সাও পাওলো: বল পায়ে মহাকাব্যিক ছন্দ লিখতেন সবুজ ঘাসের খাতায়। বিরাট গোলপোস্টকে অর্জুনের পাখির চোখ হিসেবে দেখতেন। সেই পেলেকে (Pele) দেখতে সাও পাওলোর (Sao Paulo) আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালের হাসপাতালের বাইরে শয়ে শয়ে মানুষ। তাঁদের অনেকেরই গায়ে নাম্বার (Number 10) টেন লেখা ব্রাজিলের জার্সি। পেলে, যাঁর এক নামেই শ্বেতাঙ্গ শাসিত বিশ্ব ঔদ্ধত্যের দৃষ্টি অর্ধনমিত করে দাঁড়াত। কৃষ্ণাঙ্গ ও হতদরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসেও ব্রাজিলকে এই গ্রহের একটি জাতি হিসেবে তুলে ধরেছিলেন পেলে।
পেলে এমন এক ফুটবলার যাঁকে ১৯৬১ সালে প্রেসিডেন্ট জানিও কুয়াদ্রো জাতীয় সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। সরকারের সঙ্গে মাখোমাখো সম্পর্কের জন্য ১৯৯৫-১৯৯৯ পর্যন্ত তিনি ব্রাজিলের ক্রীড়ামন্ত্রী ছিলেন। এমনকী একবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার মনোবাসনাও ছিল তাঁর। তা সত্ত্বেও নিজের দেশে তাঁর সময়ে বহুবার সমালোচনার মুখে পড়েছেন এই কারণে যে, বর্ণবৈষম্যবাদ, স্বৈরতন্ত্র কিংবা রক্ষণশীলতা নিয়ে মৌনব্রত অবলম্বন করেছিলেন। ১৯৬৪-১৯৮৫ সাল পর্যন্ত ব্রাজিলে সামরিক শাসন চলেছে। ১৯৬৯ সালে সেনাশাসক জেনারেল এমিলিও মেডিসি ক্ষমতায় আসেন। সেই সময়কালে সেনাবাহিনীর অত্যাচার মাত্রাতিরিক্ত হয়েছিল। বিরোধীদের চরম নির্যাতন করা হতো। অপরাধ গোপন করতে জুন্টা সরকারের দরকার ছিল সাফল্য। আর তা আসে ১৯৭০ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপ জয়।
আরও পড়ুন: Pele Dies At The Age Of 82: ৮২ বছর বয়সে জীবনাবসান ফুটবল সম্রাট পেলের
ফুটবল এবং রাজনীতির সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ইউক্লিদ ডি ফ্রেইতা কোউতো বলেন, পেলের তখন প্রায় ৩০ বছর বয়স। এবং তিনিই ছিলেন জয়ের মূল কারিগর। আর মেদিসির জন্য পেলে ছিলেন ভাবমূর্তি গড়ে তোলার উপযুক্ত মুখ। বিশ্বকাপ চলাকালীন সেনা সরকার ফুটবল সম্রাটের একমুখ হাসির ছবি দিয়ে পোস্টার দিত দেশে। সরকারের সেই প্রচার পোস্টারে লেখা থাকত ব্রাজিল তুমি একে ভালোবাসো অথবা দেশ ছাড়ো। আমাদের দেশকে পিছনে ফেলে রাখবে এমন কোনও শক্তি নেই। এরও প্রতিবাদ করেননি পেলে।
শুধু তাই নয়, ইতালিকে হারিয়ে দেশে ফেরার পর পেলে চলে যান ব্রাসিলিয়ায়। সেখানে জুলে রিমে (বিশ্বকাপের তৎকালীন নাম) কাপ হাতে নিয়ে সেনাশাসকের পাশে দাঁড়িয়ে ছবিও তুলেছিলেন। কাতারে কাতারে জেলবন্দিদের নিয়ে একটিও কথাও বলেননি। বরং, গণতন্ত্রের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ব্রাজিলবাসী জানে না কী করে ভোট দিতে হয়। সাও পাওলো ফুটবল মিউজিয়ামের গ্রন্থাগারিক আদেমির তাকারা বলেন, পেলে সেনা অথবা ডান কিংবা বাম সব সরকারেরই আস্থাভাজন ছিলেন। কখনও কারও বিরোধিতা করেননি। তাই সর্বকালে সব সরকারের কাছ থেকে অনুগ্রহও পেয়েছেন।