ফরাক্কা: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) যখন মেয়েদের উচ্চশিক্ষা, স্বয়ম্ভর করে তোলার দিকে জোর দিচ্ছেন, তখন মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) ফরাক্কায় (Farakka PS) ঘটল উলটপুরান। বাড়ির বউ (Housewife) যাতে পরীক্ষায় (HS Exam 2023) বসতে না পারে, তার জন্য শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারের শিকার হল এক বধূ। এমনকী বুধবার সারারাত তাকে একটি ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সকালে কোনওরকমে পালিয়ে উপায়ন্তর না দেখে ওই বধূ পুলিশের দ্বারস্থ হয়। এবং পুলিশেরই সহযোগিতায় শেষমেশ পরীক্ষায় বসল ওই বধূ।
ঘরের বউ লেখাপড়া শিখবে, এটা মেনে নিতে পারেনি ফরাক্কার তিলডাঙার বাসিন্দা শেখ বান্টি ও তার পরিবার। পুলিশ ও গ্রামবাসীদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, বিয়ের সময়েই মেয়েটি লেখাপড়া করতে চেয়েছিল। তখন শ্বশুরবাড়ির পক্ষে রাজিও ছিল। কিন্তু, পরীক্ষা আসতেই বেঁকে বসে বধূর শ্বশুরবাড়ি। দিনকে দিন পড়াশোনা নিয়ে শুরু হয় মানসিক চাপ। তাতেও কাজ না হওয়ায় সরাসরি পরীক্ষা দিতে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সারারাত তাকে একটি ঘরে বন্দি করে রাখা হয়। কিন্তু, এতকিছু মানসিক নির্যাতনের পরেও টলানো যায়নি গৃহবধূর মনের জোরকে। পরীক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে তার অদম্য জেদ তাকে একচুলও নড়াতে পারেনি।
আরও পড়ুন: Visa Papers Found Fake | ৭০০ জন ভারতীয় পড়ুয়াকে ফেরত পাঠালো কানাডা
পুলিশ জানিয়েছে, সে যাতে পরীক্ষা না দিতে পারে, তার জন্য সবরকমের চেষ্টা করেছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, তিলডাঙা গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে বছরখানেক আগে বিয়ে হয় ফরাক্কা থানার বিন্দুগ্রামে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর অভিযোগ, বৃহস্পতিবার সকালে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে বাড়িতে তালা মেরে বন্দি করে রাখতে চেয়েছিল। সেই সময় সে কোনওভাবে বাড়ি থেকে পালিয়ে ফরাক্কা থানার দ্বারস্থ হয়। ফরাক্কা থানার আইসি দেবব্রত চক্রবর্তী ছাত্রীর মুখে তার কাছ থেকে জানতে পারেন পরীক্ষার্থীর শ্বশুরবাড়ি থেকে তাকে পরীক্ষা দিতে দেবে না। শুধু তাই নয়, তার অ্যাডমিট কার্ড সহ পরীক্ষার সমস্ত কাগজপত্র এবং স্কুলের ইউনিফর্মও শ্বশুরবাড়ির লোকজন ফেলে দিয়েছে।
ছাত্রীর মুখে সমস্ত বিবরণ শুনে গ্রামে ছুটে যায় পুলিশ। ফরাক্কা থানার আইসি নিজে গিয়ে দেখেন তার শ্বশুরবাড়িতে তালা মারা রয়েছে। সকলে পালিয়ে গিয়েছে। শ্বশুরবাড়ির পাশের ঝোপজঙ্গল থেকে মেয়েটির অ্যাডমিট কার্ড ও ব্যাগ উদ্ধার করেন। কিন্তু স্কুলের ইউনিফর্মের হদিশ মেলেনি। ওই অবস্থাতেই তাকে নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্র নিউ ফরাক্কা হাইস্কুলে নিয়ে আসে পুলিশ। পরীক্ষা কেন্দ্রের স্কুল ইনচার্জকে ঘরের পোশাকে পরীক্ষার হলে প্রবেশের কথা বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ সহৃদয়তার সঙ্গে সেই অনুমতি দিলে ওই গৃহবধূকে পরীক্ষা সেন্টারে বসিয়ে দেয় পুলিশ। এরকম একটি উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন নিউ ফরাক্কা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলাম।