২৭ জানুয়ারি। ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেন? তা জানতে হলে ইতিহাসের পাতাতেই উঁকি দিতে হবে। আজ থেকে ৭৮ বছর আগেকার কথা। ১৯৪৫ সালের ২৭ জানুয়ারি এই দিনেই সোভিয়েত রাশিয়ার লাল ফৌজ (Soviet Red Army) অসউইজ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের (Auschwitz Concentration Camp) বিভীষিকাময় বন্দিদশা থেকে মুক্ত করেছিল ৭,৫০০ বন্দিদের। সেই বন্দিরা আজ নেই ঠিকই, কিন্তু কুখ্যাত অসউইজ ক্যাম্পের নরসংহারের (Genocide) কাহিনি শুনলে আজও মানুষ শিউরে ওঠেন। মানবসভ্যতার ইতিহাসে এই ঘটনা হলকাস্ট (Holocaust) নামে পরিচিত।
আরও পড়ুন: Khelo India Youth Games: দু’দিন পরেই খেলো ইন্ডিয়া ইয়ুথ গেমস, কোন কোন ইভেন্টে থাকছে নজর?
১৯৩৯ সালে পোল্যান্ড দখল করে নেয় নাৎসি জার্মানি (Nazi Germany)। এরপর, ১৯৪০ সালে খোলা হয় অসউইজ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প। সেসময় এটি ছিল পোল্যান্ডের সবচেয়ে বড় কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প। মূলত রাজনৈতিক বন্দি শিবির হিসেবে এই কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প খোলা হয়েছিল। এখানে নাৎসি জার্মানির শত্রু (Enemy of Nazi Germany) এবং ইহুদিদের (Jewish) উপর অকথ্য অত্যাচার চালানো হত। অমানুষিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বন্দিদের অনেকেই মৃত্যু চাইতেন। এই কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে সোন্ডারকমান্ডো (Sonderkommandos) নামে একটি বিশেষ ইউনিট ছিল। এই ইউনিট ওই কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের বন্দিদের নিয়েই তৈরি করা হয়েছিল। তাদের হাতে দায়িত্ব ছিল, সহবন্দিদের গ্যাস চেম্বারে নিয়ে যাওয়া, তারপর মৃত বন্দিদের লাশ (Dead Body) বের করে এনে তাদের মাথার চুল ছাঁটার পর হাড় (Bone), দাঁত (Teeth), জামাকাপড় (Dress) আলাদা করে ক্রিমেটোরিয়া ( Crematoria) মেশিনে পুরতে হত। না চাইতেও এই কাজ করার জন্য তাদের বাধ্য করা হত। সোন্ডারকমান্ডো হিসেবে তাদের বাছাই করার একটাই কারণ ছিল, যেহেতু অন্যান্য বন্দিদের তুলনায় তাদের শারীরিক শক্তি বেশি ছিল। এখানে উল্লেখ্য, মৃত বন্দিদের হাড় দিয়ে বোতাম ও চিরুনি তৈরি হত, তাদের মাথার চুল ব্যবহার হত অন্যান্য উপকরণ তৈরি করতে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (World Was II) মিত্রশক্তির হাতে নাৎসি জার্মানি পরাজিত হয়। এরপর জার্মানির দখলমুক্ত হয় পোল্যান্ড। সোভিয়েত রাশিয়ার লাল ফৌজ সাড়ে সাত হাজার হতভাগা বন্দিদের মুক্তি দিলেও, প্রায় ১১ লক্ষ নিরীহ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল ওই পাঁচ বছরের ব্যবধানে। মানবসভ্যতার ইতিহাসে এই নরসংহারকে অন্যতম নিন্দনীয় ঘটনা হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। ১৯৯৩ সালে এই নিয়ে একটি সিনেমাও তৈরি হয় – সিন্ডলার’স লিস্ট (Schindler’s List)। গ্লোব্লাল স্টার লিয়াম নিসোঁ (Liam Nesson) ও বেন কিংগসলে (Ben Kigsley)–এর মতো অভিনেতারা তাতে অভিনয় করেছিলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভয়াবহতার কথা অনেকেই জানেন। সেইসঙ্গে ইতিহাসের গর্ভে অসউইজ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের বন্দিদশার মতো অনেক বিভীষিকাময় কাহিনি লুকিয়ে রয়েছে, যা বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের কাছে অজানা কিংবা হারিয়ে যেতে বসেছে। জাতিকেন্দ্রিক রাষ্ট্রবাদ (Ethnocentric Nationalism) যে কতটা ভয়ানক হতে পারে, তার অন্যতম উদাহরণ এই ঘটনা। বিশ্বযুদ্ধ এবং জাতিবিদ্বেষ যে কতটা ভয়ঙ্কর ও উগ্র আকার নিতে পারে, তার অন্যতম নিন্দনীয় উদাহরণ এটি। তাই আমাদের সবারই উচিত, ইতিহাসের সবচেয়ে বিভীষিকাময় ঘটনার ইতিহাসকে পরবর্তী প্রজন্মকে জানানো ও বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া – বিদ্বেষ ও আগ্রাসন কতটা ভয়াবহ হতে পারে।