কলকাতা: বাবা-মায়ের স্নেহের মতোই বঙ্গ সংস্কৃতিতে জড়িয়ে ইংরেজি নববর্ষের (New Year’s Day 2023) প্রথম দিনে লোটাকম্বল নিয়ে বেরিয়ে পড়া। দু চোখ যেদিকে যায়, সেদিকেই বাঙালি বসে পড়ে টিফিন ক্যারিয়ারে ভরা খাবার আর সদ্য ওঠা কমলালেবু ও জয়নগরের মোয়া নিয়ে। চিড়িয়াখানা (Zoo) হোক, আউট্রাম ঘাট। ইকো (Eco Park) বা নিক্কো পার্ক (Nicco Park) হোক অথবা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল (Victoria Memorial)। দুপায়ে সর্ষে বেঁধে শহর ছাড়িয়ে বনভোজনে (Picnic) যেতেও বাঙালির ক্লান্তি নেই। সঙ্গে রান্নার সমস্ত তৈজসপত্র অথবা এখন তো লোকাল ক্যাটারাররাও ব্যবস্থা করে দিচ্ছে।
তাই নো ঝঞ্ঝাট, চল হাঁটি…টাকির ইছামতীর ধার কিংবা গাদিয়াড়া। ঝড়খালি নয়তো বা জয়পুরের জঙ্গল। আর এবার ফাউ হিসেবে মিলেছে শনি ও রবিবারের জোড়া আনন্দ। ফলে চড়ুইভাতির বাঙালি চড়াই পাখিকে আর ঠেকায় কে! রবিবার ১ জানুয়ারির কুয়াশা জড়ানো সকাল থেকেই বীরপুঙ্গবদের দেখা গেল ডুয়ার্স থেকে গনগনি, বেলা বাড়তেই সর্বত্র ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই দশা।
আরও পড়ুন: Cossipore Udyanbati: আজ কল্পতরু উৎসব, রামকৃষ্ণ ভক্তদের ভিড় কাশীপুর উদ্যানবাটি থেকে সর্বত্র
টাকিতে সকাল থেকেই পর্যটকদের ভিড়। একইভাবে বছরের প্রথম দিন পর্যটকদের ভিড় সুন্দরবনের বুকে ঝড়খালি পর্যটন কেন্দ্রে। উৎসবমুখর হয়ে উঠল নদীয়ার গয়েশপুরের জুবিলি পার্কও। সেখানে বনভোজনে মেতেছেন মানুষ।
নতুন বছরে মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারিতে ভিড় জমালেন হাজার হাজার মানুষ। হাজারদুয়ারি মিউজিয়াম দেখতে লম্বা লাইন শুরু হয়ে গিয়েছে। জেলার পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ভিড় করেছেন হাজারদুয়ারিতে। গঙ্গার পাশে বিভিন্ন পার্কে জমে উঠেছে পিকনিক। ডিজের তালে তালে নাচগানের সঙ্গে চলছে সকলে মিলে আনন্দ। বছরের প্রথম দিনটিকে চুটিয়ে উপভোগ করতে চাইছেন সকলে।
একটা বছর শেষ। শুরু নতুন একটা বছর। পুরানোকে বিদায় নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে বর্ষবরণ বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড়ের কোলে থাকা ছোট্ট আদিবাসী গ্রাম শিউলিবনাতেও। মাটির মঞ্চে ধামসা-মাদলের সূরমূর্ছনায় প্রকৃতির কোলে এক অন্য অনুভূতির স্বাদে অভিনব বর্ষবরণ আদিবাসীদের। সেই স্বাদ নিতে হাজির পর্যটকরাও। ইতিহাসের শহর বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরেও হাজির বহু পর্যটক। জেলার জঙ্গলমহল জয়পুরেও পিকনিকের ভিড়। জয়রামবাটিতে এদিন মা সারদার জন্মভিটেতে হাজির হয়েছিলেন অগণিত পুণ্যার্থী।
পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বীরভূম এমনকী উত্তরবঙ্গ থেকেও আদিবাসী নাচগানের বিভিন্ন দল এসে যোগ দেন শিউলিবনা গ্রামের বর্ষবরণের খেরওয়াল তুকৌ উৎসবে। শুশুনিয়া পাহাড়ে বেড়াতে আসা পর্যটকরাও ছন্দে পা মেলান চিরায়ত সংস্কৃতির সেই মিলন মেলায়। একদিকে চিরসবুজ শুশুনিয়া পাহাড়ের প্রকৃতি অন্যদিকে শীতের আমেজের সঙ্গে ধামসা-মাদলের তালে নানান নৃত্যে এক অন্য বর্ষবরণ।
পুরানো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পুরুলিয়ায় হাজির পর্যটকরা। জেলা ছাড়িয়ে ভিন জেলা এবং ভিন রাজ্য থেকে বহু পর্যটক ভিড় জমিয়েছেন জেলার বিভিন্ন পর্যটনস্থলে। সুন্দরী অযোধ্যা, রঘুনাথপুরের জয়চণ্ডী পাহাড়, বান্দোয়ানের দুয়ারসিনি, নিতুরিয়ার গড়পঞ্চকোট, আড়ষার দেউলঘাটা সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনস্থল বর্তমানে ভিড়ে ঠাসা। বিশেষ করে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে অযোধ্যা পাহাড়ে। বছরের প্রথম দিনে পুরুলিয়ার কংসাবতী নদীর তীরেও পিকনিকে শামিল জেলার সাধারণ মানুষ। পরিবার পরিজন, বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে আনন্দে মেতে উঠেছেন তাঁরা।