মালদহ: মালদহে পঞ্চায়েত ভোটের ঠিক মুখে বড়সড় ধাক্কা তৃণমূলে। বুধবার জেলার সংখ্যালঘু সেলের সমস্ত পদাধিকারী ইস্তফা দিলেন। দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ, কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে টিকিট বিলির অভিযোগে গণইস্তফা সংখ্যালঘু সেলের। জেলা তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের সহ সভাপতি আনারুল হক বলেন, পঞ্চায়েতের টিকিট টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে মনোনয়নপত্র জমার শেষদিনের আগের দিন মালদহের মতো সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলায় এই ঘটনা শাসকদলের পক্ষে বিরাট অশনি সংকেত বলে মনে করছেন অনেকে।
পদত্যাগী নেতাদের অভিযোগ, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মাটি কামড়ে লড়াই করছেন। দল তাঁদের মর্যাদা দেয়নি। উলটে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সর্বস্তরে টিকিট বিক্রি, স্বজনপোষণ এবং দুর্নীতি হয়েছে। এদিন মোট ৫৬ জন জেলা কমিটির সদস্য, দলের সংখ্যালঘু সেলের জেলা সভাপতি এবং চেয়ারম্যান সহ সমস্ত পদাধিকারী সাংবাদিক বৈঠক করে সংগঠন থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন। নির্বাচনে তাঁরা যে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন না সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন সেলের নেতারা। শুধু তাই নয়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নবজোয়ার যাত্রাকে স্রেফ ‘আইওয়াশ’ বা লোকদেখানো বলেও এদিন জানিয়ে দেন সংখ্যালঘু সেলের চেয়ারম্যান ও সভাপতি।
আরও পড়ুন: Westbengal State Election Commission | রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত দায়িত্বে সঞ্জয় বনসল
তাঁদের বক্তব্য, কোটি কোটি টাকায় দলের পঞ্চায়েত নির্বাচনের টিকিট বিক্রি করেছেন জেলা সভাপতি আব্দুর রহিম বক্সি থেকে শুরু করে জেলা চেয়ারম্যান সমর মুখোপাধ্যায় ও দলের বিধায়করা। রাজ্য নেতৃত্বকে সমস্ত তথ্য দেওয়ার পরেও প্রার্থী তালিকায় কোনও স্তরে স্থান পাননি সংখ্যালঘু সেলের কোনও সদস্য। এমনকী চাকরি চুরির সঙ্গে যারা যুক্ত, তারাও দলের টিকিট পেয়েছেন বলে অভিযোগ সংখ্যালঘু নেতৃত্বের। রাতের অন্ধকারে টিকিট বিক্রি হয়েছে। টিকিট নিয়ে দুর্নীতি, বিধায়ক, মন্ত্রীদের ঘনিষ্ঠ যারা টাকা দিতে পেরেছে, তাদের টিকিট দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে সংখ্যালঘু নেতৃত্ব। যাঁদের নামে অভিযোগ উঠেছে, এখনও পর্যন্ত তাঁদের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সংখ্যালঘু সেলের দুই নেতার জন্য জেলা পরিষদের দুটি টিকিট দাবি করা হয়েছিল। কিন্ত, প্রার্থী ঘোষণার পর দেখা যায়, তাঁরা বঞ্চিত হয়েছেন। তা নিয়েই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সংখ্যালঘু নেতাদের মধ্যে। যদিও এই মুহূর্তে তাঁরা দল ভেঙে অন্য দলে যাওয়ার কোনও ইঙ্গিত দেননি। তবে আসন্ন নির্বাচনে তাঁরা যে সক্রিয় থাকবেন না তা এককথায় স্পষ্ট।
এই মওকায় ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়েছে বিজেপি। বিজেপি নেতা অম্লান ভাদুড়ি এদিন বলেন, গত ভোটে তৃণমূল সংখ্যালঘুদের সিএএ দিয়ে ভয় দেখিয়ে ভোট নিয়েছিল। কিন্তু, ওরা পরে বুঝতে পেরেছে তখন তৃণমূল ওদের ভয় দেখিয়েছে, এবং এখন ওরা ওদের ভুল বুঝতে পেরেছে। তৃণমূল ক্ষমতায় থাকলেও ওদের জন্য কিছুই করেনি। ওরা যদি আমাদের দিকে আসতে চায়, তাহলে আমরা দরজা খুলে দিতে পারি।