নয়াদিল্লি: প্রত্যাশামতোই ঝড়ের পূর্বাভাস নিয়ে শুরু হল সংসদের বাদল অধিবেশন। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় অধিবেশন শুরুর পরই প্রয়াত সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লোকসভা দুপুর ২টো পর্যন্ত এবং রাজ্যসভা দুপুর ১২টা পর্যন্ত মুলতুবি হয়ে যায়। রাজ্যসভা ফের বসলেও মণিপুর নিয়ে সরকারপক্ষ স্বল্প আলোচনার অনুমতি দিলে বিরোধীরা রে রে করে ওঠে। তারপরই সংসদের উচ্চকক্ষ দুপুর ২টো পর্যন্ত মুলতুবি ঘোষণা করেন চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়। তৃণমূল কংগ্রেস এমপি ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, মণিপুর নিয়ে ২৬৭ বিধিতে আলোচনা করতে হবে। এই বিধিতে চেয়ারম্যানের অনুমতিক্রমে উচ্চকক্ষের কোনও সদস্য পূর্বনির্ধারিত কার্যসূচিকে বাতিল করার বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী হন। মণিপুর ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জবাব দাবি করেন ডেরেক। এসবের কারণেই দুপুর ২টো পর্যন্ত রাজ্যসভা মুলতুবি করে দেন চেয়ারম্যান ধনখড়।
উল্লেখ্য, মণিপুর নিয়ে নতুন করে ঘনিয়ে ওঠা বিতর্ককে কাঁধে নিয়েই সংসদের দুই কক্ষে বিরোধীদের বজ্রপাতের মুখোমুখি হতে চলেছে সরকারপক্ষ। বুধবার একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে নৃশংস এক দৃশ্য। যেখানে গণধর্ষিতা দুই মহিলাকে নগ্ন করে হাঁটাচ্ছে একদল যুবক। সেই ভিডিও প্রকাশ্যে আসতেই শিউরে উঠেছে গোটা দেশ। এর বিরুদ্ধে টুইটার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকার ব্যবস্থা নিতে চলেছে বলে সূত্রে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: Mamata | Abhishek | HC | মমতা-অভিষেকের বিরুদ্ধে FIR হোক, জনস্বার্থ মামলা হাইকোর্টে
উল্লেখ্য, গত ৩ মে মণিপুরে হিংসা ছড়িয়ে পড়ার পরদিন এই ঘটনা ঘটে। কিন্তু গতকাল, বুধবার ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। বিরোধী দলগুলি মারমুখী হয়ে উঠেছে সরকার ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে। এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার সংসদের অধিবেশন বসার আগে বিরোধী দলগুলির জোট আইএনডিআইএ একটি আলোচনায় বসে। রাজ্যসভার কংগ্রেস দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গের ডাকা ওই বৈঠকে কংগ্রেস ছাড়াও ১১টি দলের রাজ্যসভার দলনেতারা হাজির ছিলেন।
মণিপুর নিয়ে উদ্বিগ্ন সুপ্রিম কোর্টও। গণতন্ত্রে এই ধরনের ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। সর্বোচ্চ আদালত কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারকে দুষ্কৃতীদের অবিলম্বে গ্রেফতারির নির্দেশ দিয়েছে। দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা জানাতে বলেছে আদালত। দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, এই মামলাটির শুনানি আগামী শুক্রবার হবে। সেখানে সরকারকে জানাতে হবে তার কী ব্যবস্থা নিল।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও বৃহস্পতিবার হিংসা ছড়ানোর পর প্রথমবারের জন্য মণিপুর শব্দটি মুখে এনে এই ঘটনার নিন্দা করেন। তিনি বলেন, মণিপুরের ঘটনা গোটা দেশের মাথা লজ্জায় হেঁট করে দিয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংও এদিন জানিয়ে দেন, মণিপুর নিয়ে সংসদে আলোচনা হবে। সরকারে তরফেও জবাব দেওয়া হবে। কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গে এদিনও তোপ দাগেন মোদিকে। তিনি বলেন, আজ আমরা মণিপুর ইস্যুর উত্থাপন করেছি। আমি নিজেও নোটিস দিয়েছি। আমরা দেখতে চাই রাজ্যসভার চেয়ারম্যান আমাদের আলোচনার সুযোগ দেন কিনা। প্রধানমন্ত্রী তো প্রথম থেকেই নীরব। খাড়্গে বলেন, আপনার ৩৮টি দলকে নিয়ে বৈঠক করার সময় আছে। কিন্তু, মণিপুরে যাওয়ার সময় নেই।