ভারত আবার শীর্ষে। তবে শিক্ষাদীক্ষা কিংবা শিল্প-বাণিজ্যে নয়। সাপের কামড়ে মৃত্যুতে বিশ্বের মধ্যে এক নম্বরে রয়েছে ধন্বন্তরির দেশ ভারত। সম্প্রতি ছত্তিশগড়ে ৮ বছরের এক বালককে সাপে কামড়ায়। সাপটি ছেলেটির হাতে পেঁচিয়ে ধরে। ঝাঁকুনি দেওয়ার পরও সেটি আটকে থাকায় ছেলেটি সাপটিকে কামড়ে দেয় এবং বিষাক্ত সাপটির মৃত্যু হয়। কিন্তু, এটা তো একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। পশ্চিমবঙ্গ সহ গোটা দেশে বছরভর প্রায় ৬৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় সর্প দংশনে।
ইংরেজি সংবাদ মাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এই তথ্য জানা গিয়েছে। তাতে বেশ কয়েকটি উদাহরণও দেওয়া হয়েছে। যেমন, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নবীন মনুয়া গ্রামের সুলেখা শাসমল। যাঁর এখনও মনে আছে, ১০ বছরের মেয়ের চোখের সামনে মৃত্যুর কথা। বছর পাঁচেক আগে মাটির ঘরে মেয়েটি বাবার সঙ্গে ঘুমোচ্ছিল। তখন একটি বিষধর তাকে একঘণ্টার মধ্যে দুবার কামড়ায়।
আরও পড়ুন: Dengue: এবার ডেঙ্গিতে প্রাণ কাড়ল ৮ বছরের শিশুর
সুলেখা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমরা তখন একটি গাড়ি ভাড়া করে ওকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু সেখানেও সাপের কামড়ের কোনও চিকিৎসা ছিল না। ওরা কলকাতায় রেফার করে দেয়। এখান থেকে প্রায় ৩ ঘণ্টার রাস্তা। কলকাতায় গিয়ে হাসপাতালে ঢোকার মুখেই মেয়ে মারা যায়, বলেন সুলেখা। একটি পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে সাপের কামড়ে মৃত্যুর ৮০ শতাংশই ঘটে ভারতে। সংখ্যার প্রতি বছরে গড়ে ৬৪ হাজার জনের মৃত্যু হয় সাপের দংশনে।
জর্জ ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথ ইন ইন্ডিয়ার জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সৌম্যদীপ ভৌমিক বলেন, ২২টি দেশে এ ব্যাপারে একটি সমীক্ষা চালানো হয়। সেখানে দেখা গিয়েছে, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থান সাপের কামড়ে মৃত্যুর শীর্ষ তিন স্থানে রয়েছে। কিন্তু, বিশেষজ্ঞদের মতে, বিভিন্ন কুসংস্কারের কারণে প্রকৃত সংখ্যাটি অনেক বেশি। পশ্চিমবঙ্গে সাপের কামড়ে মৃত্যুর চিকিৎসায় অগ্রগণ্য ডাঃ দয়ালবন্ধু মজুমদার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, রাজ্যে সাপের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। কারণ, অনেক সর্প দংশনই হাসপাতালে নথিভুক্ত হয় না। তাই সরকারি খতিয়ানে সেই মৃত্যুগুলি নথিভুক্ত হয় না।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে রাজ্যগুলিকে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অফিসারদের বিশেষ নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, রাজ্যভিত্তিক সাপের কামড়ের চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ঠিকমতো পালিত হচ্ছে কিনা তার উপর নজর রাখতে।