নয়াদিল্লি: রাশিয়ার (Russia) থেকে সস্তা দরে (Cheap Rate) অপরিশোধিত তেল (Crude Oil) কিনছে ভারত (India)। কিন্তু এর মূল্য অদূর ভবিষ্যতে ভারতকে চোকাতে হতে পারে। মার্কিন নেতত্বাধীন আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা জোট ন্যাটোর (North Atlantic Treaty Organization – NATO) সদস্য হতে চাওয়ার কারণে গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনের (Ukraine) বিরুদ্ধে সামরিক আগ্রাসন (Military Aggression) শুরু করেছে রাশিয়া। সেই দ্বন্দ্ব (Conflict) এখনও চলছে। এদিকে, আমেরিকা (United States of America – USA) সহ ন্যাটোর সব সদস্য দেশ রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ (Imposing Sanctions) করেছে। পশ্চিমী দুনিয়ার নিষেধাজ্ঞার জেরে রাশিয়ার তেল রফতানি (Export) কমেছে। বাজার ধরতে রাশিয়া এখন সস্তা দরে অপরিশোধিত তেল কেনার টোপ দিয়েছে। আর সেই টোপে কেন্দ্র সরকার পা দিয়েছে। বিগত ছয় মাস হলো রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল আমদানি করছে ভারত।
২০২৩ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত হিসাব বলছে, উল্লিখিত সময়পর্বে প্রতিদিন গড়ে ১.৬৪ মিলিয়ন ব্যারেল ক্রুড অয়েল (Crude Oil) আমদানি করেছে ভারত। পরিসংখ্যান আরও বলছে, বর্তমানে যে তিন দেশের কাছ থেকে ভারত তেল কিনে থাকে, তাদের মধ্যে এখন রাশিয়া সবচেয়ে বেশি তেল পাঠাচ্ছে। অতীত দিন থেকেই রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। মাঝখানে দূরত্ব তৈরি হলেও, সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশ ফের কাছাকাছি এসেছে। রাশিয়ার কাছে থেকে ভারত এখন সস্তা দরে ক্রুড অয়েল কিনছে ঠিকই, তবে বিশেষজ্ঞ মহলের বক্তব্য, ভারত আগামী দিনে চাপে পড়বে। তার জেরে অপরিশোধিত তেল সরবরাহে ঘাটতি শুরু হলে, পক্ষাতে দেশে তেলের দাম বাড়বে, তার জের পোহাতে হবে আমজনতাকেই।
আন্তর্জাতিক বাজারে এখন অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল (Barrel) প্রতি গড়ে ৮৩.৯৬ মার্কিন ডলার। রাশিয়ার সঙ্গে দর কষাকষি করে তাদের থেকে ৬০ ডলার মূল্যে কেনা হচ্ছে। আপাত দৃষ্টিতে ভারতের খরচ বাঁচছে। কিন্তু মুশকিলের বিষয় হলো, আমেরিকা ও পশ্চিমী দুনিয়ার নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার ফলে রাশিয়ার থেকে মার্কিন ডলারের বিনিময়ে তেল কিনতে পারছে না ভারত। কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার (Narendra Modi Government) তথাকথিত মিত্রদেশ রাশিয়াকে ভারতীয় টাকার (Indian Rupees – INR) বিনিময়ে তেল বিক্রি করার ক্ষেত্রেও সম্পূর্ণভাবে রাজি করাতে পারেনি। তার জন্য রাশিয়ার থেকে আরও বেশি করে জিনিসপত্র আমদানি করতে হবে নয়াদিল্লিকে। তবেই মস্কো ভারতীয় রুপি গ্রহণ করবে।
সস্তায় অপরিশোধিত তেল আসছে ঠিকই। কিন্তু শোনা যাচ্ছে, ভারতের তৈল শোধনাগারের মালিক কোম্পানিগুলি আরব আমির শাহির (United Arab Emirates – UAE) মুদ্রা দিরহামের (Dirhams) বিনিময়ে রাশিয়া থেকে তেল কিনছে। দিরহাম বিনিময়যোগ্য মুদ্রা হলেও অর্থাৎ দিরহামের বিনিময়ে মার্কিন ডলার সংগ্রহ করা গেলেও, তা কি আদৌ কাজে লাগবে রাশিয়ার। ভারতের থেকে দিরহাম সংগ্রহ করতে করতে এক সময় দিরহামের ভাণ্ডার ভরে উঠবে রাশিয়ায়। তার বিনিময়ে রাশিয়া কোনওভাবেই মার্কিন ডলার সংগ্রহ করতে পারবে না। অন্যদিকে, আরব আমির শাহির সঙ্গে তাদের আরও ব্যবসা বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে আমির শাহি কতটা রাজি হবে, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে, কারণ সেদেশে রাশিয়ার জিনিসপত্রের তেমন চাহিদাও নেই, পাশাপাশি আমির শাহি নিজেই তেল রফতানি করে। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমী দুনিয়ার সঙ্গে তাদের সুস্পর্ক রয়েছে। ফলে বিশেষজ্ঞ মহলের বক্তব্য, নয়াদিল্লি এখন সস্তা দরে অপরিশোধিত তেল কিনছে ঠিকই, কিন্তু তার দাম মেটানোর জন্য কোনও বিকল্প ভাবনা নেই। তাই আগামী দিনে এর মূল্য দিতে হতে পারে ভারতকে। রাশিয়া দিরহামের বিনিময়ে বর্তমানে ভারতে তেল রফতানি করছে ঠিকই, কিন্তু তা কোনওভাবেই স্থায়ী নয়, অস্থায়ী সমঝোতা। আগামী দিনে সেই সমঝোতায় ইতি পড়তে পারে। আর রাশিয়া তেল সরবরাহ বন্ধ করলে, ভারতকে তখন ফের ওপেক (Organization of the Petroleum Exporting Countries – OPEC) গোষ্ঠীর উপর নির্ভরশীল হতে হবে এবং বেশি দামে ক্রুড অয়েল ক্রয় করতে হবে। এই অবস্থায় রাস্তা একটাই, রাশিয়া থেকে সস্তা দলে তেল আমদানি জারি রাখতে হলে ভারতীয় রুপিতে দাম নেওয়ার জন্য মস্কোকে (Morcow) রাজি করাতে হবে নয়াদিল্লিকে (New Delhi)। কিন্তু কেন্দ্রের মোদি সরকার এখনও পর্যন্ত পুতিন প্রশাসনকে (Putin Administration) এবিষয়ে রাজি করাতে পারেনি।