নয়াদিল্লি: কথা হচ্ছিল সৈয়দ মহম্মদ তালহার সঙ্গে। একগাল হাসিমুখে বললেন, আমার ৭ বছরের মেয়ে একটি নামকরা মন্তেসরিতে পড়ে। দিল্লির কানঘেঁষা এলাকার ওই স্কুলে পড়ার বার্ষিক খরচ ২ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা। কিন্তু তাতেও যারপরনাই খুশি ওই মুসলিম ব্যবসায়ী। তাঁর কথায়, একটাই মেয়ে। তাকে পছন্দমতো বড় করে তুলতে চাই। লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করে তুলতে চাই। এই খরচ আমার গায়েই লাগে না।
সৈয়দ আরও বলেন, এই যদি আমার দ্বিতীয় সন্তান থাকত, তাহলে আমি কি এত খরচ করে ওকে পড়াতে পারতাম? দুজনকে এত খরচসাপেক্ষ স্কুলে ভর্তি করাতে পারতাম! প্রশ্নের সঙ্গেই জবাবটাও ছুড়ে দিলেন অত্যাধুনিক শহর নয়ডার ওই ব্যবসায়ী। তিনি আরও জানালেন, একটাই মেয়ে বলে আমরা সম্পূর্ণ নজর ওর উপর দিতে পারি। ভালো শিক্ষা, অনেক অনেক স্বাচ্ছন্দ্য, সুবিধা, এমনকী ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয়ের দিকেও নজর দিতে পারি।
আরও পড়ুন: Metro Trial | ঐতিহাসিক মুহূর্ত, অবশেষে সফল হল মেট্রোর ট্রায়াল রান
সৈয়দ একা নন। তাঁর মতোই এরকম শান্তি, সুখ, স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন বেছে নিতে পরিবার পরিকল্পনায় (Family Planning) জোর দিচ্ছেন আধুনিক যুগের ভারতীয় মুসলিমরা (Indian Muslims)। যুগ বদলেছে, জীবনধারা বদলেছে, অর্থনীতি বদলেছে, শিক্ষা-চেতনায় আমূল বদল ঘটেছে আধুনিক সময়ের মুসলিম দম্পতিদের মধ্যে। যুগ যুগ ধরে যে ধারণা ছিল তাতে বদল আনতে সক্ষম হয়েছেন আধুনিক চিন্তাধারার মুসলিম ধর্মগুরুরাও। মুসলিমদের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির (Population Rate) হার নিয়ে বিশ্বও একসময় চিন্তিত ছিল। কিন্তু, এখন আর সেই সময় নেই।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে (Population Control Programmes) ভারত যে কয়েক যুগ ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছিল, তাতে মুসলিমরাও হাত বাড়ানোয় একাজ সফল হয়েছে। সংবাদ সংস্থা রয়টার ৬ জন ভারতীয় মুসলিম পুরুষ ও মহিলার সঙ্গে কথা বলেছে। ৭ জন মৌলবি, জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞ এবং ইসলামি পণ্ডিতদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তাঁদের সকলেই একবাক্যে স্বীকার করেছেন যে, জন্ম নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবার পরিকল্পনার ব্যাপারে ভারতীয় মুসলিমরা এখন যথেষ্ট সচেতন।
রয়টারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১১ সালের জনগণনায় ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা ছিল ১৪.২ শতাংশ। অন্যদিকে, হিন্দুদের জনসংখ্যা ৭৯.৮ শতাংশ। ২০২১ সালের জনগণনা এখনও না হলেও রাষ্ট্রসঙ্ঘের (UNO) এমাসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতের জনসংখ্যা এখন ১৪২ কোটি। ভারতের মুসলিম জনসংখ্যা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম। প্রথমে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, দ্বিতীয় স্থানে পাকিস্তান।
জাতীয় জনস্বাস্থ্য সমীক্ষা অনুযায়ী, দিনে দিনে একজন মুসলিম মহিলার সন্তান জন্মের হার ২০১৯-২১ সালে ছিল ২.৪। যেখানে ২০০৫-০৬ সালে তা ছিল ৩.৪। রয়টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অত্যন্ত রক্ষণশীল, গোঁড়া সম্প্রদায় হওয়া সত্ত্বেও একাজ সম্ভব হয়েছে মুসলিম মৌলবি, ইমামদের সক্রিয় ভূমিকায়। লখনউয়ের ইদগাহ-র ইমাম মৌলানা খালিদ রশিদ বলেন, মুসলিমদের মধ্যে একটা ভ্রান্ত ধারণা আছে যে, ইসলামে জন্মনিয়ন্ত্রণের অনুমোদন নেই। শরিয়তে পরিবার পরিকল্পনার কথা বলা আছে। এটা আমাদের কর্তব্য ও দায়িত্ব যে এই ভ্রান্তি দূর করা।
উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদ শহরের এক ধনাঢ্য মুসলিম ব্যবসায়ী শাহিদ পারভেজ। হস্তশিল্পের ব্যবসা করে প্রচুর সম্পত্তির মালিক। তিনি বললেন, তাঁরা ৬ ভাইবোন। ৬৫ বছরের এই বৃদ্ধ হেসে বলেন, আমার পরিবার কিন্তু ছোট। দুই ছেলে, এক মেয়ে। তারা সকলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠ ডিঙিয়েছে। তাঁর মেয়ে মুনেজা শাহিদ দিল্লির একটি স্কুলে পড়ান। সম্প্রতি বিয়েও করেছেন। কিন্তু তিনি এই মুহূর্তে বাচ্চা চান না। তবে তার নেপথ্যে আর্থিক কোনও কারণ নেই।
মুনেজার কথায়, আমরা দুজন নিজেদের মতো করে, নিজেদের জন্যও বাঁচতে চাই।