যুবক বয়সের কুস্তির আখড়াকে প্রত্যক্ষ রাজনীতির ময়দানে নামিয়ে এনেছিলেন যিনি, তাঁর নাম মুলায়ম সিং যাদব। আদ্যন্ত নেতাজি ভক্ত। দলেও তাঁকে ডাকা হতো ‘নেতাজি‘ নামে। কংগ্রেস বিরোধিতা করে নামডাক করলেও, ক্ষমতার অলিন্দে থাকতে জলের আকার ধারণ করেছিলেন আমরণ।
যে পাত্রে থাকলে ক্ষমতার কক্ষপথে বিচরণ করা যাবে, সেই পথ বেছে নিয়েছিলেন। আঞ্চলিক বা প্রাদেশিক, দলিত বা যাদব ভোট, কেন্দ্রীয় দল কিংবা সমাজতন্ত্রী রাজনীতি কোনও কিছুতেই পিছপা ছিলেন না মুলায়ম সিং যাদব। এমনকী পরিবারতন্ত্রের রাজনীতি, রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন ও আর্থিক কেলেঙ্কারির কালো বিতর্ক কোনও কিছুতেই তাঁর পা টলেনি। এহেন আপাত চোখে অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি সমাজবাদী পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মুলায়ম সিং যাদব নিঃসন্দেহে ভারতীয় রাজনীতিতে নিজেই একটা যুগ। যার অবসান হল ১০ অক্টোবর, সোমবার সকালে।
আরও পড়ুন: Mulayam Singh Yadav: প্রয়াত মুলায়ম সিং যাদব, অবসান একটি যুগের
মুলায়ম সিং যাদবের জন্ম ২২ নভেম্বর, ১৯৩৯ সালে। উত্তরপ্রদেশের এটাওয়া জেলার সৈফাই গ্রামে। এটাওয়ার কর্মক্ষেত্র পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পর শিকোহাবাদের এ কে কলেজ থেকে বিটি পাশ করেন। আগ্রা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি আর কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। শুধু রাজনৈতিক জীবনেই নয়, তাঁর ব্যক্তিগত জীবনেও জুড়ে ছিল বিতর্ক। মুলায়মে প্রথম পক্ষের স্ত্রীর নাম মালতিদেবী। তাঁদের একমাত্র সন্তান অখিলেশ যাদবের জন্মের সময় থেকে তিনি একেবারে শয্যাশায়ী হয়ে যান। তারপর থেকে মুলায়মের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয় সাধনা গুপ্তা নামে একজনের। সাধনা গুপ্তার নাম জানাজানি হয় সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা এক মামলার জেরে। সাধনার পূর্ব বিবাহ সূত্রে একটি ছেলে রয়েছে, নাম প্রতীক যাদব। যাঁর স্ত্রী অপর্ণা বিস্ত যাদব সম্প্রতি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।
কলেজে পড়ার সময়ই মুলায়ম রামমনোহর লোহিয়া এবং রাজ নারায়ণের দ্বারা প্রভাবিত হন। যাদব উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় প্রথম নির্বাচিত হন ১৯৬৭ সালে। বিধানসভায় মোট ৮ বার নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা জারি করলে মুলায়মকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯ মাস তিনি জেলে ছিলেন সেই সময়। প্রথম রাষ্ট্রমন্ত্রী হন ১৯৭৭ সালে এবং পরে ১৯৮০ সালে। জনতা দলেরই সঙ্গে পরে যোগ দেওয়া লোকদলের রাজ্য নেতা নির্বাচিতও হন।
লোকদল ভেঙে গেলে মুলায়ম নিজের দল ক্রান্তিকারী মোর্চা পার্টি গঠন করেন। সে সময় জনতা দল ভেঙে বেশ কিছু ছোট আঞ্চলিক দল গঠিত হয়, মুলায়মও নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নিজের দল গঠন করেন। যদিও পরে ১৯৯২ সালে তার নাম বদলে করা সমাজবাদী পার্টি। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মাত্র কয়েক মাস আগেই নতুন দল গঠন করেন উত্তরপ্রদেশের তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদব।