ডায়মন্ডহারবার: সকালে চোপড়া এবং দুপুরে ভাঙড়। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষদিনে বিকেল পর্যন্ত গুলিতে ২ জনের মৃত্যু ঘটনা ঘটেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কোনও ক্ষেত্রেই তৃণমূল কংগ্রেস দায়ী নয়। তিনি বলেন, প্রায় ৭৩-৭৪ হাজার বুথ, সেখানে মাত্র তিনটে গন্ডগোল হয়েছে। তাও সেটা নিজেদের স্থানীয় ব্যাপারে। তৃণমূল কোনওভাবেই এতে জড়িত নয়। ২০০৩-এ সিপিএমের আমলে পঞ্চায়েত ভোটের দিন সম্ভবত ৩৬ জন মারা গিয়েছিল।
২০১৩ সালে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পান্ডে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে এসেছিলেন। ৩৯ জন মারা গিয়েছিলেন। ইসলামপুর ও চোপড়ায় যা ঘটেছে, তার সঙ্গে পার্টি কোনওভাবেই জড়িত নয়। অনেককেই এবার পার্টি টিকিট দেয়নি। তাদের কার্যকলাপে সন্তুষ্ট নয় পার্টি। যারা মানুষের কাজ ভালো করে করেনি। ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে আমরা প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা দেখে এবার টিকিট দিয়েছি। ইসলামপুর-চোপড়ার যে ঘটনাটা নিজেদের মধ্যে, এর ভিতরে পার্টি জড়িত নয়। যারা এসব করছে, ঠিক করছে না। পুলিশকে বলে দিয়েছি, স্ট্রং অ্যাকশন নেওয়ার জন্য।
আরও পড়ুন: Panchayat Election 2023 | ভাঙড়ে তৃণমূলের গুলি-বোমা, নিহত আইএসএফ কর্মী, দাবি দলের
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আরও ভাঙড়ের ঘটনা, যারা নতুন জিতেছে, তারাই করেছে পরশুদিন প্রথম। আইএসএফের নাম না করে মমতার বক্তব্য, মুসলিমরা আমার ভাই। কিন্তু, তাদের বিপথে পরিচালিত করে, সাম্প্রদায়িক স্লোগান দিয়ে, ওখানে ভাঙচুর, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে মমতা বলেন। তিনি বলেন, গতকাল ওখানে একটা মারামারি হয়েছিল। যেটা সত্য তা আমি বলব। তবে আজ এখনও পর্যন্ত সেখানে কী হয়েছে আমি জানি না। আমি তো রাস্তায়। প্রশাসনকে আমি বলেছি, কঠোর পদক্ষেপ নিতে।
বিজেপি শাসিত রাজ্যের দৃষ্টান্ত দিয়ে তিনি আরও বলেন, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে আপনারা দেখেছেন ৯০ শতাংশ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করতে দেওয়া হয় না। ত্রিপুরার রেজাল্ট দিয়ে দেখুন কনটেস্ট করতেই দেওয়া হয় না ৯০ শতাংশ আসনে। পকসো মামলাতেও গ্রেফতার হয় না। বিধানসভা ভোটের সময় হিংসার ঘটনায় আমাদের সব ছেলেগুলোকে গ্রেফতার করছে। ১৫৫টা কেন্দ্রীয় টিম পাঠিয়েছে। অথচ কুস্তিগিরদের নিয়ে পকসো কেস কিন্তু দেওয়া হয়নি। কোথাও মারছে, কোথাও কাটছে। কোথাও কোর্টে গিয়ে খুন করে দিয়ে আসছে। দানবের রাজত্ব চলছে।
মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি, কংগ্রেস কিংবা সিপিএমের নাম মুখে উচ্চারণ না করে বলেন, ওদের নাম করতে আমাদের ঘৃণা হয়। আমার লজ্জা হয়। যারা একদিন মানুষ কেটে কেটে জলে ভাসিয়ে দিত। নন্দীগ্রামের অনেক মানুষ আজও হয়তো এখানে-ওখানে খুঁজলে ডেডবডি পাওয়া যাবে। হলদি নদীতে ভাসিয়ে দিত। হাত কাটত, পা কাটত, মুণ্ডু কাটত। কাউকে ভোটে মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হত না। ১০০-য় ১০০ ভোট করত। আজকে তারা গলা উঁচিয়ে বড় বড় কথা বলছে।
বক্তব্যের শেষে বিরোধীদের হুঁশিয়ারির সুরে তৃণমূল নেত্রী বলেন, আর এবারে আপনারা বেশি বাড়াবাড়ি করছেন। কথায় কথায় বাংলাকে বদনাম করার জন্য। ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ করে দিয়েছেন। রাস্তা তৈরি টাকা বন্ধ করে দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় তহবিলে টাকা বন্ধ করে দিয়েছেন। আর এখানে বড় বড় কথা বলছেন। তামিলনাড়ু ও দিল্লির মতো বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির মন্ত্রীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আর কত গ্রেফতার করলে এদের জেলগুলো ভর্তি হবে বলতে পারেন? যদি মনে করেন কোনও কিছু একতরফা হবে, তাহলে বলছি মানুষই এর জবাব দেবে, সবশেষে বলেন মুখ্যমন্ত্রী।