ভাঙড়: ভাঙড়ে (Bhangar) রাজ্যপাল। অশান্ত এলাকা পরিদর্শনে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস (C. V. Ananda Bose Governor of West Bengal)। কথা বলবেন এলাকাবাসীর সঙ্গে। বিজয়গঞ্জ বাজার, যেখানে বৃহস্পতিবার গোলাগুলি চলে, সেখানে নেমে পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে কথা বললেন তিনি। হিংসা উপদ্রুত ভাঙড়ে রাজ্যপাল মনোনয়ন পর্বের প্রথম দিন থেকেই রাজ্যের হিংসা শুরু হয়েছে।
গত তিনদিন ধরে কার্যত আগুন জ্বলছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে। মনোনয়নের শেষ দিনে রণক্ষেত্র চেহারা নেয় ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজার (Bhangar Bijaygang Bazar)। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মুড়ি মুড়কির মতো পড়ে বোমা, চলে গুলিও। দুষ্কৃতীদের গুলিতে মৃত্যু হয় দুই আইএসএফ কর্মীর। বিরোধীদের অভিযোগ পুলিশ রাজ্য সরকারের দলদাসে পরিণত হয়েছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশন সব দেখেও ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে রয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়নপর্বেই রাজ্যজুড়ে সন্ত্রাস ও রক্তক্ষয় দেখে অসন্তুষ্ট রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতা বিমানবন্দরে তাঁকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রাজ্যপাল বলেন, সময় মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনও কথা নয়, কাজ হবে এবার। যেমন বলা তেমন কাজ শুক্রবার সকালে ভাঙড়ের অশান্ত এলাকা পরিদর্শনে যান রাজ্যপাল। যে সব রাস্তায় রণক্ষেত্রর আকার নিয়ে ছিল সে সব জায়গা ঘুরে দেখেন রাজ্যপাল। বিজয়গঞ্জ বাজার, যেখানে বৃহস্পতিবার গোলাগুলি চলে, সেখানে নেমে পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে কথা বললেন তিনি।
রাজ্যের পঞ্চায়েতের মনোনয়ন ঘিরে যে রক্তক্ষয়ী অশান্তি শুরু হয়েছে তাঁর বিবৃতিতে রাজ্যপাল বলেন, বাংলায় প্রাক-নির্বাচনে মৃতের সংখ্যা বা শুনে মর্মাহত। এটা বিস্তৃষ্ণাজনক যে মিডিয়াও গুন্ডাদের দ্বারা আক্রান্ত। নির্বাচনে বিজয় মৃতদের বর্ণনার উপর নয়, ভোট গণনার উপর নির্ভর করা উচিত। গুন্ডা মাসলম্যান দেন এবং অপরাধ জগতের লুসিফার, ম্যামন এবং বেলাজবকে শাসন করতে দেওয়া হবে না। যখন গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ আক্রমণের সম্মুখীন হয় থাকে তখন গণতন্ত্র আক্রমণের মুখে। মানে সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এর মানে আমাদের সংবিধান আক্রমণের মুখে। এর মানে নতুন প্রজন্ম আক্রমণের মুখে। শয়তাদের এই খেলা শেষ হওয়া উচিত, শেষ হবে। শেষের শুরুটা হবে পশ্চিমবঙ্গে। গণতন্ত্রে জনগণই প্রভু। নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা তাদের অবিচ্ছেদ্য অধিকার। গণতান্ত্রিক নির্বাচনে সার কোনো স্থান নেই। মানুষের শান্তি ও সম্প্রীতির অধিকার আছে।
যে কোনো মূল্যে সহিংসতা নির্মূল করা হবে এবং হিংসা এই পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রথম বলি হবে। কাউকেই, তারা যতই উচ্চ ও পরাক্রমশালী বলে নিজেদের মনে করুক না কেন, আইন হাতে তুলে নিতে দেওয়া হবে না। যখন স্থানীয় সংস্থাগুলির নির্বাচন হতে চলেছে তখন বাংলার সমাজজীবনে স্বাধীনতা ও শান্তি মানুষের অধিকার রক্ষায় আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দুর্বৃত্ত এবং যারা পেশী শক্তি প্রয়োগ করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে এবং কারাগারের আড়ালে তাদের উপযুক্ত স্থান নির্ধারণ করা হবে। বাংলায় স্থানীয় সংস্থাগুনি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের এক নতুন যুগের সাক্ষী হতে চলেছে। মাননীয় কলকাতা হাইকোর্ট দ্ব্যর্থহীন ভাষায় সংশ্লিষ্ট সকলকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে এবং ভারতের সংবিধান অনুযায়ী তাদের কর্তব্য পালনের নির্দেশ জারি করেছে। আদালতের রায় অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করা হবে। এই দেশের ফেডারেলিজমের আত্মা সম্প্রীতি ও গঠনমূলক সহযোগিতার প্রতি সম্মান জনিয়ে, আমি সংশ্লিষ্ট সকলকে একত্রিত হওয়ার জন্য এবং বিঘ্ন সৃষ্টিকারী শক্তিকে দমন করতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, হিংসা পরিহার ও শান্তিকাল সুনিশ্চিত করে সাধারণ মানুষের মর্যাদা ও পবিত্রতাকে সমুন্নত রাখতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। কোনো অবস্থাতেই গণতন্ত্রকে যুদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া হবে না। অপশক্তির বিরুদ্ধে অধিকার রক্ষার এই যুদ্ধে, অধিকারের জয় হওয়া উচিত। অধিকারের জয় হবে।