কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: চুপচাপ। ভীষণই চুপচাপ। জেল কুঠুরির ভিতরে একমনে বই পড়ছেন ‘হেভিওয়েট’ প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। একেবারে সাধারণ বন্দিদের মতোই আচরণ করা হচ্ছে তাঁর সঙ্গে। কিন্তু, তার ফাঁকেই চোখেমুখের ভাষায় যেন একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, ও কেমন আছে। প্রেসিডেন্সি জেলের সাড়ে তিনশো মিটার দূরেই আলিপুর জেলের ২ নম্বর সেলে রয়েছেন পার্থের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়।
পরিচয়ের পর থেকে এবারেই হয়তো প্রথম ‘বন্ধুত্ব দিবস’টি আলাদা কাটাতে হল দুজনকে। তাও আবার হাজতবাসে। প্রথমদিন থেকেই অনবরত হাপুস নয়নে কেঁদে ভাসিয়ে দেওয়া অর্পিতারও মন ভালো নেই। কিন্তু, কীসের জন্য? বন্দিশালার উঁচু পাঁচিলের গায়ে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে ‘অপা’কে নিয়ে নানান গুঞ্জন। কী খাচ্ছেন, কী করছেন, কীভাবে থাকছেন। সূত্রে জানা গিয়েছে, একেবারে সাধারণ বন্দির মতো রাখা হলেও অর্পিতার জন্য বিশেষ কিছু সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। তবে, রাজকীয় বিলাসব্যসন, আরাম-বৈভব অদৃষ্টের লিখনে হাতছাড়া হলেও এখনও কিন্তু সরাসরি পরস্পরের বিরুদ্ধে দোষারোপ করেননি। এমনই তাঁদের বন্ধুত্ব অটুট।
জেল সূত্রে জানা গিয়েছে, পার্থকে রাতে শোওয়ার জন্য চারটি কম্বল দেওয়া হয়েছিল। কয়েকদিন আগেও যিনি ঠান্ডি মেশিন লাগানো ঘরে ছাড়া থাকতেন না। শোনা যায়, যাঁর বিদেশি পোষ্য সারমেয় থাকে ঠান্ডিঘরে। তাঁকেই গরমের মধ্যে মেঝেতে কম্বল বিছিয়ে শুতে হয়েছে। ভোজনবিলাসী বলে খ্যাত পার্থকে রাতে ডাল-রুটি ও একটি সবজি দেওয়া হয়েছে রাতে। দিনে বই পড়ে সময় কাটালেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ছেন।
সকালে তাঁকে চিনি ছাড়া চা ও বিস্কুট দেওয়া হচ্ছে। বন্দিদের নিয়মমতো দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ আবার ভাত-ডাল ও তরকারি দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন, রোজভ্যালি কর্তা গৌতম কুণ্ডু, ছত্রধর মাহাত, আমেরিকান সেন্টারে হামলার কয়েদি আফতাব আনসারিসহ অন্যান্য বন্দির সঙ্গেই এক বাথরুম ব্যবহার করতে হচ্ছে তৃণমূলের প্রাক্তন মহাসচিবকে।
অন্যদিকে, অর্পিতাকে একটু বাড়তি নজরে রাখা হয়েছে। কারণ, ইডি আদালতে জানিয়েছিল জেলে অর্পিতার প্রাণ সংশয় রয়েছে। তাই তাঁর তদারকি করছেন খোদ জেল সুপার। তাঁকে নগণ্য অপরাধীদের ঘরে না রেখে একটি ভালো ঘরে রাখা হলেও তাঁর চোখের জল যেন বাগ মানতে চাইছে না। বন্দিদেরও কেউ কেউ তাঁদের নিয়ে মশকরা করে আড়ালে বলছেন, বন্ধু বিনে প্রাণ বাঁচে না…।