Placeholder canvas
কলকাতা বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪ |
K:T:V Clock

Placeholder canvas
Fourth Pillar | জ্বলছে চিত্রাঙ্গদার মণিপুর
কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক Published By:  মনোজিৎ মালাকার
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৯ মে, ২০২৩, ১০:২০:০০ পিএম
  • / ৫৯৫ বার খবরটি পড়া হয়েছে
  • মনোজিৎ মালাকার

সমস্ত মায়াজাল পাশে রেখে মণিপুর রাজেন্দ্রনন্দিনী মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন অর্জুনের। বলেছিলেন, 

আমিচিত্রাঙ্গদা, আমিরাজেন্দ্রনন্দিনী।

নহিদেবী, নহিসামান্যানারী।পূজাকরিমোরেরাখিবেঊর্ধ্বেসেনহিনহি,

হেলাকরিমোরেরাখিবেপিছেসেনহিনহি।

যদিপার্শ্বেরাখমোরেসংকটেসম্পদে, সম্মতিদাওযদিকঠিনব্রতেসহায়হতে,

পাবেতবেতুমিচিনিতেমোরে।আজশুধুকরিনিবেদন–

আমিচিত্রাঙ্গদারাজেন্দ্রনন্দিনী॥

সেই চিত্রাঙ্গদার মণিপুর জ্বলছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সরকারি হিসেবেই ৬০ জন মারা গেছেন, চার্চ ভেঙেছে, ভেঙেছে দেবালয়, মানুষের ঘর জ্বলছে, কমবেশি ২০ হাজার মানুষ পালিয়ে জঙ্গলে লুকিয়ে আছেন, ৩৫৫ ধারা জারি হয়েছে, সেনাবাহিনী নেমেছে, কিন্তু অশান্তি কমেনি, গ্রাম কে গ্রাম জ্বলছে, কালো ধোঁয়ার কুন্ডলি দেখে সেনা পৌঁছনোর আগেই পুড়ে ছাই মানুষের শেষ সম্বল। অমিত শাহ বাংলায় আসছেন, আশ্চর্য রবি ঠাকুর নিয়ে উনিও নাকি কিছু বলবেন। আর দেশের চায়ওলা কাম চওকিদার কর্ণাটকে নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন, নির্বাচনী প্রচার শেষ হয়েছে কিন্তু ওনার মুখ দিয়ে একটা শব্দ, হ্যাঁ একটা শব্দও শোনা যায়নি। অবশ্য এটা নতুন কিছু নয়, সময় বুঝে উনি বোবার অভিনয় করেন, এ আমরা আগেও দেখেছি। কর্নাটকে নির্বাচনী প্রচার করার সময় কর্ণাটক সরকার কী করেছে তার ফিরিস্তি না দিয়ে কেবল ডবল ইঞ্জিনের সরকারের কথা বলে গেলেন, রাজ্যে আর কেন্দ্রে বিজেপির সরকার থাকলে বিকাশের গঙ্গা বয়ে যাবে, এসব বললেন। ২০২২-এ মনিপুরে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে ঠিক এই বাওয়ালই দিয়েছিলেন আমাদের চওকিদার। কী বলেছিলেন শুনে নিন। https://www.youtube.com/live/Ye45m5GH8H4?feature=share (32:33 – 33:26)

বলেছিলেন মণিপুরেও সুস্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা চাই, তাহলে সেই হিংসার ইতিহাস আর ফিরে আসবে না, উন্নয়ন হবে, বিকাশ হবে। এখন মণিপুর জ্বলছে, তীব্র ধর্মীয় মেরুকরণের ফলাফল হাতের সামনে, কিন্তু নরেন্দ্রভাই দামোদর দাস মোদি আপাতত মৌনিবাবা। মণিপুরের এই হিংসা কেন? আসুন সেই হিংসার কারণগুলো একে একে দেখে নেওয়া যাক। প্রথম কারণ এক অযোগ্য মুখ্যমন্ত্রী এই এন বীরেন্দ্র সিং। আগে ফুটবলার ছিলেন, তারপর ডেমক্রাটিক রেভেলিউশনারি পিপলস পার্টির হয়ে এমএলএ, কিছুদিন পরেই কংগ্রেসে যোগ দিয়ে মন্ত্রী হলেন, তারপর বিজেপি এবং আপাতত মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী। গত ৩০ এপ্রিল উনি এক ওপেন জিম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যাবার আগেই খবর পান সেই জিম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, মানে সেই দিনেই যথেষ্ট ইঙ্গিত ছিল যে অশান্তি দানা বাঁধছে। এরপরেও ৩ তারিখে অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর প্রায় সারা রাজ্যে তাদের প্রতিবাদ মিছিল বের করে, সেই মিছিলের বিরোধিতাও শুরু হয় এবং সেদিনই দাঙ্গা শুরু হয়। দাঙ্গার চেহারা অন্তত এবারে ভারী অদ্ভুত ছিল। এর আগেও মণিপুরে আদিবাসী –সমতলের অধিবাসীদের ঝামেলা হয়েছে, দাঙ্গাও হয়েছে কিন্তু এবারে তা ধর্মের ভিত্তিতে হল, চার্চ ভাঙা হল, থানা দখল করে অস্ত্র লুঠ করে পুলিশের পোশাক পরে দাঙ্গা হল, এ সবই ভারী নতুন। ইন্টারনেট বন্ধ, সেনাবাহিনী নেমেছে কিন্তু অশান্তি থামেনি, গৃহহীন কমবেশি ২০ হাজার মানুষ। এন বীরেন্দ্র সিং এর অপদার্থতা মানুষের মুখে মুখে, অন্তত প্রশাসনিকভাবেও দাঙ্গা রোখা যেত, কিন্তু তা করা হয়নি। এবার আসুন দাঙ্গার দুই পক্ষকে বুঝে নেওয়া যাক, আর কেন তাদের মধ্যে বিরোধ সেটাও জানা জরুরি। মণিপুর একটা বাটির মতো, চারধারে পাহাড়, মধ্যে ভ্যালি। ওই ভ্যালিতেই রাজধানী ইম্ফল। ইম্ফলকে ঘিরে এই ভ্যালিতেই রাজ্যের ৬০% মানুষ থাকেন। হ্যাঁ দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্যের বিকাশ, রাজ্যের উন্নয়ন মানেই হল এই ভ্যালির উন্নয়ন। মণিপুরের সীমান্ত লেগে আছে মায়নামারের সঙ্গে, সেই সীমান্তের ওপারে অস্ত্র প্রশিক্ষণ শিবির মণিপুরের বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠী আর দলের, যাদের দাবি আলাদা রাষ্ট্র ইত্যাদির।

আবার এই মণিপুরেই ওই জঙ্গি গোষ্ঠীর অর্থ আসে মূলত ড্রাগ, গাঁজা পাচারের টাকা থেকে, সে আরও এক সমস্যা। তার আগে মণিপুরের জনসংখ্যার বিন্যাসটা বুঝে নেওয়া যাক। সমতলে বা ভ্যালিতে থাকেন মেইতে রা, এঁরা মূলত বৈষ্ণব ধর্মের মানুষ, শিক্ষিত। এঁরাই মন্ত্রী সান্ত্রী কোতওয়াল, এঁদেরই ছেলেপুলেরা রামকৃষ্ণ মিশন থেকে দুন স্কুলে পড়াশুনো করেন, আমাদের রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে সংরক্ষণ আছে তা ভর্তি হয় এই মেইতে গোষ্টির ছেলে মেয়েদের দিয়ে। এঁরা মণিপুরের জনসংখ্যার ৫৩%, বাকি ২৪% নাগা, হ্যাঁ মণিপুরের ২৪% মানুষ নাগা উপজাতির, ১৬% কুকি জিমো উপজাতিদের, এই কুকিদের যে অংশ মায়নামারে থাকে তাঁদের চিন বল হয়, কিন্তু এই কুকি, জিমো, চিন, নাগারা মণিপুরের পাহাড় জঙ্গলে থাকেন, অনায়াসে মায়নামারে চলে যান, জঙ্গি গোষ্ঠীর বেশিরভাগটাই এই উপজাতিদের মানুষ। তার মূল কারণ এঁরা নিজেদেরকে বঞ্চিত বলে মনে করেন। এবং এই উপজাতিদের বেশিরভাগটাই প্রায় ৯০% খ্রিস্টান। আগেও এই পাহাড় জঙ্গলের উপজাতি, মানে নাগা, কুকি, জিমো, চিন-দের সঙ্গে মেইতেদের লড়াই ছিল, কিন্তু সে লড়াই ছিল উপজাতি দাবি নিয়ে, জমি নিয়ে, কিন্তু এইবার প্রথম সেই দাঙ্গাটা হল মেইতে, যাঁরা বৈষ্ণব, সেই অর্থে হিন্দু এবং কুকি নাগা জিমোদের মানে খ্রিস্টানদের। নাহলে চার্চ পোড়ানো হল কেন? মন্দির ভাঙা হল কেন? আসলে বেশকিছুদিন ধরেই এই মেইতেরা নিজেদের আদিবাসী, মানে সিডিউল ট্রাইব হিসেবে চিহ্নিত হবার দাবি করে আসছে, মণিপুর হাইকোর্ট সেই দাবির ভিত্তিতে রাজ্য সরকারকে বলে আপনারা এই দাবি কেন্দ্র সরকারের কাছে রাখুন। এখান থেকেই সমস্যা শুরু। একে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত উপজাতিরা এবার সেই অর্থে এগিয়ে থাকা জনজাতির এই মইতেদের উপজাতি পরিচয়ের ঘোর বিরোধী। তার সবচেয়ে বড় কারণ হল এই উত্তর পূর্বাঞ্চলের বহুজায়গায় ৩৭১ ধারা লাগু থাকার কারণে আদিবাসীদের জমি অনাদিবাসীরা কিনতে পারে না। হ্যাঁ ৩৭০ ধারার মতোই কেবল কাশ্মীরে নয় হায়দরাবাদ, কর্নাটক, ঝাড়খণ্ড, দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিশাল আদিবাসী মানুষজনদের জমি অনাদিবাসীদের হস্তান্তরণ করা যায় না। বিজেপি ৩৭০ ধারার বিরুদ্ধে বড় বড় কথা বলেছে, বলে। কিন্তু সেই তারাই ৩৭১ ধারা নিয়ে চুপ করে থাকে। তো সেই ধারাতেই মণিপুরের ভ্যালির মেইতেরা আদিবাসীদের জমি কিনতে পারে না, কিন্তু আদিবাসীদের যে কোনও জমি কেনার অধিকার আছে। এরফলে ইম্ফল শহর ঘিরে এই মেইতেরা মনে করছেন যে কোনও সময়ে আদিবাসীদের সংখ্যা তাদের চেয়ে বেড়ে যেতে পারে, এবং তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উপজাতি আদিবাসীদের খ্রিস্টান পরিচয়।

সবমিলিয়ে ধর্মীয় মেরুকরণ, যেখানে সমতলের মেইতেদের ভোটের সিংহভাগ বিজেপির কাছে, অন্যদিকে পাহাড় জঙ্গলের উপজাতিদের ভোট বিজেপি বিরোধীদের দিকে। মাত্র ক’মাস আগে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বেশকিছু চার্চ ভাঙা হয়েছে, সেখানে নাকি গাঁজার চাষ হত এবং জঙ্গিদের আনাগোনা ছিল। কাজের ধারা খুব স্পষ্ট, মেইতে জাতির এই মুখ্যমন্ত্রী আসলে কোন মেসেজ ছড়িয়ে দিতে চাইছে তা সবাই বুঝেছে, উপজাতির মানুষেরাও বুঝেছেন। এই কদিন আগে নির্বাচনী প্রচার চলাকালীনও অমিত শাহ মোদিজি বলেছেন জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে কথা চলছে, একটা মীমাংসা সূত্র পাওয়া যাবে। বড় অন্তত দুটো গোষ্ঠী আলাদা দেশের দাবি থেকে সরে এসে স্বশাসিত পর্ষদ ইত্যাদি দাবি নিয়ে কথা বলা শুরুও করেছিলেন, হঠাৎই রাজ্য সরকার জানিয়ে দেয়, তাঁরা এই ত্রিপাক্ষিক আলোচনা থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে নিচ্ছেন। কী অদ্ভুত তাই না? মোদি শাহের সরকার আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, রাজ্যের বিজেপি সরকার আলোচনা থেকে সরে আসছে। কিন্তু এর পিছনের রাজনৈতিক চালটা বুঝুন, রাজ্য সরকার মইতে জাতির মানুষদের, সমতলের, ভ্যালির মানুষদের জানিয়ে দিলেন, তাঁরা ওই উপজাতিদের সমর্থনে নেই, আবার সেই মেরুকরণের খেলা, কিন্তু সব খেলারই একটা শেষ থাকে, আপাতত এই খেলা ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে। উপজাতি যোদ্ধা কুকি, জিমো, চিন, নাগারা সংখ্যায় কম হলে কি হবে, তাঁদের লড়াই এর ঐতিহ্য আছে, অস্ত্রও আছে, সীমান্ত পারের লোকজন বসেই আছে অস্ত্র দিতে, কাজেই ভ্যালিতেই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ ওই মইতে জাতির মানুষজন, সেই বৈষ্ণব হিন্দুরা পালাচ্ছেন, ঠিক যেমন কাশ্মীরে পালিয়েছিলেন, সেই সময়েও কেন্দ্রে সরকারে ছিল বিজেপি, এখন তো বিজেপির সরকার, এই নৃশংস দাঙ্গা থামানো এক রাতের ব্যাপার ছিল, এক অবসরপ্রাপ্ত আমলা জানিয়েছেন, তাঁর বক্তব্য আসলে কিছু মানুষ চাইছেন এই দাঙ্গা আরও কিছুদিন চলুক, এর স্থায়ী দাগ থেকে যাক মানুষের মাথায়, তাহলেই আবার দ্য মণিপুর ফাইলস তৈরি করা যাবে, গোবলয়ে সেই মণিপুর ফাইলস দেখে শিহরিত হবে মানুষজন, ব্যস আর কী চাই? তাই আপাতত জ্বলছে মণিপুর জ্বলুক, অমিত শাহ এ রাজ্যে রবিঠাকুরের গান শুনতে এসেছেন, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী প্রচার সেরে ক্লান্ত এবং আপাতত মৌনিবাবা।

 

পুরনো খবরের আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০ ১১
১২ ১৩ ১৪ ১৫ ১৬ ১৭ ১৮
১৯ ২০ ২১ ২২২৩ ২৪ ২৫
২৬ ২৭ ২৮ ২৯ ৩০ ৩১  
আর্কাইভ

এই মুহূর্তে

মুখ্যমন্ত্রীর চটি ছিঁড়ে যাওয়াকে কটাক্ষ দিলীপের
শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪
উধাও বিজেপির পতাকা, ঝাড়গ্রামে রাজনৈতিক তরজা
শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪
ভরাডুবির মরসুম নিয়ে কী সাফাই দিলেন হার্দিক
শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪
বজরংবলীর আশীর্বাদ পাবেন ৫ রাশির জাতক
মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪
Stadium Bulletin | কোন ৫ কারণে প্লে-অফের দোরগোড়ায় KKR?
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
সোশ্যাল মিডিয়ায় নির্বাচনী প্রচারে সতর্কবার্তা নির্বাচন কমিশনের
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
কখন শচীনের দ্বারস্থ হন কোহলি?
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
চোটে জর্জরিত ম্যান ইউয়ের আজ কঠিন লড়াই
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
মমতার দিদিগিরি বরদাস্ত করব না, কলকাতায় ফিরেই হুঙ্কার রাজ্যপালের
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টি কলকাতায়
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
সুদীপের বিরুদ্ধে বিধিভঙ্গের অভিযোগ বিজেপির
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
মঙ্গলবার ৪ কেন্দ্রে ভোট, সব বুথে থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
সন্দেশখালি ভাইরাল ভিডিওতে কন্ঠস্বর গঙ্গাধর-জবারানির, দাবি শান্তি দলুইয়ের
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
জিতলে গম্ভীরের কৃতিত্ব হারলে দায় শ্রেয়সের? প্রশ্ন কিংবদন্তির  
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
রক্ষাকবচ সত্ত্বেও গ্রেফতার বিজেপি নেতা?
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.   Privacy Policy
Developed By KolkataTV Team