভিক্টোরিয়া সেই উৎসবে যোগ দেননি। কিন্তু ভারত সম্বন্ধে তাঁর একটি ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। সেখানে তিনি প্রতিটি ভারতীয়র জন্য স্বাধীনতা, সাম্য এবং ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি দেন। স্বাস্থ্য এবং সুখী জীবনযাত্রার কথাও বলেন। রানির সেই ঘোষণাপত্রটি ভারতীয়দের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। দেশীয় রাজন্যবর্গ উল্লাসে ফেটে পড়েন এবং রানির দীর্ঘ জীবন ও সমৃদ্ধি কামনা করেন সে সময়।