বালি: প্রকাশ্যে ঝগড়া চিনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং (Chinese President Xi Jinping) এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো (Canadian Prime Minister Justin Trudeau)-র মধ্যে। পুরো ঘটনায় বন্দি হয়েছে ক্যামেরায়। ইন্দোনেশিয়ার (Indonesia) বালিতে (Bali) অনুষ্ঠিত জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে (G20 summit) বুধবার যোগ দিতে এসেছিলেন দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। সেখানেই তপ্ত বাদানুবাদের মধ্যে জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। জিনপিনের অভিযোগ, ট্রুডোর সঙ্গে তাঁর যা কথা হয়েছে, তা সবই কানাডার সংবাদ মাধ্যমে ফাঁস হয়ে গিয়েছে।
জি২০ বৈঠকের ফাঁকে চিনের প্রেসিডেন্ট এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রীর এই কথা কাটাকাটির ভিডিয়ো টুইট করেছেন কানাডার সিটিভি ন্যাশনাল নিউজ (CTV National News)-এর এক মহিলা সাংবাদিক। ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, কানাডার সংবাদমাধ্যমে (Canadian Media) আলোচনার বক্তব্য ফাঁস হওয়ায় জিনপিং ভীষণ অসন্তুষ্ট। রীতিমতো বিরক্তি প্রকাশ করে চিনা প্রেসিডেন্টকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘গতকাল যা আলোচনা হয়েছে, সংবাদ মাধ্যমে ফাঁস হয়ে গিয়েছে। এটা ঠিক নয়… এইভাবে আমাদের মধ্যে কথা হয়নি।’ চিনা প্রেসিডেন্ট জিনপিং দোভাষীর (Interpreter) সাহায্যে কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর উদ্দেশে এই মন্তব্যও ছুড়ে দেন যে তাঁর মধ্যে আন্তরিকতার অভাব রয়েছে।
জিনপিংয়ের অভিযোগের প্রত্যুত্তরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দেন, কানাডায় অবাধ, মুক্ত ও খোলামেলা কথা হয় এবং এমন কিছু অবশ্যই থাকবে, যা নিয়ে দুই দেশ একমত হবে না। পাশাপাশি ট্রুডো এটাও জানিয়ে দিয়েছেন, “তবে আমরা সাহায্য করা চালিয়ে যাব… গঠনমূলকভাবে আমরা একসঙ্গে কাজ করে যাবো, তবে এমন কিছু থাকবে যা নিয়ে আমাদের মধ্যে দ্বিমত থাকবে।”
The Cdn Pool cam captured a tough talk between Chinese President Xi & PM Trudeau at the G20 today. In it, Xi express his displeasure that everything discussed yesterday “has been leaked to the paper(s), that’s not appropriate… & that’s not the way the conversation was conducted” pic.twitter.com/Hres3vwf4Q
— Annie Bergeron-Oliver (@AnnieClaireBO) November 16, 2022
ভিডিয়োটির শেষে চিনের প্রেসিডেন্টকে বলতে শোনা গিয়েছে, “চলুন আগে সেই পরিস্থি্তি তৈরি করি।” উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে ইতি টানার পর দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান করমর্দনও সারেন।
উল্লেখ্য, জি২০ বৈঠকে চিনা হস্তক্ষেপ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী। গত মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর একটি বিবৃতিতে দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে উত্তর কোরিয়া (North Korea) এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন (Russian invasion Ukraine) নিয়ে আলোচনা হয়, সে সময়ই ট্রুডো কানাডায় হস্তক্ষেপমূলক কার্যকলাপ নিয়ে জিনপিংয়ের সামনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে কানাডার একটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, কানাডার গোয়েন্দা আধিকারিকরা ট্রুডোকে সতর্ক করেছেন। সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে সে দেশের নির্বাচনে চিন হস্তক্ষেপ করেছিল, এবার বিদেশি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে একটি বিশাল প্রচারের মাধ্যমে কানাডাকে নিশানা করছে চিন। সাম্প্রতিক সময়ে চিন এবং কানাডার মধ্যে সম্পর্ক এমনতেই তলানিতে। ২০১৮ সালে মার্কিন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জেরে চিনের হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (Huawei Technologies)-এর কার্যনির্বাহী মেং ওয়ানঝু (Meng Wanzhou)-কে আটক করেছিল কানাডা কর্তৃপক্ষ। এর পরপরই চরবৃত্তির অভিযোগে দুই কানাডিয়ান ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছিল চিন। যদিও ওই তিনজনকেই দুই দেশ ছেড়ে দিয়েছে, তবে দুই দেশের মধ্যে তিক্ত রাজনৈতিক সম্পর্কের জের এখনও রয়ে গিয়েছে।