নয়াদিল্লি: দেশ জুড়ে তুমুল রাজনৈতিক এবং সামাজিক বিতর্কের আবহে আগামিকাল রবিবার নতুন সংসদ ভবনের (New Parliament India) উদ্বোধন করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Prime Minister Narendra Modi)। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে (Droupadi Murmu President of India) বাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ওই ভবন উদ্বোধন করছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। এমনকী রাষ্ট্রপতিকে ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পর্যন্ত করা হয়নি। ১৯টি বিরোধী দল লিখিত বিবৃতি দিয়ে রবিবারের ওই অনুষ্ঠান বয়কটের কথা জানিয়েছে।
বিরোধীদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কটের ফলে রবিবার কিছুটা তাল তো কাটবেই। তার উপর নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে সেঙ্গোল নিয়ে। অমিত শাহ থেকে শুরু করে বিজেপির তাবড় নেতা-মন্ত্রীরা দাবি করেছিলেন, ১৯৪৭ সালে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় ভাইসরয় মাউন্টব্যাটেন কোনও একটা প্রতীক খুঁজছিলেন। বিষয়টি জওহরলাল নেহরুর কানে যেতে তিনি চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারীর সঙ্গে কথা বলেন। রাজাগোপালাচারী তখন নেহরুকে চোল রাজাদের রাজদণ্ড হস্তান্তরের কথা জানান নেহরুকে। পরে চেন্নাইয়ের অলঙ্কার নির্মাতাদের দিয়ে একটি দণ্ড বানানো হয়। তাঞ্জাভুর মঠের পুরোহিতরা সেই দণ্ড বিমানে করে দিল্লিতে এনে লর্ড মাউন্টব্যাটেনের হাতে তুলে দেন ১৯৪৭ সালের ১৪ অগাস্ট। অমিত শাহদের দাবি, এটিই ব্রিটিশদের ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক।
রবিবার সেই সেঙ্গোল দণ্ড নতুন সংসদ ভবনে স্থাপন করা হবে। দিন কয়েক আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন উপলক্ষে এক সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানে তিনি একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করেছিলেন। সেই ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, পুরোহিতরা নেহরুকে চাদর পরিয়ে দিচ্ছেন। রাজাজি এবং নেহরু ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে আলোচনা করছেন।
রাজাগোপালাচারীর পৌত্র এবং তাঁর জীবনীকার রাজমোহন গান্ধী ওই ভিডিয়ো নিয়েও বোমা ফাটিয়েছেন। তাঁর দাবি, ওই ভিডিয়ো আসলে একটি অভিনয়। বর্তমানের অভিনেতারা তাতে অভিনয় করেন। কিন্তু ভিডিয়োর কোথাও তা লেখা নেই। রাজামোহন এক টেলিভিশন চ্যানেলে শুক্রবার বলেন, সেঙ্গোলের সঙ্গে রাজাগোপালাচারীর যোগাযোগের কথা আমি কখনও শুনিনি। নেহরুর বাড়িতে ওই দণ্ড তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়। এটা একেবারেই ব্যক্তিগত স্তরে হয়েছিল। এর সঙ্গে সরকারের কোনও সম্পর্ক ছিল না। সংসদের মধ্যে ওই দণ্ড রাখা ঠিক হবে না বলেও তিনি মত দেন।
ইতিহাসবিদ এবং প্রবীণ লেখকদের একাংশ বিজেপি নেতাদের এই কাহিনিকে মনগড়া বলে ব্যাখ্যা করেন। এটিকে ইস্যু করে কংগ্রেসও ময়দানে নেমেছে। কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ জয়রাম রমেশ টুইটে লেখেন, সেঙ্গোলের ইতিহাস নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার যা বলছে, তা চেন্নাইয়ের পুরোহিতদের কল্পনাপ্রসূত। তামিলনাড়ুতে রাজনৈতিক ফয়দা তোলার জন্য বিজেপি এই কাহিনি আমদানি করেছে। বিভিন্ন মহল থেকে সেঙ্গোল নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় অমিত শাহ শুক্রবার আর সেই প্রসঙ্গ তোলেননি। তিনি টুইটে লেখেন, কংগ্রেস দল ভারতের সংস্কৃতিকে এত ঘৃণা করে কেন। ওই দণ্ড কেন সংগ্রসশালায় এতদিন ফেলে রাখা হয়েছিল, সেই প্রশ্নও তোলেন শাহ।