অমৃতসর: সুরাসক্ত মানুষ জানেন কাকে বলে ‘পাটিয়ালা পেগ’। কিন্তু কেন বলে জানেন কি? ভাবতে গিয়ে নেশা না কেটে যায়! যদি বলি, এই নামকরণের পিছনে রয়েছে ‘গোরা-কালা’র লড়াই। পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ রাজশক্তিকে পরাভূত করার চেষ্টার একটা রণকৌশল। আরও জেনে রাখুন, পঞ্জাবে কোনও বিয়েশাদি, উৎসবে সবসময় পাটিয়ালা পেগেই সুরা বণ্টন করা হয়। কারণ এটাই পঞ্জাবি ঘরানার রীতিনীতি। তাহলে নিশ্চই অনেকেই আর একটা পাটিয়ালা পেগের অর্ডার দিয়ে বসবেন। গল্পের সময়টা ১৯২০ সালের। ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট যুগের ছবি ভেবে মুখ ফিরিয়ে বসবেন না। এই কাহিনিতে টুইস্ট আছে।
যে গল্প শোনাচ্ছিলাম। তখন পাটিয়ালার মহারাজা ভূপিন্দর সিং। এই রাজবাড়ির অন্দরেই লুকিয়ে আছে পাটিয়ালা পেগের সোনালি রহস্য। ১৯০০ সাল থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত তিনিই ছিলেন পাটিয়ালার মহারাজা। পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিংয়ের ঠাকুরদা ছিলেন ভূপিন্দর সিং। ভূপিন্দর সিং ছিলেন স্বাধীনচেতা মানুষ। একবার হয়েছে কী, পোলো খেলায় গোরাদের দলকে হারানোর মতলব আঁটলেন মহারাজা।
আরও পড়ুন: Panchayat Election | ৭ জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ আদালতের
যেমন ভাবনা, তেমন কাজ। আইরিশ পোলো টিমকে খেলতে ডেকে হারানোর বিষয়ে বদ্ধপরিকর হলেন। তাঁর আমন্ত্রণে ব্রিটিশ পোলো খেলোয়াড়রা এসে পৌঁছল পাটিয়ালায়। রাজসমাদরে তাদের থাকা-খাওয়ার আয়োজন। তারা বেজায় খুশি ভারতীয় রাজার অতিথি সৎকারে। কিন্তু মহারাজার মনে মনে তখন অন্য ফন্দি। যে কোনও মূল্যে ব্রিটিশ টিমকে নাকানিচোবানি খাইয়ে অপদস্থ করাই তাঁর লক্ষ্য। তাই ম্যাচের আগের রাতে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানালেন পোলো টিমকে।
রাজকীয় পার্টি দেখে পোলো খেলোয়াড়রা তো অবাক। বোতলের পর বোতলের বিলাতি সুরা, খানার এলাহি আয়োজনে তো তারা মাতোয়ারা। এই ফাঁকে তাদের মদ দেওয়া শুরু হল। আর সেটা হল পাটিয়ালা পেগ। যা সাধারণভাবে পরিবেশন করা মদের পরিমাণের প্রায় দ্বিগুণ। বিশেষ করে ব্রিটিশ খেলোয়াড়দের ওই পাটিয়ালা পেগ দেওয়া হল। যথারীতি যা হওয়ার তা হল। পরদিন সকালে বেলা অবধি বিছানায় কুপোকাত ঘোড় সওয়ারিরা। যারা সোজা হল তাদেরও মাথা ব্যথা, ঘোরঘোর ভাব। তাই নিয়ে শুরু হল খেলা। মহারাজার টিম গো হারান হারাল সাদা চামড়ার টিমকে। মাঠে টিকে উঠতেই পারল না ব্রিটিশরা।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং তাঁর জনতার মহারাজা নামের গ্রন্থে এই গল্পের কথা উল্লেখ করে লিখেছেন, পাটিয়ালা পেগ হল ১২০ এমএল হুইস্কি। তখনকার দিনে এটা মাপা হত গ্লাসের গায়ে হাতের তর্জনী থেকে কনিষ্ঠ আঙুল পর্যন্ত ঠেকিয়ে রেখে। শোনা যায়, আরও একবার মহারাজা ভূপিন্দর একটি সান্ধ্য ক্রিকেট ম্যাচের শেষে ব্রিটিশ খেলোয়াড়দের সঙ্গে এরকমই মশকরা করেছিলেন।