ভেল্লিক্কাকাঠু শঙ্করন অচ্যুতানন্দন। প্রবীণতম এই কমিউনিস্ট নেতাকে দেশ একডাকে চেনে ভিএস নামে। সাম্যবাদী-সমাজতন্ত্রী বিপ্লবের প্রতি একরোখা মনোভাব তাঁকে ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের পথিকৃৎ হিসেবে আসন দিয়েছে। সেই মর্যাদার কাছে কেরালার মুখ্যমন্ত্রী কিংবা কেরালা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের পদ তুচ্ছ। সেই ভিএস বৃহস্পতিবার ১০০ বছরে পা দিলেন। তিরুবনন্তপুরমে ছেলের বাড়িতে এদিন তাঁর ৯৯ বছরের জন্মদিন পালিত হচ্ছে।
দিল্লিওয়ালারা বরাবর তাঁকে স্ট্যালিনবাদী বলে গাল দিত। সীতারাম ইয়েচুরি তাঁকে কেরালার ফিদেল কাস্ত্রো বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। সেই ভিএস একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আমি কমিউনিস্ট নীতি-আদর্শে বিশ্বাসী। সেই অনুযায়ীই চলি। ঠিক এই কারণেই অচ্যুতানন্দনকে লোকজন সাম্যবাদের পাতা থেকে উঠে আসা নেতা বলে মনে করেন।
আরও পড়ুন: Rupee Hits A New Record Low: এক সপ্তাহের মধ্যে ফের রেকর্ড পতন টাকার, ডলারপ্রতি ৮৩.১২ টাকা
আজ ৯৯ বছর পূর্ণ করে অচ্যুতানন্দনের স্মৃতিতে ফিরে আসে কীভাবে মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে আলাপ্পুঝায় শ্রমিক শ্রেণির আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। সেদিনের পর থেকে ভিএসের জীবনস্রোত বয়ে গিয়েছে ভারতে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। সে কারণেই আপসহীন আন্দোলনের নীতিগত লড়াইয়ে অটুট থাকতে ১৯৬৪ সালে সিপিআইয়ের জাতীয় পরিষদের বৈঠক থেকে ৩২ জন কমরেড নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। তারপরই নতুন দল সিপিআই (এম)গঠিত হয়। সেখানেও দলীয় মতাদর্শ ও পার্টি লাইন নিয়ে নানা সময়ে বিরোধের মুখে পড়েন তিনি। কিন্তু, ভিএস বরাবরই বাউন্ডুলে নেতা গোছের। তাই কোনওদিনই দলের অভ্যন্তরে লবি তৈরির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি।
আর সে কারণেই প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কেরালার একমাত্র জননেতা বলতে তাঁকেই বুঝত মানুষ। তিনি দাঁড়ালেই লাখো জনতার ঢল নামত। তাঁর বাগ্মিতায় মুগ্ধ হয়ে ভাষণ শুনত জনতা। শুধু সিপিএম সমর্থক নন, সাধারণ মানুষও তাঁর বক্তৃতা শুনতে দাঁড়িয়ে যেত। তা সত্ত্বেও পিনারাই বিজয়ন গোষ্ঠীর কাছে দলের অভ্যন্তরে পিছু হটতে হয় ভিএসকে। বারবার দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, অবৈধ কাজকারবারের অভিযোগ তুললেও তাঁর কথা কেউ পাত্তা দেয়নি।
তবুও অচ্যুতানন্দন এখনও একনিষ্ঠ পার্টি কর্মী। অনুগত সদস্য। তাঁকে কোণঠাসা করেও, আক্রমণ করেও কমিউনিস্ট সাধনা থেকে কোনওদিন চ্যুতি ঘটেনি অচ্যুতানন্দনের।