ইন্দোর: দ্বিতীয় দিনের খেলা তখনও শুরু হয়নি। মাঠের একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে তিন মূর্তি-রাহুল দ্রাবিড়-চেতেশ্বর পূজারা এবং বিরাট কোহলি। রাহুল দ্রাবিড় বেশ কিছুটা সময় ধরে ব্যাট নিয়ে কিছু একটা বোঝাচ্ছিলেন। পরে জানতে পারলাম চেতেশ্বর পূজারাকে স্টান্সের সামান্য পরিবর্তন করার পরামর্শ দিচ্ছিলেন ভারতের হেড কোচ। কাউন্টি ক্রিকেট খেলার সময় তিনি ব্যাটের ফেজ কিছুটা উপরের দিকে রাখতেন। দ্রাবিড় তাঁকে এই উইকেটে স্পিনারদের খেলার সময় নীচের দিকে রাখার পরামর্শ দেন। আর তাতেই বাজিমাৎ! হোলকার স্টেডিয়ামের এরকম দুর্বিষহ উইকেটে অন্যসব ব্যাটাররা যেখানে ব্যর্থ, সেখানে একমাত্র উজ্জ্বল ধ্রুবতারা চেতেশ্বর পূজারা। রুক্ষ মরুভূমিতে তিনি যেন একমাত্র মরুদ্যান। বেকার প্রেমিকের জীবনে যেন প্রেমিকার শেষ আশ্বাস! এই ধরনের টার্নিং ট্র্যাকে যেখানে বল কখনও নীচু থাকছে, কখনও আবার অতিরিক্ত বাউন্স, সেখানে পূজারার অতিমূল্যবান ৫৯ রানের ইনিংস যেন ১৫০ রানের সমতুল্য। লেগ স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ পূজারার অবিশ্বাস্য ক্যাচ না ধরলে ভারতের লিড আরও বাড়তে পারত। অধিনায়ক হিসেবেও স্টিভ স্মিথের প্রশংসা করতেই হচ্ছে। যে ধরনের আক্রমণাত্মক ফিল্ড সাজিয়ে তিনজন স্পিনারকে ব্যবহার করে ভারতীয় ব্যাটারদের চাপে ফেলার চেষ্টা করছিলেন, তা পুনরায় তাঁকে দীর্ঘসময়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট অধিনায়ক করার দাবি জোরালো করবে।
অন্যদিকে, ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মার স্ট্র্যাটেজি নিয়ে কিছু প্রশ্ন থাকছেই। দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরুর এত পর রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে আনার কারণ কী? অশ্বিনকে আরেকটু আগে আনা হলে হয়ত আরও আগেই অল-আউট হতে পারত অস্ট্রেলিয়া। মজার বিষয় এটাই যে ভারতের যখন দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হচ্ছে তখন অস্ট্রেলীয় স্পিনার নাথন লায়নকে দিয়ে বোলিং শুরু করাচ্ছেন অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ।ভারতে এসে ভারতীয় স্ট্র্যাটেজিতেই ভারতকে হারাতে তৎপর অজি অধিনায়ক। যেখানে ভারত অধিনায়ক অন্য পথে হাঁটলেন। এটা হাস্যকর ছাড়া আর কী! এটা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়াকে নিজেদের মধ্যে কিছুটা রসিকতা করতেও দেখা যায়। মহম্মদ শামির পরিবর্তে খেলা উমেশ যাদবের পারফরম্যান্সের প্রশংসা করতেই হবে। বৃহস্পতিবার সকালে ৩ ওভার বল করে ৩ উইকেট তুলে নেন। শেষ উইকেটটি নেওয়ার পর আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রনাম করেন। সদ্য পিতৃহারা হয়েছেন। তাই এই পারফরম্যান্স হয়ত তাঁর বাবাকেই উৎসর্গ করলেন। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে মেঘে ঢাকা ব্রিস্টলের শচীন রমেশ তেন্ডুলকরকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও মনে পড়ল। দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে উমেশ যাদব বলেন, ‘জয়ের আশা এখনও ছাড়ছি না। এই পিচে রান করা ভীষণ কঠিন। আমরা দ্রুত উইকেট নিতে পারলে ম্যাচ অন্যদিকে ঘুরতেও পারে।’
বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ৫০-এ ইন্দোরের বিখ্যাত সারাফা বাজার-এ দু’জন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারকে দেখা গেল। এই দু’জন ক্রিকেটার কিন্তু তৃতীয় টেস্টে খেলছেন। এর থেকে অনেকটাই স্পষ্ট কতটা ‘কুল’ এই মুহূর্তে অস্ট্রেলীয় ড্রেসিংরুম। শুক্রবার এই সামান্য টার্গেট চেজ করে হয়ত বিয়ারের বোতল হাতে সেলিব্রেট করতেও দেখা যেতে পারে ব্যাগি-গ্রিনধারীদের। নাকি তাঁদের সেলিব্রেশনের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে ইন্দোরের উইকেট…