কান থো (ভিয়েতনাম): ছেলেবেলায় ডং ভান কানহ গোল গোল চোখ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকত। আকাশ জুড়ে তখন ঘন কালো ধোঁয়া। আগুনের শিখায় সিঁদুরে মেঘের মতো আকাশে লালচে আভা। ভিয়েতনামের (Vietnam) মেকং (Mekong) বদ্বীপের ছোট্ট সেই শিশু ধানখেতের (Rice Field) পাশে বসে দেখত তাদের জমি জ্বলছে। বাড়ির লোকদের জিজ্ঞাসা করলে জানতে পারত, আবার শস্য (Rice Crop) বোনা হবে। তাই খড় (Straw) পুড়িয়ে (Greenhouse Gases) ফেলা হচ্ছে। আনন্দে-খুশিতে মন ভরে উঠত তার। কিন্তু, তার শিশুমন জানত না এর ভয়ঙ্কর প্রভাবের কথা।
ধান। এশিয়া (Asia) মহাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য। কিন্তু, এই প্রধান খাদ্যশস্যকেই বিশ্ব পরিবেশের ১০ শতাংশ মিথেন (Methane Gas) গ্যাস দূষণের জন্য (Pollution) কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়ে থাকে। দুদশক ধরে এই গ্যাসের দূষণ ৮০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যেমনটা হয়েছে কার্বন ডাইঅক্সাইডের ক্ষেত্রে। জলসেচের কারণে ধানখেত জলে ডুবে থাকায় ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে মিথেন গ্যাসের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পায়। এরপর তো রইল ধান তোলার পর খড় পোড়ানোর সমস্যা।
আরও পড়ুন: Coronavirus | দেশে অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা ৩৫ হাজার পার, আজ থেকে শুরু মক ড্রিল
বিজ্ঞানীরা বলেন, দূষণ রোধ করার লড়াইয়ে ধান উৎপাদনকে উপেক্ষা করলে চলবে না। তাহলে কি দূষণ নিয়ন্ত্রণে মুখের দুটো ভাতও কেড়ে নেওয়া হবে? না, তা অবশ্য নয়। কিন্তু বিকল্প কী, ধান উৎপাদনকারী দেশগুলির সামনে সেই বিকল্প তুলে ধরেছে ভিয়েতনাম। মেকংয়ের সেই ছোট্ট কানহ এখন ৩৯ বছরের হাড্ডাকাড্ডা যুবক। পারিবারিক পেশা হিসেবে কৃষিকেই সে বেছে নিয়েছে। সে কিন্তু আর বাপ-ঠাকুরদার মতো পচে যাওয়ার জন্য খড় ফেলে রাখে না। তাতে আগুনও ধরায় না।
কালো ধোঁয়ায় যখন চোখমুখ অন্ধকার হয়ে যেত। দমবন্ধ হয়ে আসত। শ্বাসকষ্টে প্রায় জ্ঞান হারানোর দশা হতো, তখন থেকেই সে ঠিক করে নেয় এর বিকল্প ভাবতে হবে। তাই ধান উঠে যাওয়ার পর সে খড় দিয়ে জৈব সার (Organic Fertilizer) তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। খড়ের মধ্যে মাশরুম (Mushrooms) চাষ শুরু করে। এতে শুধু পরিবেশ রক্ষা পায় তা-ই নয়, পরিবারেরও উপরি রোজগার হয়। তার কথায়, গোবর ও খড় দিয়ে জৈব সার বানিয়ে ধানচাষে পরিবেশ ও খরচ দুই-ই বাঁচে।
ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইন্সটিটিউট (IRRI) ভিয়েতনাম এবং এশীয় অঞ্চলে ধানচাষের ফলে পরিবেশ দূষণ রোধে এই নয়া কৌশল ও প্রযুক্তির প্রয়োগ করছে। এর ফলে প্রায় ১০০টি দেশ গ্লোবাল মিথেন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে বছর ২ আগেই। তাতে ২০৩০ সালের মধ্যে নাড়াপোড়াজনিত দূষণ ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনার বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে তারা। এই চুক্তিতে ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনাম স্বাক্ষর করলেও দুই বৃহৎ ধান উৎপাদনকারী দেশ চীন এবং ভারত এতে সই করেনি।