রাহুল শরদ দ্রাবিড়- বর্তমান ভারতীয় দলের হেড কোচ এবং একসময় ভারতীয় দলের ব্যাটিং মেরুদণ্ড বলা হত। বলা বাহুল্য, ভারতের সর্বকালের সেরা ব্যাটারদের মধ্যে অন্যতম। তবে অধিনায়ক হিসেবে বিরাট সফল ছিলেন বলা যাবে না। তাঁর অধিনায়কত্বে ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের ভরাডুবি অনেকের স্মৃতিতে এখনও টাটকা। শুধু অধিনায়ক হিসেবে নন, কোচ হিসেবেও তাঁর ট্যাকটিক্স-দল গঠন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
ওভালে প্রথমদিন খেলা শুরুর আগে আকাশ মেঘলা ছিল। পিচে সবুজ আভাও ছিল। তবে মেঘ কাটিয়ে সূর্যের দেখা মিলবে সেটারও পূর্বাভাস ছিল। খেলা যত গড়াবে, স্পিনারদের সহায়তা করবে এই পিচ- এমন ভবিষ্যদ্বাণীও করে এসছিলেন রিকি পন্টিং থেকে শচীন তেন্ডুলকর। সেটা কি তিনি শোনেননি। নাকি প্রিন্ট-ইলেকট্রনিক-ডিজিটাল মিডিয়া থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন? আচ্ছা বেশ! মানলাম তিনি সবকিছু থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। তাই বলে নিজের ক্রিকেটীয় জ্ঞান তো বিসর্জন দেননি। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে যাকে বসিয়ে রাখলেন, সেই রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বাঁ-হাতি ব্যাটারদের বিরুদ্ধে সাফল্য ঈর্ষণীয়। বর্তমান অস্ট্রেলিয়া দলে যেখানে পাঁচজন ব্যাটার বাঁ-হাতি, সেক্ষেত্রে অশ্বিনকে বসিয়ে রাখার সাহস তাঁর অতিবড় সমালোচকও করবেন বলে মনে হয় না। প্রতিবেশী রাজ্যের ক্রিকেটারের প্রতি এহেন অবিচারের সমালোচনা করছেন অনেকেই। কিন্তু দ্রাবিড়ীয় দেওয়ালে চিড় ধরবে বলে মনে হচ্ছে না। তিনি আছেন আপন খেয়ালে। দ্রাবিড়ীয় দর্শন থেকে সরছেন না এক ইঞ্চিও।
বোলিং কম্বিনেশন নির্বাচন হোক কিংবা উইকেটকিপার নির্বাচন- যে কোনও ক্ষেত্রেই নিজের জেদ থেকে সরছেন না। জেদ ভেতরে ভেতরে পুষে রেখে অনেক বড় বড় ইনিংস খেলেছেন নিজের ক্রিকেটীয় কেরিয়ারের সেরা সময়ে। কিন্তু এই জেদই এখন বুমেরাং হয়ে দাঁড়াচ্ছে ভারতীয় দলের জন্য। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে কেএল রাহুল চোট পাওয়ার পরও, ঈশান কিষাণকে ওভালে নিয়ে যাওয়া, যেখানে যোগ্য ঋদ্ধিমান সাহাকে সাউথ সিটির ফ্ল্যাটে বসে খেলা দেখতে হচ্ছে। উইকেটের সামনে এবং পিছনে ক্ষিপ্রতা দেখানো সত্ত্বেও এরকম অবিচার মেনে নেওয়া সত্যিই কষ্টকর। সবসময় পারফরম্যান্স বোধহয় সবকিছুর সমাধান নয়। কেএস ভরত ডেভিড ওয়ার্নারের একটি দারুন ক্যাচ নিলেন ঠিকই, তবে তারপর উইকেটের পিছন দিয়ে অনেক বাই-রানও দিয়েছেন। সূত্রের খবর, রোহিত শর্মা চূড়ান্ত এগারোতে চেয়েছিলেন ঈশান কিষাণকে। কিন্তু দ্রাবিড়ীয় ডিফেন্সের কাছে কার্যত হার মানতে হয় ‘দ্য হিটম্যান’কে।
দ্রাবিড়ীয় গোঁড়ামি না থাকলে হয়ত এতগুলি বাই-রান অস্ট্রেলিয়ার স্কোরকার্ডে যোগ নাও হতে পারত। সময় বদলেছে-ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসন থেকে ড্রেসিংরমের ছবিও আমূল বদলে গিয়েছে। মনমোহন সিং থেকে মোদি যুগে এসেও দ্রাবিড়ীয় গোঁড়ামির ধারাবাহিকতা যে এখনও অটুট! অশ্বিন যেমন প্রতিক্রীয়াশীল ক্রিকেটার, তাতে তাঁকে শান্ত করবেন কীভাবে? ওভালের আবহাওয়া যতই ঠান্ডা থাকুক না কেন, দক্ষিণ ভারতীয় স্পিনারের ভিতরে যে তীব্র দাবদাহ চলছে!