মালপ্পুরম: অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে ভারতের মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির আপাত বিপরীত আদর্শবাদ ফুটে বেরিয়ে পড়ল কোঝিকোড়ের আলোচনাসভায়। যেখানে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি অভিন্ন দেওয়ানি বিধির গলা ফাটিয়ে বিরোধিতা করলেন। যে বিধিকে সমর্থন করে কিংবদন্তি কমিউনিস্ট নেতা ইএমএস নাম্বুদ্রিরিপাদ নিবন্ধ লিখেছেন একদা। দেওয়ানি বিধির বিরোধিতায় সর্বদলীয় এক আলোচনাসভায় ইয়েচুরি ২১-তম ল কমিশনের রিপোর্টের উপর জোর দিয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করেন। কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতের মতো বহু ধর্মের দেশে ওই আইন অপ্রয়োজনীয় এবং অনাকাঙ্ক্ষিত।
ইয়েচুরি বিজেপি সরকারকে কাঠগড়ায় বসিয়ে বলেন, সরকার হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে বিভাজনের চেষ্টা করছে। ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রকে অসহিষ্ণু হিন্দুত্বের শাসনে রূপান্তরিত করতে চাইছে। এভাবে বর্তমান সিপিএম যেখানে দাঁতনখ বের করে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির বিরোধিতায় নেমেছে, সেখানে দলেরই প্রাক্তন পুরোধা নেতা ইএমএস কিন্তু সেকালে এর সমর্থনে কাস্তে-হাতুড়ি উঁচু করে ধরেছিলেন। সিপিএমের সাপ্তাহিক মুখপত্র ‘চিন্তা’য় প্রকাশিত ১৯৮৫ সালের সেপ্টেম্বরে লেখা এক নিবন্ধে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পক্ষে কলম তুলে নিয়েছিলেন কেরলের প্রথম কমিউনিস্ট মুখ্যমন্ত্রী নাম্বুদ্রিপাদ। ওই নিবন্ধে ইএমএস ভারতের পার্সোনাল ল সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন: Calcutta High Court | বিচার ব্যবস্থা নিয়ে মন্তব্য, অভিষেকের বিরুদ্ধে মামলা কলকাতা হাইকোর্টে
বিবাহ বিচ্ছিন্না মুসলিম মহিলাদের খোরপোশ দেওয়ার বিষয়ে শাহ বানো মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। নাম্বুদ্রিপাদের ব্যক্তি মত ও ব্যাখ্যাও সেরকমই ছিল। নিবন্ধে ইএমএস দলের মহিলা সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক টি দেবীর মতেরই পক্ষাবলম্বন করেন। টি দেবীও অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রয়োগের সপক্ষে ছিলেন। নাম্বুদ্রিপাদ লেখেন, দল এবং দলের মহিলা সংগঠন উভয়েই সামাজিক বদলের পক্ষে রয়েছে। আমরা উভয়েই একটা বিষয়ে সহমত যে, বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, উত্তরসূরি কিংবা উত্তরাধিকার বিষয়ে সভ্যতার আলোকবঞ্চিত রীতিনীতির অবসান ঘটিয়ে দেশে সমাজ সংস্কার করা জরুরি। বিশেষ করে মহিলারা এ বিষয়ে বেশি উৎসাহী। সংবিধানের ৪৪ ধারায় যেভাবে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির কথা বলা আছে, তার প্রয়োগে সিপিএমের সম্পূর্ণ সমর্থন আছে। যার ফলে মুসলিমসহ সব ধর্মের মানুষই এর সুফল পাবেন।