নয়াদিল্লি: ভারতে সাংবাদিকদের (Journalist) পরিস্থিতি খুব খারাপ। সাংবাদিকদের ভয়ঙ্কর ঝুঁকির মধ্য দিয়ে কাজ করতে হয়, এমন ৩১ দেশের মধ্য়ে ঠাঁই পেয়েছে আত্মনির্ভর ভারত (India)। বিশ্বে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার মাপকাঠিতে (Press Freedom Index) ১১ ধাপ নীচে নেমে গেল ‘৫৬ ইঞ্চির’ ভারত। ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১৬১ নম্বরে। বুধবার প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় এই তথ্য সামনে এসেছে। ২০২২ সালে মোদির ভারত ছিল ১৫০ নম্বরে। এক বছরের মধ্যেই সেখান থেকে একাদশ ধাপ অবনমন ঘটল দেশের। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (RSF) এদিন ২১-তম ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডমের মাপকাঠি প্রকাশ করে। তাতেই এই তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।
ভারতকে কেন এই মাপকাঠিতে ফেলা হয়েছে? তার ব্যাখ্যার শুরুতেই আরএসএফ বলেছে, সাংবাদিকদের উপর হিংসাত্মক হামলা, রাজনৈতিকভাবে সংবাদমাধ্যমের বিভাজন এবং সংবাদমাধ্যম মালিকানার লক্ষ্যকে গণ্য করা হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা অত্যন্ত সংকটে বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রে। তারা আরও বলেছে, বিজেপি (BJP) নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi) নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১৪ সাল থেকে সরকারে আছে। যারা হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রতিমূর্তি।
দেশের সংবাদমাধ্যমের মানচিত্রে বেশ কিছু গুরুতর সমস্যার কথা উল্লেখ করেছে সমীক্ষা রিপোর্ট। যার মধ্যে একটি হল, হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি সংবাদ কোম্পানির হাতেই দেশের সংবাদ পরিবেশন নির্ভর করে। এনিয়ে তারা টাইমস গ্রুপ, এইচ টি মিডিয়া লিমিটেড, দি হিন্দু গ্রুপ এবং নেটওয়ার্ক এইটটিন-এর নামোল্লেখ করেছে। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রভাষা হিন্দিতে প্রকাশিত মাত্র চারটি দৈনিক সংবাদপত্র ভারতের তিন-চতুর্থাংশ পাঠক ধরে রেখেছে। আঞ্চলিক ভাষার ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা একইরকম। দৃষ্টান্ত দিয়ে বলা হয়েছে, বাংলায় যেমন আনন্দবাজার, মারাঠিতে লোকমত, দক্ষিণ ভারতের মালয়লা মনোরমা।
পরিস্থিতি খারাপের কারণ হিসেবে সমীক্ষায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্যক্তিগত বন্ধু মুকেশ আম্বানির কথা। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ গ্রুপের কর্ণধার মুকেশ আম্বানির হাতে দেশের ৭০টি সংবাদমাধ্যম রয়েছে। যার দর্শক-পাঠক সংখ্যা নিদেনপক্ষে ৮০ কোটি। একইভাবে মোদির আর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু গৌতম আদানি ২০২২ সালের শেষ নাগাদ এনডিটিভি খরিদ করেন। যা সংবাদ জগতের বহুত্ববাদকে কবর দেওয়ার ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করে ওই সমীক্ষা।
শুধু তাই নয়, যারা ক্ষমতায় আছে আইনি প্যাঁচে তারা সাংবাদিকদের অধিকার খর্ব করছে। হেনস্তা করা হচ্ছে। রাষ্ট্রদ্রোহ, ফৌজদারি মানহানির মামলা করা হচ্ছে। ভারতের আইন সাধারণের রক্ষাকবচ, এটা শুধু তত্ত্বকথা। সরকারের সমালোচনা করলেই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, মানহানি, আদালত অবমাননা এবং দেশের নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক এই ধরনের মামলার বহর বাড়ছে। যাঁদের নামের পাশে দেশবিরোধী তকমা সেঁটে দেওয়া হচ্ছে, মন্তব্য সমীক্ষায়।
আরএসএফের সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে, এসব ছাড়াও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাংবাদিকতা এবং মিডিয়া এক্সিকিউটিভ পদে রয়েছেন উচ্চজাতের বা বর্ণের হিন্দু পুরুষ। যার ফলে সংবাদ পরিবেশনেও একচোখোমি ধরা পড়ে। তারা পরিসংখ্যান দিয়ে বলেছে, ভারতে ১৫ শতাংশেরও কম মহিলাকে সান্ধ্য টক শোয়ে অংশ নিতে দেখা যায়।
নিরাপত্তার সংকটের উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, ভারতে প্রতিবছর গড়ে তিন থেকে চারজন সাংবাদিক তাঁদের কাজের জন্য খুন হন। ভারতকে সেইজন্য তারা সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বের সবথেকে ভয়ঙ্কর দেশগুলির মধ্যে রেখেছে। আরও একটি দৃষ্টান্ত দিয়ে বলা হয়েছে, মহিলা সাংবাদিকদের অনলাইনে হেনস্তা-অপদস্থ করা হয়। কাশ্মীরে কীভাবে সাংবাদিকরা কাজ করবেন, তা ঠিক করে দেয় পুলিশ।
এইসব কিছুর নিরিখে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের থেকে দুধাপ এগিয়ে আছে ভারত। আবার পাকিস্তান অনেকটা এগিয়ে, ১৫০-তম স্থানে রয়েছে। এমনকী তালিবান শাসিত আফগানিস্তানেরর স্থানও ১৫২ নম্বরে। ভুটান ৯০-এ এবং শ্রীলঙ্কা ১৩৫ নম্বরে রয়েছে।