নয়াদিল্লি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জঙ্গি-খোঁচার তীক্ষ্ণ জবাব দিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। কেন্দ্রের বিজেপি-বিরোধী জোটকে মোদির বিদ্রুপের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাহুল টুইটে বলেন, আমরা মণিপুরকে শান্ত করার কাজ চালিয়ে যাব। উত্তর-পূর্বের রাজ্যে ইন্ডিয়া নামের ধারণাই বদলে দেব। আপনি আপনাদের যে নামেই ডাকুন, মোদিমশাই, আমরা ইন্ডিয়া (আইএনডিআইএ)। মণিপুরের শিশু ও মহিলাদের চোখের জল মোছাব। সব মানুষের জন্য আমরা প্রেম ও শান্তি ফিরিয়ে আনব। মণিপুরে আমরা ইন্ডিয়া নামের নতুন অর্থ গড়ে তুলব।
বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’-কে নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠী ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের তুলনা করলেন প্রধানমন্ত্রী (Narendra Modi)। মঙ্গলবার বিজেপির সমসদীয় দলের বৈঠকে মোদি একই সঙ্গে ‘ইন্ডিয়া’র (INDIA ) বিরোধীতা করতে গিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রসঙ্গও টেনে আনেন। তিনি বলেন, ইন্ডিয়া নাম নিলেই সব কিছু হয় না। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতেও ‘ইন্ডিয়া’ শব্দটা ছিল। ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের সঙ্গেও ‘ইন্ডিয়া’র নাম রয়েছে। ওই বৈটকে মোদি অভিযোগ করেন, বিরোধীরা সম্পূর্ণ দিশাহীন। আসলে ওদের কাজই হল শুধু প্রতিবাদ করা। তাঁর দাবি, বিজেপি আবার ক্ষমতায় আসবে।
Call us whatever you want, Mr. Modi.
We are INDIA.
We will help heal Manipur and wipe the tears of every woman and child. We will bring back love and peace for all her people.
We will rebuild the idea of India in Manipur.
— Rahul Gandhi (@RahulGandhi) July 25, 2023
বাদল অধিবেশনের শুরু থেকেই মণিপুর ইস্যুতে উত্তাল সংসদের দুই কক্ষ। বিরোধীদের বিক্ষোভে বারবার মুলতবি হয়ে যাচ্ছে সংসদরে দুই কক্ষ। ‘ইন্ডিয়া’র নেতৃত্বে বিরোধীদের সাংসদদের একাটই দাবি, মণিপুর নিয়ে সংসদে বিবৃতি দিতে হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেই।
দীর্ঘ প্রায় তিন মাস ধরে জাতিদাঙ্গার কারণে জ্বলছে মণিপুর। রাজ্যে কুকি দুই মহিলাকে গণধর্ষণের পর বিবস্ত্র করে জনসমক্ষে হাঁটানোর ভিডিও ভাইরাল হতেই তা নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি মে মাসের হলেও ভিটিওটি প্রকাশে আসে দিন কয়েক আগে। তারপর থেকেই ওই ঘটনা নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিবৃতি দাবিতে সংসদের ভিতরে বাইরে বিরোধীদের আন্দোলন চলছে। বাদল অধিবেশনের সবচনার দিন সংসদের বাইরে প্রধানমন্ত্রী ওই নারকীয় ঘটনার নিন্দা করেন। কিন্তু প্রায় তিনমাস ধরে চলা মণিপুরে হিংসা নিয়ে তিনি একটা কথাও বলেননি।
এখানেই বিরোধীদের আপত্তি। তাদের দাবি, সংসদেই প্রধানমন্ত্রীকে মণিপুর নিয়ে বিবৃতি দিতে হবে। সরকারপক্ষ বলছে, বিষয়টি যেহেতু আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা, তাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিবৃতি দেবেন। অমিত শাহ নিজেও সেই কথাও বলেছেন। তবু বিরোধীরা তাদের দাবিতে অনড়। এই আবহে মঙ্গলবার সকালে রাজধানীতে বিজেপির সংসদীয় দলের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই বৈঠকেই বিরোধী জোটকে কটাক্ষ করেন মোদি। তিনি বলেন, ২০২৪ -এ আবার আমরাই ক্ষমতায় আসব। বিরোধীদের জোট INDIA নিয়ে বলেন, নামে এক, আর কাজে আরেক । ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তৈরি করেছেন বিদেশি। ব্রিটিশরা এদেশে এসে নিজেদের নাম দিয়েছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। বিরোধীরাও নিজেদের ইন্ডিয়া নাম দিয়েছে। ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন, পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়ার মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির নামেও ইন্ডিয়া রয়েছে। INDIA নাম দিলেই বড় কোনও কাজ করা যায় না।
প্রধানমন্ত্রীর এহেন মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে। এরপরই কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে রাজ্যসভায় পাল্টা বলেছেন, মণিপুর নিয়ে আমরা আলোচনা চাইছি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নিয়ে কথা বলছেন। রাজ্যসভার সিপিএম সাংসদ তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, উনি INDIA জোট নিয়ে যা বলেছেন, যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, তা শুধু বিরোধী জোটকেই নয়, দেশকে অপমান করার শামিল।