নয়াদিল্লি: সংসদে মণিপুর বিষয়ক আলোচনায় সম্মতি দিল সরকারপক্ষ। বিরোধীদের দাবি মেনে বাদল অধিবেশনের আগের দিন বুধবার সর্বদলীয় বৈঠকে সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশি একথা জানিয়ে দেন। এদিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের পৌরোহিত্যে সংসদের কার্যাবলি নিয়ে আয়োজিত সর্বদলীয় বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ ঘোষণা করা হয়। জোশি জানান, সংসদে যে কোনও বিষয় তা যদি বিধি মোতাবেক এবং স্পিকারের অনুমোদিত হয়, তা নিয়ে আলোচনা চলবে। তা মণিপুরও হতে পারে। এবারের অধিবেশনে ৩২টি বিল আলোচনার জন্য উঠবে।
বৈঠকের শেষে এ বিষয়ে কংগ্রেসের লোকসভার বিরোধী দলনেতা অধীর চৌধুরী বলেন, আমাদের অর্থাৎ বিরোধী দলগুলির সরকারপক্ষের কাছে একটিই আবেদন যে, সভায় আমাদের বলতে দিন। প্রসঙ্গ উত্থাপনের সুযোগ দিন। কংগ্রেসের দাবি ছিল মণিপুর নিয়ে সংসদে আলোচনা হোক।
আরও পড়ুন: 21 July Rally | ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ ঘিরে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা পুলিশের
উল্লেখ্য, এদিনই মণিপুরের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সে রাজ্যে গেল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিদল। রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের নেতৃত্বে এই দলে রয়েছেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার, দোলা সেন এবং সুস্মিতা দেব। তৃণমূল নেত্রী সুস্মিতা দেব বিমানবন্দরে জানান, পাঁচজন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ আমরা মণিপুরে যাচ্ছি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আমরা সেখানকার জনসাধারণের সঙ্গে সাক্ষাৎ করব। বিভিন্ন ত্রাণশিবিরে যাব। মণিপুরে গিয়ে একটা রিপোর্ট তৈরি করে আমরা আমাদের শীর্ষ নেত্রীকে দেব।
এদিকে, আইএনডিআইএ গঠনের একদিন পরেই আগামিকাল, বৃহস্পতিবার প্রথম বৈঠকে বসতে চলেছে বিরোধী জোট। সংসদীয় দলনেতারা সংসদের বাদল অধিবেশন শুরুর আগে সরকার বিরোধী কৌশল রূপায়নের জন্য আলোচনায় মিলিত হবেন। কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যসভা সদস্য মল্লিকার্জুন খাড়্গের অফিসে বৈঠক হবে সকাল ১০টায়। সূত্রে জানা গিয়েছে, বিরোধী জোটের সব সংসদীয় দলনেতা ওই বৈঠকে হাজির থাকবেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
শাসক-বিরোধী রাজনৈতিক উত্তাপের পারদ যখন তুঙ্গে, ঠিক তখন আগামিকাল, বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে সংসদের বাদল অধিবেশন। তার আগে আজ, বুধবার প্রথামাফিক অনুষ্ঠিত হয সর্বদলীয় বৈঠক। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী, তৃণমূল কংগ্রেসের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুখেন্দুশেখর রায় প্রমুখ। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর অনুপস্থিতিতেই বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পেশ ও পাশ করানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারপক্ষের। অন্যদিকে, রাহুল গান্ধীর লোকসভা সদস্যপদ খারিজ, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বেকারি, মণিপুর সমস্যা, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, দিল্লি অর্ডিন্যান্স, মহারাষ্ট্র ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সরকারকে চেপে ধরবে বিরোধীরা। বিশেষত মঙ্গলবার বেঙ্গালুরু বৈঠকের সাফল্যের পর সংসদে চাপের মুখে থাকবে মোদির বিজেপি।
মঙ্গলবারই রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড় একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিলেন। কিন্তু, একদিকে বেঙ্গালুরুতে বিরোধীদের এবং অন্যদিকে রাজধানীতে এনডিএ-র বৈঠকের কারণে অনেক সদস্য অনুপস্থিত থাকায় সেই আলোচনা সম্ভব হয়নি। সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিনের সর্বদলীয় বৈঠকে উদ্ধব ঠাকরের গোষ্ঠীর শিবসেনাকে ডাকা হয়নি। সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশি সব দলের কাছে ফলপ্রসূ আলোচনা করার উপর জোর দিয়েছেন। প্রসঙ্গত, আগামী ১১ অগাস্ট পর্যন্ত বাদল অধিবেশন চলবে।
সংসদের নতুন ভবনে বসতে চলা বাদল অধিবেশনে মোট ১৫টি কার্যদিবস থাকবে। লোকসভা সচিবালয়ের তরফে জানা গিয়েছে, ২১টি নতুন বিল এবং ৭টি বিল আলোচনার জন্য উঠে আসবে। সব মিলিয়ে দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আগামিকাল থেকে শুরু হতে চলেছে বাদল অধিবেশন। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর ভাষণের পর প্রয়াত সদস্য-নেতাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সভা মুলতুবি হয়ে যাবে। তার পরদিনই সুপ্রিম কোর্টে রয়েছে রাহুল গান্ধীর মোদি পদবি বিতর্ক মামলার শুনানি। কংগ্রেস এখন অধীর আগ্রহে সর্বোচ্চ আদালতের মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।