কলকাতা: রাজ্যে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর শনিবার থেকেই শুনানি পর্ব শুরু হওয়ার কথা ছিল। যদিও প্রথম দিনে সেই অপশন চালু না থাকায় সমস্যায় পড়েন বিএলও (BLO) ও ইআরও-রা। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক (সিইও) মনোজ আগরওয়াল জানিয়েছিলেন, প্রক্রিয়া চালুর কাজ চলছে। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, রাজ্যে শুনানি পর্বের জন্য প্রয়োজনীয় অপশন চালু হয়ে গিয়েছে। এর ফলে এবার থেকে সংশ্লিষ্টদের শুনানির জন্য নোটিস পাঠানো শুরু হবে।
নির্বাচন কমিশন (Election Commission) সূত্রে জানা গিয়েছে, নোটিস পাঠানোর পর সংশ্লিষ্ট ভোটারদের অন্তত সাত দিনের সময় দেওয়া হবে। শুনানি পর্বে সিসিটিভি বসানো হবে কি না, সে বিষয়ে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে আপাতত সিসিটিভি ছাড়াই শুনানি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সূত্রের খবর, প্রথম শুনানি ২৫ ডিসেম্বরের আগে শুরু হচ্ছে না।
আরও পড়ুন: মোদির ভাষণে মন গলল মতুয়াদের? সভা শেষ হতেই উঠল বড় প্রশ্ন
রাজ্যের খসড়া ভোটার তালিকায় প্রায় ৩০ লক্ষ ভোটার ‘নো ম্যাপিং’ জোনে রয়েছেন। যাঁরা ২০০২ সালের ভোটার তালিকার সঙ্গে নিজেদের কোনও যোগসূত্র প্রমাণ করতে পারেননি, তাঁদের প্রত্যেককেই শুনানির জন্য ডাকা হবে। এ ছাড়াও ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম না থাকা অথবা ওই তালিকায় বাবা, মা, দাদু, দিদা বা পরিবারের অন্য কারও নাম না থাকা— এমন ‘প্রোজেনি ভোটার’ হিসেবে চিহ্নিত ২৩ লক্ষ ৬৪ হাজার ৩০ জনের ক্ষেত্রেও অসঙ্গতি ধরা পড়েছে।
বয়স সংক্রান্ত অসঙ্গতিও বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। ৪৫ বছরের বেশি বয়সী এমন ১৯ লক্ষ ৩৯ হাজার ২৫০ জন ভোটারের নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নেই। নির্বাচন কমিশনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, যাঁদের বর্তমান বয়স ৪৫, তাঁদের ২০০২ সালে বয়স ছিল প্রায় ২২ বছর। ১৮ বছর বয়সেই ভোটার তালিকায় নাম ওঠার কথা। ফলে ৪৫ বছর বা তার বেশি বয়স হওয়া সত্ত্বেও ২০০২ বা ২০০৬ সালের ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম নেই, তাঁদের নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
বাবার নাম সংক্রান্ত অসঙ্গতি ধরা পড়েছে ৮৫ লক্ষ ১ হাজার ৪৮৬ জন ভোটারের ক্ষেত্রে। আবার বাবার বয়স নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে ১৯ লক্ষেরও বেশি ভোটারের নথিতে। এর মধ্যে ১০ লক্ষ ৭৬ হাজার ৯৮১ জন ভোটারের ক্ষেত্রে বাবা ও সন্তানের বয়সের ফারাক মাত্র ১৫ বছর। অন্যদিকে, বাবা ও সন্তানের বয়সের ফারাক ৫০ বছর এমন ভোটারের সংখ্যা ৮ লক্ষ ৫৯ হাজার ২৭৫।
এ ছাড়াও ৩ লক্ষ ১১ হাজার ৮১১ জন ভোটারের ক্ষেত্রে ঠাকুরদার সঙ্গে বয়সের অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। লিঙ্গ সংক্রান্ত ভুল তথ্য রয়েছে এমন ভোটারের সংখ্যাও কম নয়— ১২ লক্ষ ৯৮ হাজার ৩৪০ জন। এই সমস্ত ভোটারদেরও শুনানির জন্য ডাকা হবে।
চলতি বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) পর্বে শুনানি প্রক্রিয়ার উপর কড়া নজরদারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, গোটা প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের জন্য প্রায় ৪ হাজার মাইক্রো রোল অবজার্ভার নিয়োগের কথা ভাবা হচ্ছে। যদিও প্রাথমিক হিসাবে এই সংখ্যা ৩,৩০০-এর আশপাশে থাকলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।
এই নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে শনিবার বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থার শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সরকারের গ্রুপ ‘বি’ বা তার ঊর্ধ্বতন কর্মীদেরই মাইক্রো রোল অবজার্ভার হিসেবে নিয়োগ করা হবে। কেন্দ্রীয় পিএসইউ, জাতীয়কৃত ব্যাঙ্ক এবং বিভিন্ন কেন্দ্রীয় দফতরের কর্মীদের থেকেই এই অবজার্ভার বাছাই করা হবে।
মাইক্রো অবজার্ভারদের দায়িত্ব থাকবে শুনানি পর্বের প্রতিটি ধাপ নজরে রাখা। কোথাও কোনও অসঙ্গতি ধরা পড়লে তাঁরা প্রথমে সংশ্লিষ্ট ইআরও ও এআরও-কে জানাবেন এবং প্রয়োজনে বিষয়টি জেলা নির্বাচন আধিকারিকের নজরেও আনবেন। কমিশনের আশা, শনিবারের মধ্যেই মাইক্রো অবজার্ভার নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে যাবে।
দেখুন আরও খবর: