Placeholder canvas
কলকাতা সোমবার, ২০ মে ২০২৪ |
K:T:V Clock

Placeholder canvas
Fourth Pillar | না মাননীয় রাজ্যপাল, আমরা মায়ের মৃত্যুতে ব্যান্ডপার্টি ভাড়া করি না    
কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক Published By:  কৃশানু ঘোষ
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ২১ জুন, ২০২৩, ১০:২০:০০ পিএম
  • / ১৪৪ বার খবরটি পড়া হয়েছে
  • কৃশানু ঘোষ

অন্যতম বাংলা খবরের কাগজের খবরে প্রকাশ ধুমধাম করেই পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন হল রাজভবনে। না, আমরা আমাদের চ্যানেলে সে খবর দেখাইনি, রাজভবনের রাজ্যপালকে জানানো দরকার যে আমরা আমাদের মায়ের মৃত্যুর পরে ব্যান্ডপার্টি ভাড়া করি না। মৃত্যু, শোক এসব উদযাপন করা হয় না, সেদিন শোকদিবস পালিত হয়, সেদিন আমরা ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করি, মৃত ব্যক্তির কাজ নিয়ে আলোচনা করি, নাচাগানা করি না। এই ২০ জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবস, কোথা থেকে এল? বছর চার পাঁচ রাষ্ট্রপতি ভবনের নির্দেশে এই দিবস পালন করা শুরু হয়েছে। ধনখড় সাহেব ছিলেন এই অনুষ্ঠানের প্রথম উদ্যোক্তা, এখন সেই ব্যাটন হাতে নিয়েছেন সি ভি আনন্দ বোস। কী আশ্চর্য তেনার এই বোস টাইটেল নাকি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অনুপ্রেরণায়। বেঁচে থাকাকালীন সুভাষ বসুর অনুগামীরা অধুনা রাজ্যপালের মতোই ইন্দ্রলুপ্ত আরেক নেতার মাথা ফাটিয়েছিলেন ঢিল মেরে, সেই নেতার নাম ছিল শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। জানিয়ে রাখি ইন্দ্রলুপ্ত কথাটির অর্থ টাক। এবং সেই ঢিল মারার পিছনে সুভাষ বসুর প্রত্যক্ষ সমর্থন ছিল। তিনি হিন্দু মহাসভা আর শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় সম্বন্ধে লিখেছিলেন, “হিন্দু মহাসভা তার মুসলিম সমকক্ষের মতোই, রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশ নিতে ভয় পেয়েছিল এবং নিজেদের জন্য একটি নিরাপদ প্ল্যাটফর্ম চেয়েছিল। এই সব ব্রিটিশভক্ত মহান পুরুষদের অন্যতম ছিলেন ডাঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।” সুভাষচন্দ্র বসুর লেখা ইন্ডিয়ান স্ট্রাগল বইতে এই উদ্ধৃতি পাবেন। তো সেই নেতাজি বেঁচে থাকলে যে আজ আরেকজনের টাকে ঢিল পড়ত এ নিয়ে আমার কোনও সন্দেহ নেই। আসুন বিষয়টাকে আরেকটু ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করি। 

কোথা থেকে এল এই পশ্চিমবঙ্গ দিবস? হ্যাঁ, এটা সত্যি যে দেশকে দু’ টুকরো করে স্বাধীনতা এসেছিল, তার পিছনে একটা নয় বহু কারণ ছিল। বহু অনিচ্ছা সত্ত্বেও সেদিনের বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই দেশ বিভাজন হয়েছিল। তা আটকানো যেত না? নিশ্চয়ই যেত, কিন্তু বহুদিন ধরে ইংরেজরা যে বিষবৃক্ষের চারা বসিয়েছিলেন, সাভারকর, জিন্না, মুসলিম লিগ, হিন্দু মহাসভা মিলে সে বৃক্ষকে মহীরুহ করে তুলল। তার বিষ ছড়িয়েছিল সর্বত্র। সে এক উন্মাদ সময়, স্বাধীনতা আর দেশভাগ হাত ধরাধরি করে এল। সাভারকরের মহারাষ্ট্র ভাগ হল? প্যাটেলের গুজরাত? নেহরুর উত্তরপ্রদেশ? ভাগ হল পঞ্জাব আর বাংলা। উঠোন পড়ে থাকল এক দেশে, বাগান আরেক জায়গায়, জায়নামাজের উদার জমিন ভাগ হয়ে গেল, মন্দিরের প্রাঙ্গণ ভাগ হয়ে গেল, স্কুল পড়ে থাকল এক জায়গায়, কামারশাল নাকি নতুন দেশ। এমনটা হল। সেই স্বাধীনতার দিনে জাতির পিতার চোখে জল, তিনি একলা চরকা আর সুতো নিয়ে বসে আছেন স্থবির। ২০ জুন সংযুক্ত বাংলার বিধানসভায় বাংলা ভাগের সিদ্ধান্ত হয়ে গেল। অরন্ধন ছিল সেদিন বাংলার গ্রামে শহরে। মাতৃবিয়োগের শোক ছিল মানুষের চোখে মুখে। মাননীয় রাজ্যপাল সেই দিনে ব্যান্ডপার্টি ভাড়া করে আনিয়েছেন আমাদের টাকায়, ধুমধাম করে বিভাজনের উৎসব পালন করা হচ্ছে, এরচেয়ে আহাম্মকের কাজ আর আছে নাকি? এবং সেই উৎসব পালন করার জন্য খুশি কারা? রাজ্যপালকে অভিনন্দন জানালেন কারা? কাঁথির খোকাবাবু শুভেন্দু অধিকারী, বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিজেপির নেতারা। ওনাদের ‘নাকি তাত্ত্বিক নেতা’ শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই হিন্দুরা পেয়েছিল তাদের বাসস্থান, না হলে বাংলার হিন্দুদের অস্তিত্ব বিপন্ন হত। কেউ এই পণ্ডিতকে জিজ্ঞেস পর্যন্ত করল না যে তাহলে আজ হিন্দু বিপন্ন বলে চিৎকার করছেন কেন? হিন্দু খতরে মে হ্যায়, তাই হিন্দুদের ঐক্য দরকার বলে চ্যাঁচাচ্ছেন কেন? কে এনেছিল এই দ্বিজাতি তত্ত্ব? কারা বুঝিয়েছিল হিন্দু আর মুসলমান দুটো আলাদা জাতি? কারা ছিল এই ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ করার মূল ষড়যন্ত্রকারী? 

পুনের জেলে বসেই মুচলেকা দেওয়া বীর বিনায়ক সাভারকর লিখেছিলেন ‘হিন্দুত্ব’ বইটা, সেই বইয়ে সাফ বলা ছিল এদেশ মানে হিন্দুস্থানের নাগরিক কারা? যাঁদের এই দেশে জন্ম, যাঁদের এই দেশে কর্ম এবং যাঁদের কাছে এই দেশ পুণ্যভূমি। মানে মুসলমানরা যান কাবা, খ্রিস্টানরা বেথলেহেম বা ভ্যাটিকান, তাহলে আর যাই হোক তাঁরা হিন্দুস্থানি নন, তাঁরা ভারতীয় নন। সেদিনই স্পষ্ট করে হিন্দু আর মুসলমান যে দুটো আলাদা জাতি, তাদের একসঙ্গে থাকা যে সম্ভব নয়, তা তিনি বলেই দিয়েছিলেন, এরও পরে প্রায় একই কথা বললেন মহম্মদ আলি জিন্নাহ। তিনি টু নেশন থিওরি, দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে আলাদা ভূখণ্ডের, আলাদা দেশের দাবি তুললেন। এবং এই দাবিরও বহু আগে এসব দ্বিজাতি তত্ত্বের কথা না বলেই বাংলা ভাগের নির্দেশ দিয়েছিলেন লর্ড কার্জন। রাস্তায় নেমেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, হাতে রাখি, গান গাওয়া হচ্ছে—

বাংলার মাটি, বাংলার জল,
বাংলার বায়ু, বাংলার ফল-
পুণ্য হউক, পুণ্য হউক,
পুণ্য হউক হে ভগবান॥

বাংলার ঘর, বাংলার হাট,
বাংলার বন, বাংলার মাঠ-
পূর্ণ হউক, পূর্ণ হউক,
পূর্ণ হউক হে ভগবান॥

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | হ্যাপি বার্থডে টু ইউ রাহুলজি: মমতা     

বাঙালির পণ, বাঙালির আশা,
বাঙালির কাজ, বাঙালির ভাষা-
সত্য হউক, সত্য হউক,
সত্য হউক হে ভগবান ॥

বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন,
বাঙালির ঘরে যত ভাই বোন-
এক হউক, এক হউক,
এক হউক হে ভগবান ॥

হিন্দু ভাইবোনেরা মুসলমান ভাই বোনেদের রাখি পরাচ্ছেন, নজরুল লিখছেন— 

মোরা এক বৃন্তে দু’টি কুসুম হিন্দু-মুসলমান।
মুসলিম তার নয়ন-মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ।।
এক সে আকাশ মায়ের কোলে যেন রবি শশী দোলে,
এক রক্ত বুকের তলে, এক সে নাড়ির টান।।

এটাই আমাদের চিন্তা চেতনা, আমাদের হৃদয়ে রবিঠাকুর, চেতনায় নজরুল। যেদিন বঙ্গভঙ্গ খারিজ হল সেদিন সারা বাংলা জুড়ে উৎসব, আনন্দ। আর আমাদের পয়সায়, আমাদের রাজ্যের রাজভবনে আমাদের ভূখণ্ড ভাগের মোচ্ছব চলছে, সমর্থনে রাজ্যের বিজেপি নেতারা। এই বিশ্বাসঘাতকতার শুরুয়াত কবে থেকে? ১৯৩২-এ ইংরেজ সরকার কমিউনাল অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা করল। এই আইনের ফলে দেশের যে অংশে মুসলমান জনসংখ্যা বেশি, সেখানে তাদের জন্য সংরক্ষণ আনা হল, তারই সঙ্গে দলিতদের জন্যও আসন সংরক্ষণ করা হল। এ বাংলায় হিন্দু ভদ্রলোকেদের চোখ কপালে, তাদের ক্ষমতা যায় যায়, হিন্দু মহাসভার নেতৃত্বে শ্যামাপ্রসাদ এই অ্যাওয়ার্ডের বিরোধিতায় নামলেন। বাংলার হিন্দু জমিদারেরা, অবাঙালি, বিশেষ করে মারোয়াড়ি ব্যবসায়ীরা ওনাকে সমর্থন দিলেন। সেই সময় থেকেই এই শ্যামাপ্রসাদের নেতৃত্বে বাংলা ভাগ করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল। ১৯৪৪ সাল থেকেই শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি প্রকাশ্যেই বাংলা বিভাজনের সপক্ষে বলা শুরু করে দিলেন। ২ মে ১৯৪৭, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে চিঠি লিখে বলছেন, দেশভাগ না হলেও বাংলাকে ভাগ করা হোক। তিনি ভেবেছিলেন ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হলে তিনিই হবেন মুখ্যমন্ত্রী। অন্যদিকে হুসেইন সুরাওয়ার্দি, সুভাষচন্দ্র বসুর দাদা শরৎচন্দ্র বসু, কিরণশঙ্কর রায় তখন বলছেন যদি দেশ বিভাজন এড়ানো না যায়, তাহলে এক ঐক্যবদ্ধ বৃহৎ বাংলা তৈরি হোক, বাংলার বিভাজন দু’ বাংলার অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেবে, পাটচাষ পড়ে থাকবে এক জায়গায়, পাটকল থাকবে অন্য দেশে তা হয় না। কিন্তু শ্যামাপ্রসাদ সেদিন দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতেই বাংলা বিভাজনের কথাই বলে চলেছিলেন। বাংলা ভাগ করার মূল নায়ক ছিলেন এই শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, যাঁর উত্তরসূরিরা আজ উল্লাসে বঙ্গভঙ্গ দিবস পালন করছেন। মজার কথা হল এই শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জিই আবার ১৯৫১ সালের মধ্যেই বুঝে ফেলেছিলেন কী মারাত্মক ঘটনা ঘটে গিয়েছে, তিনি তখন আবার দুই বাংলার সম্মিলনের কথা বলেন, কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। অন্যদিকে তাঁর হিন্দু গরিষ্ঠতার স্বপ্ন কেড়েছে কংগ্রেস এবং কমিউনিস্টরা। ওপার বাংলা থেকে আসা উদ্বাস্তুদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে কমিউনিস্ট পার্টি, এপার বাংলার ভদ্রলোক, মারোয়াড়ি ব্যবসায়ীরা ততদিনে কংগ্রেসের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। উদারতা দেখিয়ে জওহরলাল নেহরু শ্যামাপ্রসাদকে তাঁর মন্ত্রিসভায় নিলেও সেখানেও খুব বেশিদিন থাকতে পারেননি শ্যামাপ্রসাদ। ৪২-এ ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় তিনি ফজলুল হক মন্ত্রিসভার অর্থমন্ত্রী। একধারে কংগ্রেসের আন্দোলনের বিরোধিতা, অন্যধারে নেতাজির আজাদ হিন্দ বাহিনী নেমে আসতে পারে বাংলায়, তাকে আটকানোর ব্যবস্থা এবং ইংরেজ ফৌজদের খাবারের জন্য কৃষকের ধানের গোলা দখল করার মতো কাজ চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। সেই শ্যামাপ্রসাদের স্বপ্ন ছিল এক হিন্দুদের বাংলা। সেই স্বপ্নই দেখে চলেছেন শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদারেরা, আজ তাঁদেরই নির্দেশে বঙ্গভঙ্গ দিবস পালনের মোচ্ছব চলছে রাজভবনে।   

পুরনো খবরের আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০ ১১
১২ ১৩ ১৪ ১৫ ১৬ ১৭ ১৮
১৯২০ ২১ ২২ ২৩ ২৪ ২৫
২৬ ২৭ ২৮ ২৯ ৩০ ৩১  
আর্কাইভ

এই মুহূর্তে

মুখ্যমন্ত্রীর চটি ছিঁড়ে যাওয়াকে কটাক্ষ দিলীপের
শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪
উধাও বিজেপির পতাকা, ঝাড়গ্রামে রাজনৈতিক তরজা
শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪
ভরাডুবির মরসুম নিয়ে কী সাফাই দিলেন হার্দিক
শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪
বজরংবলীর আশীর্বাদ পাবেন ৫ রাশির জাতক
মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪
Stadium Bulletin | কোন ৫ কারণে প্লে-অফের দোরগোড়ায় KKR?
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
সোশ্যাল মিডিয়ায় নির্বাচনী প্রচারে সতর্কবার্তা নির্বাচন কমিশনের
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
কখন শচীনের দ্বারস্থ হন কোহলি?
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
চোটে জর্জরিত ম্যান ইউয়ের আজ কঠিন লড়াই
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
মমতার দিদিগিরি বরদাস্ত করব না, কলকাতায় ফিরেই হুঙ্কার রাজ্যপালের
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টি কলকাতায়
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
সুদীপের বিরুদ্ধে বিধিভঙ্গের অভিযোগ বিজেপির
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
মঙ্গলবার ৪ কেন্দ্রে ভোট, সব বুথে থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
সন্দেশখালি ভাইরাল ভিডিওতে কন্ঠস্বর গঙ্গাধর-জবারানির, দাবি শান্তি দলুইয়ের
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
জিতলে গম্ভীরের কৃতিত্ব হারলে দায় শ্রেয়সের? প্রশ্ন কিংবদন্তির  
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
রক্ষাকবচ সত্ত্বেও গ্রেফতার বিজেপি নেতা?
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.   Privacy Policy
Developed By KolkataTV Team