বুধবার নবনির্বাচিত কংগ্রেস সভাপতি ৮০ বছর বয়সি মল্লিকার্জুন খড়্গে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নিলেন। বিদায়ী সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী খড়্গের হাতে দায়িত্ব তুলে দিলেন। ২৪ আকবর রোডে কংগ্রেসের সদর দফতরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সোনিয়া গান্ধী খড়্গেকে শপথবাক্য পাঠ করালেন। এদিন শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দলীয় সাংসদ, পদাধিকারী, এআইসিসি সদস্য, ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিরাও।
প্রায় আড়াই দশক পরে এই প্রথম গান্ধী পরিবারের বাইরের কেউ দলীয় সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিলেন। দায়িত্ব গ্রহণের পরে মল্লিকার্জুন খড়্গে কার্যত আবেগাপ্লুত ছিলেন। খড়্গে বলেন, আমার বাবাও কংগ্রেস কর্মী ছিলেন। একজন সাধারণ কংগ্রেস কর্মীর সন্তানের হাতে দল সভাপতির দায়িত্বভার তুলে দেওয়ায় সকলকে ধন্যবাদ।
সোনিয়া ছাড়া রাহুল গান্ধী এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও হাজির ছিলেন এদিনের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে। এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্যই রাহুল গান্ধী দিল্লি এসেছেন। দীপাবলি এবং দেওয়ালির জন্য তিনদিন ভারত জোড়ো যাত্রা বন্ধ রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে আবার যাত্রা শুরু হবে বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর।
এদিন খড়্গেকে শপথবাক্য পাঠ করিয়ে সোনিয়া বলেন, ২৩ বছরের কাছাকাছি দলীয় সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। যথাযথভাবে সেই দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেছি। এবার কাঁধ থেকে দায়িত্বের ভার নামল। আজ খুব হাল্কা লাগছে। তিনি আরও বলেন, সারা দেশে গণতন্ত্র এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। এই পরিস্থিতিতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
লোকসভার বিরোধী দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীর মন্তব্য, কংগ্রেস দেখিয়ে দিল দলে গণতন্ত্র কাকে বলে। বিজেপির সভাপতি নির্বাচন কখনও ভোটের মাধ্যমে হয় না। নাগপুর কিংবা প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের নির্দেশে বিজেপি চলে। কংগ্রেস দলটা সেভাবে চলে না। এর থেকে অনেক দলেরই শিক্ষা নেওয়ার আছে।
এদিন কংগ্রেসের নতুন সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যরা। একইসঙ্গে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক এবং কর্মকর্তারা।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর কংগ্রেসের সভাপতি পদে নির্বাচন হয়। প্রার্থী ছিলেন মল্লিকার্জুন ছাড়াও দক্ষিণ ভারতের আর এক সাংসদ শশী থারুর। মল্লিকার্জুন অবশ্য বিপুল ভোটে জয়ী হন। তিনি সাত হাজারেরও বেশি ভোট পেয়েছেন। থারুর পেয়েছেন হাজারের কিছু বেশি ভোট।
আরও পড়ুন: Arvind Kejriwal: টাকার উপর লক্ষ্মী-গণেশের ছবি ছাপার আর্জি কেজরিওয়ালের
কংগ্রেসের অন্দরে অনেকদিন ধরেই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি উঠছিল। দলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর দাবি ছিল, গান্ধী পরিবারের বাইরে কেউ সভাপতি হন। ওই বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী জি ২৩ বলে পরিচিতি লাভ করে। শশী থারুর সেই গোষ্ঠীরই নেতা। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে ভরাডুবির পরেই রাহুল গান্ধী সভাপতির পদ ছেড়ে দেন। তিনি জানিয়ে দেন, গান্ধী পরিবারের কেউ সভাপতি পদে থাকবেন না। শীর্ষ নেতৃত্ব বারবার বোঝালেও রাহুল অনড় থাকেন। ২০২০ সালে জি ২৩ গোষ্ঠীর নেতারা নির্বাচন চেয়ে সোনিয়াকে চিঠি দেন। গত মে মাসে রাজস্থানের উদয়পুরে কংগ্রেসের চিন্তন শিবির হয়। সেখানেই স্থির হয়, শীঘ্রই সভাপতি পদে নির্বাচন হবে। সেই মতোই কংগ্রেসে সাংগঠনিক নির্বাচিনের বাদ্যি বেজে ওঠে। ১৭ অক্টোবর ভোট হবে বলে ঘোষণা করে দেওয়া হয়। ভোট হয় নির্বিঘ্নেই। ফল প্রকাশ হয় ১৯ অক্টোবর।