ইম্ফল: গ্রামের প্রায় হাজার দেড়েক মহিলা ঘিরে ধরায় প্রায় জনা ১২ জঙ্গিকে মুক্তি দিতে বাধ্য হল সেনাবাহিনী। ভারতীয় সেনার এই উপস্থিত বুদ্ধি ও মানবিক সিদ্ধান্তে এক বড়সড় অঘটনের হাত থেকে রক্ষা পেল হিংসা উপদ্রুত মণিপুরের ইম্ফল লাগোয়া ইথাম গ্রাম। এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনী জানিয়েছে, সাধারণ মানুষ পথ অবরোধ করায়, যার মধ্যে অধিকাংশই মহিলা, তাই তারা কোনও ঝুঁকি নিতে চায়নি। প্রায় একদিন ধরে সেনাবাহিনীকে ঘিরে রেখেছিলেন গ্রামের মহিলারা।
সেনা জানিয়েছে, নিরীহ মানুষের উপর গুলি চালানোর সিদ্ধান্ত না নিয়ে একটি বিরাট বিপদ এড়ানো হয়েছে। গ্রামের উত্তেজিত জনতার মন বুঝে জওয়ানরা গুলি না চালিয়ে গণহত্যার দায় এড়িয়েছেন। অবশেষে সেনারা ধৃত ১২ জঙ্গিকে স্থানীয় নেতাদের হাতে তুলে দেয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জঙ্গি অভিযানের নেতৃত্বদানকারী কমান্ডার ইনচার্জ পরিণত ও বুদ্ধিমানের মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর মানবিক মুখ তুলে ধরেছেন।
আরও পড়ুন: Bankura Rail Accident | বাঁকুড়ার ওন্দা স্টেশনে মালগাড়ি ধাক্কা মারল দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়িকে
এর আগে সেনা জওয়ানরা মেইতি জঙ্গি গোষ্ঠী কাঙ্গলেই ইয়াওল কান্না লুপ-এর (KYKL) ১২ জন জঙ্গিকে পাকড়াও করে। এই গোষ্ঠী বেশ কয়েকটি হামলার ঘটনায় জড়িত ছিল। ২০১৫ সালে ডোগরা ইউনিটের উপর হামলা করেছিল কেওয়াইকেএল গোষ্ঠী। গত শনিবার জঙ্গিদের হদিশ পেয়ে অভিযান চালায় বাহিনী। কিন্তু, তারপরই গ্রামের প্রায় ১২০০-১৫০০ বাসিন্দা জওয়ানদের ঘিরে ধরে। জওয়ানরা তাঁদের উপর গুলি না চালিয়ে অপেক্ষায় থাকে। বাসিন্দারাও সেনাবাহিনীকে ওই জঙ্গিদের ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানাতে থাকে। রাস্তা আটকে বসে থাকে গ্রামবাসী।
প্রসঙ্গত, মণিপুরের (Manipur) পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ডাকা সর্বদল বৈঠকে বিরোধীদের (All Party Meet) প্রশ্নবাণের মুখে পড়ে কেন্দ্রীয় সরকার। শনিবার আয়োজিত বৈঠকে মণিপুরে শান্তি ফেরাতে এক সপ্তাহের মধ্যে সব দলের প্রতিনিধিদের পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূলের এই প্রস্তাবকে একযোগে সমর্থন জানিয়েছে কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধীরা। শুক্রবার পার্টনার মেগা বৈঠকের পর শনিবার বিরোধী ঐক্য দেখা গেল মণিপুর নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ডাকা সর্বদল বৈঠকে। বিরোধীদের চাপে একপ্রকার বাধ্য হয়েই প্রতিনিধি দল পাঠানোর বিষয়টা ভেবে দেখার আশ্বাস দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)।
অমিত শাহ মণিপুর সফরে গিয়েছিলেন। সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেছেন। কুকি এবং মেইতেই প্রধান এলাকা ঘুরে দেখেছেন। কিন্তু আলোচনার পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি। তারপর জ্বলছে মণিপুর। গত ৩ মে থেকে জ্বলছে মণিপুর। জাতিগত হিংসায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। ঘরছাড়া অবস্থায় ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নামানো হয়েছে সেনা। মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে সর্বদল বৈঠক ডাকার জন্য গত এক মাসে বিরোধীরা বার বার দাবি জানিয়েছেন। বিরোধীদের আক্রমণের মুখে পড়ে শনিবার সর্বদল বৈঠক ডাকেন অমিত শাহ (Amit Shah)। সেই বৈঠকে তৃণমূল, কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি, ডিএমকে-সহ বেশ কয়েকটি দল অংশ নেয়।
কংগ্রেস, এসপি, আরজেডি মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের ইস্তফা দাবি করে। তাঁদের দাবি, বীরেন সিং মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকলে, সে রাজ্যে শান্তি ফেরানোর সম্ভব নয়। মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নীরব কেন? সেই প্রশ্ন তোলেন বিরোধী নেতারা।প্রধানমন্ত্রীর উচিত মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীকে বরখাস্ত করা। ডিএমকে আবার সেখানে একটি মহিলা কমিশন তৈরি করার দাবি করেছে। কংগ্রেসের দাবি, পেশিশক্তি কম প্রয়োগ করা উচিত। তাতে শান্তি ফেরানো সম্ভব নয়, পরিস্থিতি হাতের চলে যাবে। মানুষের মনে বিশ্বাস ফিরবে এমন কাজ করতে হবে। বিরোধীরা সে রাজ্যে সর্বদলীয় প্রতিনিধি পাঠানোর দাবি জানান। আর শেষমেশ সেই দাবির কথা ভেবে দেখারও আশ্বাস দেন অমিত শাহ। বিজেপির তরফে মণিপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সম্বিত পাত্র জানান, মোদির নির্দেশেই মণিপুরে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সমস্ত রকম প্রয়াস নেওয়া হচ্ছে কেন্দ্রের তরফে।