কলকাতা: আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাজ্যকে স্কুল খোলা নিয়ে তাদের অবস্থান জানতে হবে নির্দেশ হাইকোর্টের। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে স্কুল খোলার দাবিতে একাধিক মামলার শুনানি চলে। আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবীদের দাবি দ্রুত স্কুল খুলতে হবে। অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) গোপাল মুখোপাধ্যায় জানান, স্কুল খুলতে গেলে সংশ্লিষ্ট সকলের কথা ভাবতে হবে। বিপর্যয় মোকাবিলা, স্বরাষ্ট্র, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে রাজ্য সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। সেই সিদ্ধান্ত আদালতকে জানানো হবে।
এদিন স্কুল খোলা নিয়ে একাধিক মামলার শুনানি হয়। শুনানির শুরুতেই আবেদনকারীদের আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় ছাত্রছাত্রীরা মানসিক বিপর্যয়ের শিকার হয়ে পড়েছে। সমস্ত রকমের করোনা বিধি মেনে অবিলম্বে স্কুল চালু করা দরকার। এভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে কার্যত শিক্ষার অধিকার আইনকে লঙ্ঘন করা হচ্ছে।
অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, সরকার স্কুল খুলতেই চায়। তবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে গেলে সরকারকে সংশ্লিষ্ট সকলের কথা ভাবতে হবে। করোনার নতুন প্রজাতি ওমিক্রন ও ডেল্টা দিয়ে ইনস্টিটিউড অফ চাইল্ড হেলথ বার বার সতর্ক করছে। ১৫ বছরের নীচের শিশু ও কিশোরদের কথা মাথায় রাখতে হবে। কারন এখনও তাদের টিকাকরণ শুরু হয়নি। শুধু বিদেশের রেফারেন্স দিলে কাজের কাজ হবে না। এজি আরও বলেন, ‘শিক্ষা দফতর পাড়ায় শিক্ষালয় প্রকল্প চালু করছে। এটাই স্কুল খোলার প্রথম পদক্ষেপ।’ তিনি স্কুল খোলার ব্যাপারে সরকারের পদক্ষেপ জানানোর জন্য এক সপ্তাহ সময় চান।
আবেদনকারীদের আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য আদালতে জানান, আর বিলম্ব না করে অবিলম্বে স্কুল খোলা উচিত। ছাত্রছাত্রীদের মানসিক অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ছে। এজি বলেন, স্কুল খুলতে গেলে শিক্ষক,অশিক্ষক, ছাত্র, অভিভাবক সকলের কথাই ভাবতে হবে। শুনানি শেষে আদালত জানায়, ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে স্কুল খোলা নিয়ে রাজ্যকে অবস্থান জানাতে হবে।
আরও পড়ুন- CBI: অভিজিৎ সরকার খুনে অভিযুক্তদের হদিশ দিলে মাথাপিছু ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার: সিবিআই
অবিলম্বে স্কুল খোলার দাবিতে রাজ্য জুড়েই জোরদার আন্দোলন শুরু হয়েছে। সরকার বিরোধী সব রাজনৈতিক দল দ্রুত স্কুল খোলার দাবিতে সরব। ছাত্র ও শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠন ইতিমধ্যে ময়দানে নেমেছে। বিধাননগরে বিকাশ ভবনের সামনে প্রায় রোজই কোনও না কোনও সংগঠন বিক্ষোভ আন্দোলন করছে। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কখনও কখনও পুলিসের ধস্তাধস্তিও হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকাশ ভবনে স্কুল খোলার দাবি নিয়ে ডেপুটেশনে যেতে পুলিস বাধা দেয় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। তাঁর সঙ্গে পুলিসের বচসাও হয়। পরে দলবল নিয়ে রাস্তাতেই বসে বিক্ষোভ দেখান শুভেন্দু, তিনি হুমকি দেন, এরপর থেকে প্রতিদিন একজন করে বিজেপি বিধায়ক বিকাশ ভবনে দরবার করবেন স্কুল খোলার দাবিতে।
একই ইস্যুতে প্রায় প্রতিদিনই কোনও না কোনও ছাত্র সংগঠন বিক্ষোভ দেখাচ্ছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনেও। স্কুল খোলার দাবিতে অন্তত ৪টি জনস্বার্থ মামলা হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। মামলাকারীদের অভিযোগ, কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে সুবিধা করে দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার ইচ্ছাকৃত ভাবে স্কুল খুলছে না। এতে শিক্ষার অধিকার আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এর ফলে পড়ুয়াদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হচ্ছে।