কলকাতা: এই চেহারায় কী করে বিএসএফের চাকরি পেলেন? আপনার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আদালতে ডেকে পাঠাব। কেন আপনার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হবে না? আপনার অফিসারের কাছে কি এই পোশাক পরেই যান? তাহলে আদালতে কেন এই পোশাক পরে এসেছেন? একটি জামিন-মামলার শুনানি চলাকালীন বিএসএফ জওয়ান সুবীর মণ্ডলের উদ্দেশে মন্তব্য বিচারপতি দেবাংশু বসাকের।
জিন্সের প্যান্ট ও টিশার্ট পরে কলকাতা হাইকোর্টের ২৯ নম্বর এজলাসে হাজির ছিলেন বিএসএফের ওই জওয়ান। হাইকোর্টের নির্দেশে পূর্ব বর্ধমানের পুলিস তাঁকে আদালতে হাজির করে। বছর দশেক আগে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কর্মী কমলিকা মল্লিকের(পরিবর্তিত নাম) সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিছুদিন পরেই কমলিকা বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস করার অভিযোগ এনে সুবীরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। সুবীরের বিরুদ্ধে শুরু হয় তদন্ত। ২০২০ সালে অবশেষে সুবীর কমলিকাকে বিয়ে করেন। কমলিকার আইনজীবী সুস্নিগ্ধ ভট্টাচার্যের অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই কমলিকার উপর অত্যাচার শুরু করেন সুবীর। তাঁর বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের(৪৯৮ ধারায়) অভিযোগও দায়ের হয়। অভিযোগ তুলে নেওয়ার দাবিতে নির্যাতনের মাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকে। ফলে ফের সাক্ষীকে প্রভাবিত করা(১৯৫ ধারা) অভিযোগ দায়ের হয় সুবীরের বিরুদ্ধে। সুবীর নিম্ন আদালত থেকে আগাম জামিন পান। সেই জামিন খারিজের আবেদন নিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন কমলিকা।
কমলিকার এই আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট সুবীরকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু আদালতে হাজির হন না সুবীর। অবশেষে আদালত সুবীরকে হাইকোর্টে হাজির করানোর নির্দেশ দেয় পুলিসকে। সেইমতো পুলিস সুবীরকে আদালতে হাজির করায়।
আরও পড়ুন: Dantan: দাঁতনে চিকিৎসক ছেলেকে বরণ করে নিলেন নার্স মা
মামলার শুনানি চলাকলীন কমলিকার আইনজীবী আদালতে খোরপোশের দাবি করেন। সুবীরের উদ্দেশে বিচারপতি দেবাংশু বসাকের প্রশ্ন, আপনি কত টাকা বেতন পান। সুবীর জানান, তিনি ৪৩ হাজার টাকা বেতন পান। বিচারপতি দেবাংশু বসাকের নির্দেশ, বেতনের এক তৃতীয়াংশ খোরপোশ হিসেবে দিতে হবে কমলিকাকে। পাশাপাশি কমলিকার উদ্দেশে বিচারপতির প্রশ্ন, আপনি কি সুবীরের সঙ্গে থাকতে চান? কমলিকা বলেন, থাকতে পারি। কিন্তু আমাকে যেন মারধর করা না হয়। বিচারপতির জবাব, ঘরে থাকবেন আপনারা দুজন। আপনাকে যে মারধর করা হবে না, তার নিশ্চয়তা আমি কেমন করে দেব? বিচারপতির এই মন্তব্যে হাসির রোল ওঠে এজলাসে। এরপরই সুবীর ও কমলিকা যাতে একসঙ্গে বসবাস করতে পারেন, তার জন্য দম্পতিকে কাউন্সেলিংয়ে পাঠায় আদালত। স্বামী-স্ত্রীর এই মিলনের ব্যাপারে আদালতের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে আইনজীবী মহল।