লাসা (তিব্বত): বাঙালি পর্যটনের নতুন ঠিকানা তিব্বত (Tibet)। ইদানীং বেশ কিছুদিন ধরে তিব্বত ভ্রমণে আগ্রহ বেড়েছে বাঙালিদের। প্রকৃতির দরাজ সৌন্দর্য ছাড়াও এখানকার মানুষ, সংস্কৃতি (Tibetan Culture), ধর্মাচরণ এমনকী খাবারদাবারও (Tibetan Food) বাঙালির মন কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু, চীন (China) ধীরে ধীরে তিব্বতি ভাষা (Tibetan Language), ধর্ম-সংস্কৃতিকে গিলে খেয়ে নিচ্ছে। তাদের অস্তিত্ব, ভাষাকে ধ্বংস করে দেওয়ার চক্রান্ত করছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (CCP)। সম্প্রতি রাষ্ট্রসঙ্ঘের একটি মানবাধিকার রিপোর্টে (UN Human Rights Report) এমনই তথ্য উঠে এসেছে।
তিব্বতি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ওই রিপোর্টে জানা গিয়েছে, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি তিব্বতিদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত করতে বলপূর্বক কবজা করার কাজ করছে। যাতে করে তাদের মধ্যে তিব্বতি পরিচয়-সংস্কৃতি বিলুপ্ত হয়ে যায়, সেজন্য হান ধর্মীয় চীনাদের সেখানে ঠেলে দিচ্ছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের ওই রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, কয়েক লক্ষ তিব্বতি শিশুকে বলপূর্বক তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে চীন। সেই শিশুদের সরকার পরিচালিত বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি করিয়ে পড়াচ্ছে চীন।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, তিব্বতি পরম্পরাগত শিক্ষা ব্যবস্থা, ধর্মশিক্ষা এবং ভাষা কেন্দ্রগুলিকে এভাবে জোর করে বন্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে বেজিং কর্তৃপক্ষ। তাদের ভিতর থেকে তিব্বতি পরিচয় মুছে ফেলে হান চাইনিজ করে গড়ে তোলার কাজ চলছে। তিব্বতের চীনা শাসকরা তিব্বতের মানুষের সংস্কৃতি, ধর্ম এবং ভাষার সুপ্রাচীন ঐতিহ্য মুছে ফেলতে আবাসিক স্কুল খুলেছে। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মাপকাঠিতে এহেন কাজ করা যায় না। কোনও গোষ্ঠী বা ধর্মীয় সম্প্রদায়, তার কৃষ্টি-সংস্কৃতি, ভাষা-শিল্পকে এভাবে রূপান্তরিত করা আন্তর্জাতিক রীতিনীতির বিরোধী।
রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, তিব্বতি বাচ্চাদের চীনের আবাসিক স্কুলে ভর্তি করিয়ে কর্তৃপক্ষ শিশুদের সংখ্যাগুরু হান সংস্কৃতি ও শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলছে। মান্দারিন চাইনিজ ভাষাকে বাধ্যতামূলক করে শিক্ষার মূল ভাষা করা হয়েছে। এতে প্রকৃত তিব্বতিদের নতুন প্রজন্ম তাদের ভাষা-সংস্কৃতি ভুলতে বসেছে। এই সমস্ত স্কুলে ভাষা, ইতিহাস এবং সংস্কৃতির বেশ পড়াশোনার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে না। যার ফলে তিব্বতি ছেলেমেয়েরা তাদের মাতৃভাষা ভুলতে বসেছে। বাবা-মা কিংবা ঠাকুরদা-ঠাকুমার সঙ্গে তিব্বতি ভাষায় কথা বলতে পারছে না, বুঝতেও পারছে না। এভাবে তাদের হান চাইনিজ করে গড়ে তোলার চেষ্টায় তারা তাদের প্রকৃত পরিচয় ভুলতে বসেছে।
এই চক্রান্তের সাফল্যের জন্য চীনের কমিউনিস্ট পার্টি তিব্বতের স্বশাসিত এলাকার ভিতরে-বাইরে এ ধরনের স্কুল তৈরি করছে। যার সংখ্যা দিনদিন বেড়ে চলেছে। চীনা শাসকদের এ ধরনের কাজের মূল লক্ষ্যই হল, আজ না হয় কাল তিব্বতিদের ভিতর থেকে বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি বিশ্বাস মুছে দেওয়া। কারণ বৌদ্ধধর্ম (Buddhism) তিব্বতিদের ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও জীবনধারার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত।