Placeholder canvas
কলকাতা মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪ |
K:T:V Clock

Placeholder canvas
Fourth Pillar | মোদি-শাহের নজরদারি, অঘোষিত জরুরি অবস্থা  
কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক Published By:  কৃশানু ঘোষ
  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৩, ১০:৩০:০০ পিএম
  • / ১৩৬ বার খবরটি পড়া হয়েছে
  • কৃশানু ঘোষ

বছর দেড়েকের কিছু বেশি সময় ধরে আমাদের দেশে ঘোষিতভাবেই প্রেস সেন্সরসিপ ছিল, খবর ছাপার আগেই সেই ডামি কাগজ পাঠানো হত রাজ্যে রাজ্যে দায়িত্বে থাকা তথ্য সংস্কৃতি মন্ত্রীর দফতরে। এ রাজ্যে সেই ডামি কাগজ যেত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের দফতরে, সিদ্ধার্থ মন্ত্রিসভার তরুণতম মন্ত্রীর কাছে। তাঁর মুখেই শোনা, প্রথম প্রথম ক’দিন খুব উৎসাহ ছিল সবার, তারপর কয়েকজন সাংবাদিক বাদে বাকিদের লেখা দেখাও হত না। আবার যে ঢাক ঢোল পিটিয়ে শুরু করা হয়েছিল, তা শেষের দিকে ছিলও না, তখন নাম কা ওয়াস্তে কিছু সেন্সরশিপ চলেছে। কিন্তু ১৯৭৭-এর শুরুর থেকেই বহু এমন খবর ছাপা হয়েছিল, যাতে সেই অর্থে ইন্দিরা সরকারের সমালোচনা ছিল। কাগজে কলমে সেন্সরশিপ শেষ হয় জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের পরে। কিন্তু ওই ইন্দিরার শাসনের সময় থেকেই সংবাদমাধ্যমকে নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসার এক প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়, বিজ্ঞাপন দিয়ে বা না দিয়ে, সংবাদমাধ্যমের মালিকদের প্রলোভন বা ভয় দেখিয়ে, সাংবাদিকদের বিশেষ সুবিধে দিয়ে, হুমকি, জেল, মামলা ইত্যাদি তো আছেই। কিন্তু ওই জরুরি অবস্থার সময়টুকু বাদ দিলে আমাদের দেশের সংবাদমাধ্যম মোটের ওপর স্বাধীন ছিল, বিশেষ করে জাতীয় সংবাদপত্র, হিন্দি বা ইংরিজিতে এবং বড় আঞ্চলিক সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ছিল, তলার ছোট কাগজকে ভয় দেখানো হত, বিজ্ঞাপনের প্রলোভনও ছিল। কিন্তু ২০১৪ থেকে এই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, সব স্তরের সে জাতীয়, আঞ্চলিক, প্রত্যেক সংবাদমাধ্যমে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ক্রমশঃ তলানিতে গিয়ে ঠেকছে। 

একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। পুণ্য প্রসূন বাজপেয়ী, কমিউনিস্ট নয়, মাওবাদী নয়, একজন সাংবাদিক, এবিপি নিউজে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর একটা প্রোগ্রাম ছিল মাস্টার স্ট্রোক, সেখানে বিভিন্ন সরকারের বিভিন্ন বয়ান, দাবির যথার্থতা, ফ্যাক্ট চেক করা হত। মানে কোনও মন্ত্রী দাবি করছেন মিড ডে মিলে প্রত্যেক শিশু পুষ্টিকর খাবার খাচ্ছে, পুণ্য প্রসূন লোকলস্কর পাঠিয়ে খোঁজার চেষ্টা করতেন সেই দাবি সঠিক কি না। তো ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রী ছত্তিশগড়ে গিয়েছিলেন, তখন সেখানে বিজেপির সরকার, মাস পাঁচেক পরে নির্বাচন হবে, অতএব মোদিজি তো যাবেনই। তো মোদিজি গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেন, এবং সে এক দারুণ কথাবার্তা, সাধারণ ফসলের জায়গায় আতাফলের চাষ করে কৃষকের আয় নাকি দ্বিগুণ তো ছেড়েই দিন পাঁচ ছ’ গুণ বেড়ে গেছে। এক কৃষক রমণী তাঁকে এই কথা বললেন, ব্যস, মোদিজির মুখে কান এঁটো করা হাসি। তিনি জানালেন, তবে? দ্বিগুণ করব বলেছিলাম এ তো পাঁচ গুণ হয়ে গেছে। তো এই খবরের জাঁচ পড়তাল করতে শুরু করলেন পুণ্য প্রসূন বাজপেয়ী। সত্যিই কি কৃষকের আয় পাঁচগুণ হয়ে গেছে? ৬ জুলাই তাঁর অনুষ্ঠান মাস্টারস্ট্রোকে দেখানো হল, আয় বাড়েনি, ওই মহিলা ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েই বললেন, শরপঞ্চ, মানে পঞ্চায়েত প্রধান আমাকে যা শিখিয়েছিল, আমি তাই বলেছি। বলা হয়েছিল, সাহেব (পড়ুন প্রধানমন্ত্রী) জিজ্ঞেস করলে বলবে, বলেছি। আমাদের আয় বাড়া তো দূরস্থান, কোথাও কোথাও কমেছে। যখন এই অনুষ্ঠান প্রচারিত হচ্ছে তখন ওই এবিপির নয়ডা অফিস থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে লোধি রোডে সূচনা ভবনের ৬ তলায় এক দফতরে বসে সেই অনুষ্ঠান মনিটর করা হচ্ছিল। সেই অনুষ্ঠান দেখে যাদের রিপোর্ট দেবার কথা তাঁরা মনোযোগ দিয়ে দেখছিলেন। এর পরে লাগাতার এবিপি চ্যানেলের অনুষ্ঠান প্রসারে বিঘ্ন ঘটতে থাকে, রাজ্যবর্ধন রাঠোর সেই সময়ের ইনফর্মেশন ব্রডকাস্টিং দফতরের মন্ত্রী নিজে টুইট করে জানান যে এবিপি নিউজ সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করছে। একমাস পরেই আগস্ট মাসের শুরুতে পুণ্য প্রসূন বাজপেয়ীকে পদত্যাগ করতে হয়, মিলিন্দ খন্ডেকর, এবিপি নেটওয়ার্কের ম্যানেজিং এডিটরকে পদত্যাগ করতে হয়। চ্যানেল থেকে বেরিয়ে আসার পরে পূণ্য প্রসূন বাজপেয়ী লিখেছিলেন, মোদিজি ২০০ জনের একটা টিম তৈরি করে সরকারি খরচে খবরের ওপর নজরদারি করছেন। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | অমিত শাহের হাতে সময় ছিল না, তাই মারা গেলেন ১৩ জন মানুষ    

পুণ্য প্রসূন সেদিনে খানিক সত্যি বলেছিলেন, কিন্তু সব তথ্য তাঁর কাছে ছিল না। এর থেকেও মারাত্মক ঘটনা ঘটে চলেছে প্রতিদিন। ২০০৮-এ ইলেকট্রনিক মিডিয়া মনিটরিং সেন্টার, ইএমএমসি তৈরি হয়েছিল মনমোহন সিং সরকারের সময়ে। কেন? কী উদ্দেশ্যে? ১) টেলিভিশনে কুরুচির অনুষ্ঠান। ২) দেশের ঐক্য সংপ্রভুতার বিপরীতধর্মী প্রচার। ৩) আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে এমন দেশের রূঢ় সমালোচনা। ৪) ধর্মীয় গোষ্ঠী বা মানুষের বিরুদ্ধে সম্প্রচার বা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা রুখতে। ৫) মহিলা বা শিশুদের বিরুদ্ধে কুরুচিকর প্রচার। ৬) দাঙ্গা, উত্তেজনা ছড়ানোর বিরুদ্ধে এক প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়, যা আই অ্যান্ড বি মিনিস্ট্রির আন্ডারে কাজ করবে। এক রিজনেবল রেস্ট্রিকশনের কথা বলা হয়েছিল। এবং তারপর দেশের ৯০০ মতো চ্যানেলের ওপর এক সাধারণ নজরদারি শুরু হয়েছিল সেই ২০০৮ থেকেই। মোদিজি এসেই সেই ব্যবস্থাটাকে নিজের জন্য, দলের জন্য, নিজের সরকারের জন্য কাজে লাগিয়েছেন মাত্র। দুটো শিফটে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টে, বিকেল সাড়ে তিনটে থেকে রাত ১১.৩০ পর্যন্ত এই নজরদারি চালানোর জন্য ২০০ জন ছেলেমেয়েকে চুক্তি ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়েছে। এদের মাইনে ২৮৬৩৫ টাকা ছিল, ২০১৭-র পরে এখন তা বেড়ে ৩৭৩৫০ টাকা হয়েছে। এর মধ্যেই পিএফ-এর টাকা ধরা আছে কিন্তু কোনও বোনাস বা স্বাস্থ্য বিমা এঁদের দেওয়া হয় না। ২০১৪-র আগে এই দফতরের কাজ ছিল দেশের মধ্যে চলা সবকটা চ্যানেলে নজর রাখা, কিন্তু এখন সেই নজরদারির চেহারাটা বদলেছে। ২০১৯ থেকে দেশের এন্টারটেনমেন্ট চ্যানেল মানে স্টার প্লাস, এইচবিও, ইত্যাদি চ্যানেল যেখানে মূলত সিরিয়াল বা সিনেমা দেখানো হয় সেখানে নজরদারি কমিয়ে প্রায় শূন্যে নামানো হয়েছে, এখন নজরদারি মূলত চলছে খবরের চ্যানেলে। ইংরিজি আর হিন্দি নিউজ চ্যানেলে নজর রাখার পাশাপাশি আঞ্চলিক চ্যানেলের খবরের দিকেও কড়া নজর রাখা হচ্ছে। আগে একজনকে ২টো নিউজ চ্যানেল দেখতে বলা হত, এখন একজন চারটে নিউজ চ্যানেলের ওপর নজর রাখছে। এই নজরদারির পরে রিপোর্ট পেয়েই মিডিয়া ওয়ান নামে চ্যানেলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছিল। কেবল ২০১৯-এর তথ্য আমরা পেয়েছি, ৮৭টা অভিযোগ এই দফতর থেকে করা হয়েছে। এই ২০১৯-এই ২৯টি চ্যানেলকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, ৩৯টা চ্যানেলকে সতর্ক করা হয়েছে, ৩৩ জনকে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে বলা হয়েছে, তারা তাদের চ্যানেলে ক্ষমাপ্রার্থনার কথা লিখিতভাবে জানিয়েছে, ৩টে চ্যানেলকে অফ এয়ার করা হয়েছে, মানে চ্যানেল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। 

মজার কথা হল আমাদের কাছে খবর, যে চ্যানেল সরাসরি হিন্দুরাষ্ট্রের শপথ নিয়ে অনুষ্ঠান করে সেই সুদর্শন চ্যানেলের বিরুদ্ধে রিপোর্ট থাকা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এই চ্যানেলই ইউপিএসসি জেহাদ বলে এক অনুষ্ঠান করেছিল, যেখানে দেখানো হয়েছিল, দেশের মুসলমান সংখ্যালঘু মানুষজন নাকি ইউপিএসসি পাশ করে উচ্চপদে সরকারি চাকরি দখল করার পরিকল্পনা নিচ্ছে। এরকম মিথ্যে, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানো অনুষ্ঠানের বিস্তৃত রিপোর্ট যাওয়ার পরেও কিন্তু মোদি-শাহ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। তথ্য ও সম্প্রচার দফতরের মন্ত্রী এখানকার কর্মচারীদের জানিয়েছেন যে আপনারাই হলেন সরকারের চোখ কান নাক, আপনাদের কড়া নজরদারি থাকলেই সরকার ঠিকভাবে চলবে। না, কোনও নৈতিক অবস্থান থেকে রিজনেবল রেস্ট্রিকশন নয়, আসলে মোদি-শাহ জমানায় এই ইলেকট্রনিক মিডিয়া মনিটরিং সেন্টার আরএসএস–বিজেপির নজরদারির কেন্দ্র হয়ে উঠেছে, বছরে প্রায় ২০ কোটি টাকা খরচ করে, সরকারি দফতরে বসে সংবাদমাধ্যমের ওপর নজর রাখা হচ্ছে। ২০১৪-র আগে ১৫০ জন কর্মচারীর মধ্যে ১২৫ জন নজর রাখতেন সিনেমা, সিরিয়াল বা এন্টারটেনমেন্ট চ্যানেলের ওপরে, ২৫ জন খবরের চ্যানেল দেখত। এখন বিজেপি জানে আরএসএস বুঝেছে দেশের মানুষকে যা খুশি দেখতে দাও সত্যি খবর দেখতে দিও না। কাজেই যারা সে ধরনের খবর, সমালোচনা করে খবর বা সত্যিটাকে খুঁজে এনে খবর দেখানোর চেষ্টা করবে তাদের আটকাতে হবে, কাজেই পুণ্য প্রসূন বাজপেয়ীকে রিজাইন করতে হবে, রবীশ কুমারকে সরে যেতে হবে, মিডিয়া ওয়ান কে দীর্ঘ আইনি লড়াই চালানোর পর পেতে হবে তার অধিকার, কলকাতা টিভির কাছে লাইসেন্স বাতিলের চিঠি আসবে ইত্যাদি ইত্যাদি। সব মিলিয়ে মোদি-শাহ এক মগজ ধোলাই যন্ত্র চাইছেন, গোয়েবলস হলেন এনাদের গুরুদেব, যিনি বলেছিলেন, মিথ্যে বলো, আরও বড় মিথ্যে বলো, এতবার বলো যে সেই মিথ্যেই মানুষের কাছে সত্যি হয়ে দাঁড়ায়। আরএসএস–বিজেপি সেই মিথ্যের তাজমহল গড়ার কাজ এগিয়ে নিয়ে চলেছেন।

পুরনো খবরের আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০ ১১
১২ ১৩ ১৪ ১৫ ১৬ ১৭ ১৮
১৯ ২০ ২১ ২২ ২৩ ২৪ ২৫
২৬ ২৭২৮ ২৯ ৩০ ৩১  
আর্কাইভ

এই মুহূর্তে

মুখ্যমন্ত্রীর চটি ছিঁড়ে যাওয়াকে কটাক্ষ দিলীপের
শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪
উধাও বিজেপির পতাকা, ঝাড়গ্রামে রাজনৈতিক তরজা
শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪
ভরাডুবির মরসুম নিয়ে কী সাফাই দিলেন হার্দিক
শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪
বজরংবলীর আশীর্বাদ পাবেন ৫ রাশির জাতক
মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪
Stadium Bulletin | কোন ৫ কারণে প্লে-অফের দোরগোড়ায় KKR?
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
সোশ্যাল মিডিয়ায় নির্বাচনী প্রচারে সতর্কবার্তা নির্বাচন কমিশনের
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
কখন শচীনের দ্বারস্থ হন কোহলি?
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
চোটে জর্জরিত ম্যান ইউয়ের আজ কঠিন লড়াই
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
মমতার দিদিগিরি বরদাস্ত করব না, কলকাতায় ফিরেই হুঙ্কার রাজ্যপালের
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টি কলকাতায়
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
সুদীপের বিরুদ্ধে বিধিভঙ্গের অভিযোগ বিজেপির
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
মঙ্গলবার ৪ কেন্দ্রে ভোট, সব বুথে থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
সন্দেশখালি ভাইরাল ভিডিওতে কন্ঠস্বর গঙ্গাধর-জবারানির, দাবি শান্তি দলুইয়ের
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
জিতলে গম্ভীরের কৃতিত্ব হারলে দায় শ্রেয়সের? প্রশ্ন কিংবদন্তির  
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
রক্ষাকবচ সত্ত্বেও গ্রেফতার বিজেপি নেতা?
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.   Privacy Policy
Developed By KolkataTV Team