শিলিগুড়ি: ছোট ভাই বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার শিলিগুড়িতে তিনি বলেন, আমার পরিবার বলে কেউ নেই। তাঁর অনেক কাজকর্ম অনেকদিন ধরে পছন্দ নয়। আমি ওঁর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলাম। ওঁকে আমার ভাই বলে পরিচয় দেবেন না।
এদিন সকালেই মুখ্যমন্ত্রীর ছোট ভাই বাবুন (স্বপন) সংবাদমাধ্যমে হাওড়ার তৃণমূল প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে আপত্তি তোলেন। দিল্লি থেকে তিনি বলেন, প্রসূনকে প্রার্থী করা ঠিক হয়নি। বাবুন হাওড়ায় নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াবেন বলেও হুমকি দেন। তিনি বলেন, দিদি আমার ভগবান। দিদির সঙ্গে কথা বলব। দিদি হয়ত আমার এই সিদ্ধান্ত মানবেন না। তবু তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করব। হাওড়ায় প্রার্থী হওয়ার মতো আরও অনেক যোগ্য লোক ছিল তৃণমূলে। যে ক্লাস ফাইভে উঠতে পারে না, তাকে গ্র্যাজুয়েট করা হয়েছে। মোহনবাগান ক্লাবের সাধারণ সভায় আমার সঙ্গে প্রসূন যে ব্যবহার করেছে, তা আমি কখনও ভুলব না।
আরও পড়ুন: রাস্তা ও পানীয় জলের সমস্যা পরিদর্শনে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে অধীর
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাবুন বলেন, যতদিন দিদি থাকবেন, ততদিন আমি তৃণমূলে থাকব। বিজেপিতে যাচ্ছি না। তিনি বিজেপিতে যোগ দিতে চান বলেও জল্পনা ছড়ায়। তাতে অবশ্য তিনি জল ঢেলে দেন।
এদিন শিলিগুড়ি থেকে কলকাতায় রওনা দেওয়ার আগে উত্তরকন্যায় সাংবাদিক বৈঠকে বাবুনের প্রসঙ্গ ওঠে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পরিবার নিয়ে ও যা খুশি করে করুক। আমার সঙ্গে ওর কোনও সম্পর্ক নেই। আজ থেকে ওর সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করলাম। আমার পরিবারে ৩২ জন রয়েছে রক্তের সম্পর্কে। সবাই ওর আচরণে ক্ষুব্ধ। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, দয়া করে ওকে আমার ভাই বলে পরিচয় দেবেন না। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, হাওড়ায় প্রসূনই তৃণমূলের প্রার্থী। আমি পরিবারতন্ত্রকে প্রশ্রয় দিই না। এদিকে হাওড়ায় নির্দল প্রার্থী হয়ে লড়াই করার ইঙ্গিত দিয়ে বাবুন বলেন, আমি হাওড়ার ভোটার হয়েছি। সেখানে বাড়িও রয়েছে।
রবিবার তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয় ব্রিগেডের জনগর্জন সভা থেকে। তারপরই দলের অন্দরে ক্ষোভ জমা হতে থাকে। ব্যারাকপুরে টিকিট না পেয়ে ক্ষোভ উগরে দেন দলবদলু সাংসদ অর্জুন সিং। তিনি ব্যারাকপুরে তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিকের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন বলে জানান। অর্জুন বিজেপিতেই আবার নাম লেখাবেন বলেও ইঙ্গিত দেন। বাঁকুড়া কেন্দ্রে টিকিট প্রত্যাশী ছিলেন অভিনেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২১ সালে তিনি বাঁকুড়া বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে হেরে যান। পরে তাঁকে দলের সাধারণ সম্পাদক করা হয়। তিনি বাঁকুড়ায় পড়ে থেকে সংগঠন করছিলেন বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হত। মঙ্গলবার বহরমপুরের তৃণমূল প্রার্থী প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানের বিরোধিতা করেন ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, এই বহিরাগতকে দিয়ে অধীর চৌধুরীকে হারানো সম্ভব নয়। আমি নির্দল হিসেবে বহরমপুরে দাঁড়াতে পারি। আমার ক্ষমতা প্রমাণ করব।
এদিন বিদ্রোহ দেখা দিল খোদ মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারেও। তৃণমূলে এই ঘটনা নজিরবিহীন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।