নয়াদিল্লি: আম্বেদকর কার? এই অধিকারের লড়াইয়ের মধ্যেই সকাল থেকে পালিত হচ্ছে বি আর আম্বেদকরের (B R Ambedkar) জন্মজয়ন্তী। দেশের প্রায় প্রতিটি কোণে আম্বেদকরের মূর্তি ও প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও শ্রদ্ধা নিবেদনেই সীমাবদ্ধ রইল না জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠান। বাবাসাহেবকে ‘পোস্টার বয়’ করে সামনে রেখে দিনভর চলল রাজনৈতিক ঝাল মেটানোর পালা। বিশেষত আগামী মাসে কর্নাটক বিধানসভা ভোট (Karnataka Assembly Vote 2023)। এছাড়াও এ বছরের শেষ ও ২০২৪ সালে আরও কয়েকটি রাজ্যের ভোট রয়েছে। সর্বোপরি রয়েছে লোকসভা ভোট (Lok Sabha Vote 2024)। তাই ভোট টানতে এদিন সকাল থেকেই দলিত-প্রেমের (Dalit Vote Bank) ঢেউয়ের মাঝেই রাজনৈতিক শিকার উৎসবও চলল।
কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী (Sonia Gandhi) শুক্রবারও একটি উত্তর সম্পাদকীয় লেখায় আম্বেদকরের শিক্ষণীয় বিষয় বোঝাতে ছত্রে ছত্রে বিজেপি নেতৃত্ব ও মোদি সরকারকে পিষেছেন। শুধু তিনি নন, কংগ্রেসের (Congress) বর্তমান সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে (Mallikarjun Kharge) দলের তরফে এক বিবৃতিতেও তুলোধনা করেছেন বিজেপি (BJP) সরকারকে। রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi) ছোট্ট একটি টুইটের কয়েকটি শব্দবন্ধে আম্বেদকরের আদর্শ বোঝাতে খোঁচা দিয়েছেন বর্তমান কেন্দ্রীয় শাসকদল বিজেপিকে। রাহুল লিখেছেন, সাম্য, স্বাধীনতা, সদ্ভাব এবং ন্যায়বিচার ছিল আম্বেদকরের লক্ষ্য। এছাড়াও দেশের প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দল এদিনটিকে নিজেদের মতো করে বিরোধী দলকে তিরে বিঁধেছে।
আরও পড়ুন: Amit Shah | আজ রাহুল, মমতা না অভিষেক, শাহি-তরোয়ালে বিদ্ধ হবেন কে?
সকালে সংসদ ভবনে আম্বেদকরের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন স্পিকার ওম বিড়লা, রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গে, বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা প্রমুখ। রাজ্য বিধানসভাতেও আম্বেদকরের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয় সরকারের তরফে। তেলঙ্গানায় এদিনই আম্বেদকরের সর্বোচ্চ মূর্তির আবরণ উন্মোচন করবেন মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও। সংবিধানের রূপকারের ১২৫ ফুট উঁচু মূর্তিটি বসানো হবে সেকেন্দ্রাবাদের হুসেন সাগর লেকের পাড়ে। বছর শেষে নির্বাচনমুখী তেলঙ্গনায় এই মূর্তির পিছনে খরচ পড়েছে ১৪৬ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা।
উল্লেখযোগ্য আম্বেদকরকে সকালে প্রথম বোমাটি ফাটিয়েছেন প্রাক্তন কংগ্রেস সভানেত্রী তথা লোকসভা সদস্য সোনিয়া গান্ধী। সোনিয়া লিখেছেন, আম্বেদকর বিশ্বাস করতেন সংবিধানের সাফল্য নির্ভর করে শাসনকর্তার আচরণের উপর। আজ, যারা ক্ষমতায় রয়েছে তারা সংবিধানে বর্ণিত ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। মানুষের স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে। সমতার দৃষ্টি, ন্যায়বিচার সবই লঙ্ঘিত হচ্ছে। আইন প্রয়োগ করে জনসাধারণকে রক্ষা করার বদলে তাদের হেনস্তা করা হচ্ছে। সদ্ভাব নষ্ট করা হচ্ছে এইভাবে যে, ইচ্ছাকৃতভাবে এমন একটা বাতাবরণ তৈরি করা হয়েছে যাতে একের বিরুদ্ধে ঘৃণার সৃষ্টি করে।
সোনিয়া এরপর সোজাসাপটা বলেছেন, এই পরিকল্পিত নিধনের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে আমাদের এই মুহূর্তে ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি। প্রতিটি ভারতীয় তা সে যে মতাদর্শের হোক না কেন, এই অবস্থায় এক হতে হবে। ছেলে রাহুলকে বিজেপি দেশবিরোধী আখ্যা দেওয়ার জবাবে কড়া ভাষায় সোনিয়ার প্রতিক্রিয়া, প্রকৃত দেশবিরোধী তারাই যারা ভাষা, ধর্ম, জাতি ও লিঙ্গ বৈষম্যকে ব্যবহার করে বিভেদ সৃষ্টি করছে। এভাবে তাঁর লেখায় কংগ্রেস জমানার উন্নয়ন, দলিত, আদিবাসীদের জন্য বিবিধ কাজের উদাহরণ তুলে ধরেছেন সোনিয়া। সব মিলিয়ে আম্বেদকর জয়ন্তীকে ভোট রাজনীতির ললিপপ হিসেবে দেশবাসীর মুখে গুঁজে দিল সব দলই।