স্বপন সোম
কলকাতা: চলে গেলেন রবীন্দ্রসংগীত জগতের এক বিশ্রুত শিল্পী সুমিত্রা সেন (Sumitra Sen)। বয়স হয়েছিল ৮৯। জন্ম উত্তর কলকাতায়, ১৯৩৩-এ। বাবা অতুলচন্দ্র দাশগুপ্ত (Atul Chandra Dasgupta) ছিলেন দর্শনের অধ্যাপক। মা অর্গান বাজিয়ে গান করতেন। ছোটবেলায় মার কাছেই গানে হাতেখড়ি। আবার ছবি আঁকা, বাটিকের কাজ, সেসবও শিখেছিলেন ফণীভূষণ দেবের কাছে। বাড়িতে সংগীতের আবহেই বড়ো হয়ে ওঠা। গানের প্রথাগত পাঠ নিয়েছিলেন ‘গীতবিতান’ ও ‘বৈতানিক’-এ। বৈতানিক- এ সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সান্নিধ্য পেয়েছিলেন। তা ছাড়া রবীন্দ্রসংগীত সহ বিভিন্ন ধরনের গান শিখেছিলেন অনাদি কুমার দস্তিদার, সুরেন চক্রবর্তী, রাধারাণী দেবী, সিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যায়, ননীগোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের কাছে। রবীন্দ্রনাথের গানের এই উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক কিন্তু গোড়ার দিকে রেকর্ডে গেয়েছিলেন লোকগীতি, আধুনিক। যেমন, ১৯৫৭ সালে লোকগান ‘তোরা বলিস না আর শ্যামের কথা’, ‘বাঁশি কি গুণ জানে’ বা আধুনিক, শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের (Shailen Mukhopadhyay) সুরে ‘যদিও ক্লান্ত নয়নে ঘুম’ (কথা : শ্যামল ঘোষ) ও ‘সাদা মেঘ ভেসে যায়’ (কথা : সরল গুহ)।
পরে ছয়ের দশকে খ্যাতি পেলেন রবীন্দ্রনাথের গানে। বিভিন্ন বেসিক রেকর্ডের সঙ্গে কয়েকটি ছবিতেও শিল্পী রবীন্দ্রসংগীত শুনিয়েছেন। তাঁর প্রধান সম্পদ ছিল মধু-মাখা কন্ঠ, সাবলীল গায়ন। এই ভাবেই স্মৃতিধার্য হয়ে আছে তাঁর কত না গান : ‘সখি ভাবনা কাহারে বলে’, ‘তুমি একলা ঘরে বসে বসে’, ‘ভরা থাক স্মৃতিসুধায়’, ‘মেঘছায়ে সজল বায়ে’ ইত্যাদি। লং-প্লে রেকর্ডে ধৃত একাধিক গীতিনাট্য, গীতিআলেখ্যতে কন্ঠ দিয়েছেন। তা ছাড়া বিভিন্ন চলচ্চিত্রে মনে রাখার মতো রবীন্দ্রসংগীত শুনিয়েছেন: ঋত্বিক ঘটকের ‘কোমল গান্ধার’ -এ ‘আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে’, ‘শুন বরনারী’-তে ‘ঘরেতে ভ্রমর এলো’, ‘নবরাগ’-এ ‘তুই ফেলে এসেছিস কারে’ প্রভৃতি।
দুই কন্যা, ইন্দ্রাণী সেন(Indrani Sen) ও শ্রাবণী সেন(Srabani Sen) সংগীত জগতে খ্যাতি পেয়েছেন, তাঁদের প্রাথমিক শিক্ষাও মা-র কাছে।
আরও পড়ুন: Sumitra Sen : ‘যখন পড়বে না মোর…’
কালের নিয়মে চলে যেতেই হয় অনিবার্য। কিন্তু কিছু মানুষ রয়ে যান মানুষের হৃদয়ে তাঁদের সুকৃতির সৌজন্যে। সুমিত্রা সেন এমনই এক শিল্পী। তাঁর মাধুর্যময় কন্ঠের গানেই তিনি বেঁচে থাকবেন।