বেজিং: ২০১৯ সালের নভেম্বর মাস। চীনে (China) প্রথম করোনা ভাইরাসের (Corona Virus) দেখা মিলেছিল। তখনও নামকরণ হয়নি। লোকমুখে শুধু জানা গিয়েছিল, চীনে একটা নতুন ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে, যার সঙ্গে নিউমোনিয়ার (Pneumonia) মতো লক্ষণের সাদৃশ্য রয়েছে। তার প্রায় মাস দেড়েক পর ২০২০ সালের আগমণ। আর তার সঙ্গে সঙ্গে গোটা বিশ্ব পরিচিত হতে শুরু করল করোনা বা কোভিড (Covid) নামের সঙ্গে। এই মারণ ভাইরাসের উৎস হলো চীন। সেদেশের হাসপাতালে হাসপাতালে করোনা রোগীদের ভিড়, সেই ভিডিও পোস্ট (Video Post) করেছিলেন তথাকথিত সিটিজেন জার্নালিস্ট ফ্যাং বিন (Citizen Journalist Gang Bin)। তিনি একা নন, তাঁর মতো আরও অনেকে ছিলেন। তাঁরা চীনের সচেতন নাগরিক (Conscious Citizen)। হাতে থাকা স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট ডেটার অ্যাকসেসকে (Smartphone and Internet Data Access) সত্য তুলে ধরতে ব্যবহার করেছিলেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেট মাধ্যমে (Social Media and Internet Media) চীনের ওইসব সিটিজেন জার্নালিস্টদের পোস্ট করা ভিডিয়ো সারা বিশ্বে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। চীন যা সারা বিশ্বের থেকে লুকোতে চেয়েছিল, তা নিমেষে ভাইরাল (Viral) হয়ে যাওয়ার সেদেশের সরকারের রোষাণলে পড়েন তথাকথিত ওই সমস্ত সিটিজেন জার্নালিস্টরা। করোনা মহামারীর খবর সারা বিশ্বকে জানিয়ে দেওয়ার অপরাধে, তাঁদেরকে জেলে পোরা হয়েছিল। তাঁদেরই মধ্যে অন্যতম নাম ফ্যাং বিন। যিনি আচমকা ২০২০ সালের গোড়াতে উধাও হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁকে গত রবিবার চীন সরকার মুক্তি দিয়েছে। ফ্যাং বিনের পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধবরা এই খবর জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: Rishi Sunak | ইতিহাসে প্রথমবার, চার্লসের অভিষেকে হিন্দু প্রধানমন্ত্রী পাঠ করবেন বাইবেল
পেশায় পোশাক বিক্রেতা (Traditional Apparel Seller) ফ্যাং শেষবার মাইক্রোব্লগিং ওয়েবসাইট টুইটারে (Micro-blogging Website Twitter) একটি ভিডিয়ো টুইট (Tweet) করেছিলেন। সেখানে তিনি দেশের মানুষের জন্য বার্তা দিয়েছিলেন – সমস্ত নাগরিকরা প্রতিরোধ গড়ে তুলুন, জনতার হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে আনুন। দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে তিনি সরকারের সমালোচনা করেছিলেন। গোটা বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, কোভিড ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রুখতে ব্যর্থ হয়েছেন চীনা সরকারি আধিকারিকরা (Chinese Government Officials)। এটাই ছিল ফ্যাং বিনের মতো সিটিজেন জার্নালিস্টদের অপরাধ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই চীনা সরকারি আধিকারিক বলেছেন, ফ্যাং বিনকে রবিবারই মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল। “সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই ঘোষণা এবং সমস্যা সৃষ্টি (Picking Fights and Causing Trouble)”-র অপরাধে তাঁকে তিন বছরের কারাবাসের (Jail) সাজা দেওয়া হয়েছিল। তিন বছরের সাজা শেষ হওয়ায় তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের গোড়ার দিকে মধ্য চীনের হুবেই অঞ্চলের (Hubei region of Central China) উহান মহানগরীতে (Metropolis of Wuhan) কোভিডের প্রাথমিক ধাক্কাতে (Covid Outbreak) ১১ মিলিয়ন অর্থাৎ ১ কোটি ১০ লক্ষ ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছিলেন। কোভিড প্যানডেমিক (Covid Pandemic) রুখতে ৭৬ দিন লকডাউন (Lockdown) ছিল সেখানে। এই উহান থেকে চীন সহ গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল করোনা মহামারী (Corona Pandemic)। খবর চাপতে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (Chinese Communist Party) সবরকম চেষ্টা করেছিল। কিন্তু স্মার্টফোন, ইন্টারনেট সংযোগ এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে গোটা বিশ্বকে সত্যটা তুলে ধরেছিলেন কিছু চীনা নাগরিক। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি হঠাৎ করে উধাও হয়ে গিয়েছিলেন ফ্যাং বিন ও চেন কুইশি (Fang Bin and Chen Qiushi)। এরপর, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে চেন ইউটিউবে (YouTube) একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে বলেছিলেন, তিনি হতাশাগ্রস্ত (Depressed), কিন্তু তিনি কোথায় ছিলেন, কেনই বা নিরুদ্দেশ ছিলেন, তা জানানি। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ঝ্যাং ঝান (Zhang Zhan) নামে আরও এক মহিলা সিটিজেন জার্নালিস্টকে চার বছরের কারাবাসের সাজা দেওয়া হয়েছিল চীনের কোভিড কাহিনি গোটা বিশ্বের সামনে তুলে ধরার অপরাধে।