কলকাতা: আদালতে (High Court) মুখ পুড়ল জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (National Human Rights Commission)। ভোট পরবর্তী হিংসার (post poll violence) সরেজমিন তদন্তে নেমে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন যৌন হেনস্তার বিস্তর অভিযোগ এনেছিল। কলকাতা হাইকোর্ট হিংসা মামলায় খুন, ধর্ষণ বা যৌন হেনস্তার ক্ষেত্রে সিবিআইকে (CBI report) তদন্ত করতে বলেছিল। সোমবার ভোট পরবর্তী হিংসা মামলার রিপোর্ট পেশ করা হল কলকাতা হাইকোর্টে। সিবিআইয়ের আইনজীবী হিসেবে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ওয়াই জে দস্তুর রিপোর্টে জানালেন, একুশটি যৌন হেনস্তার অভিযোগ কার্যত ভুয়ো। সিবিআই তদন্তে কোনও প্রমাণ মেলেনি। ওই অভিযোগগুলি সিবিআই বিশেষ তদন্তকারী দলের (SIT) হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে।
বিধানসভা ভোটের পর রাজ্যে শাসকদলের মদতে ব্যাপক হিংসার ঘটনার ঘটে বলে বিজেপির অভিযোগ। তা নিয়ে অভিযোগ করা হয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনেও। বিজেপি মামলা করে হাইকোর্টে। বিষয়টি গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। আদালতের নির্দেশে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ওইসব ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত করে। সেই রিপোর্ট জমা পড়ার পর আদালত খুন, ধর্ষণ এবং শ্লীলতাহানি সংক্রান্ত অভিযোগগুলির তদন্তের দায়িত্ব দেয় সিবিআইকে। এছাড়া বাড়িঘর ভাঙচুর, মারধর ইত্যাদি অভিযোগে তদন্ত করতে বলা হয় স্পেশাল ইনভেস্টিগেটিং টিমকে (SIT)।
ওই ঘটনা নিয়ে ভোটের পরই রাজ্য রাজনীতিতে ব্যাপক তোলপাড় চলে। শাসক দলের দাবি, রাজ্যে ভোট পরবর্তী কোনও হিংসার ঘটনা ঘটেনি। হিংসার যে কটি ঘটনা ঘটেছে, সেগুলির সময় রাজ্যে আইন শৃঙ্খলার দায়িত্ব ছিল নির্বাচন কমিশনের হাতে। ফলপ্রকাশের পর তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসেই তৃণমূল সমস্ত হিংসা কড়া হাতে দমন করে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ ছিল, মানবাধিকার কমিশনের তদন্তকারী দলে বিজেপির লোকজন ছিলেন। কমিশনের রিপোর্টকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, মানবাধিকার কমিশনকে রাজনীতি করার জন্যই বাংলায় পাঠানো হয়েছিল। অন্যান্য ‘বিজেপিশাসিত রাজ্যে তো মানবাধিকার কমিশনকে পাঠানো হয় না। ত্রিপুরায় আমাদের নেতাকর্মীরা বিজেপির হাতে মার খেলে মানবাধিকার কমিশন কোথায় থাকে? উত্তরপ্রদেশে কেন কমিশনকে পাঠানো হয় না?’
আরও পড়ুন: Covid 19: কলকাতার পুর কমিশনার এবং ফিরহাদের ওএসডি করোনা আক্রান্ত
সোমবার সিট এবং সিবিআই রিপোর্ট পেশ করে কলকাতা হাইকোর্টে। সেই রিপোর্ট থেকেই জানা যাচ্ছে, ২১টি যৌন হেনস্তার অভিযোগ সিবিআই ফিরিয়ে দিয়েছে। সেখানে ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি বা হেনস্তার কোনও প্রমাণ পায়নি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ভোট পরবর্তী হিংসা পর্বে যৌন হেনস্তা সংক্রান্ত এফআইআর হয় ৩৯টি। চারটি ক্ষেত্রে সিবিআই অভিযোগ খতিয়ে দেখছে। এছাড়া ৫২টি খুন বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্ত করে সিবিআই। পূর্ণাঙ্গ চার্জশিট দেওয়া হয়েছে ১০টি ক্ষেত্রে। ৩৮টি ঘটনার সিবিআই তদন্ত চলছে। দুটি মামলা সিটকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরও দুটি অভিযোগ খতিয়ে দেখছে সিবিআই।
সিটের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৬৮৯টি মামলার মধ্যে ৫৭৩টির ক্ষেত্রে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। ৬৩টি মামলায় ক্লোজার রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। এদিন আদালত নির্দেশ দেয়, তালিকা ধরে ধরে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা সিবিআই ও সিটকে আদালতের কাছে জানাতে হবে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে। মামলার আবেদনকারীদের কাছেও রিপোর্ট দিতে হবে বলেও আদালতের নির্দেশ। একইসঙ্গে এদিন ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরানো নিয়ে রাজ্যের হলফনামা তলব করল হাইকোর্ট। ২৪ জানুয়ারির মধ্যে রাজ্যকে তাদের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানাতে হবে।