কলকাতা: কাঁথি পুরসভার ভোটগণনায় স্থগিতাদেশ দিল না কলকাতা হাইকোর্ট। আইনজীবী পরিমজিৎ সিং পাটুয়ালিয়ার আবেদন খারিজ হয়ে গেল উচ্চ আদালতে। ফলে, বাকি পুরসভাগুলির সঙ্গে বুধবার কাঁথির ভোটগণনায় আর বাধা রইল না। পাটুয়ালিয়ার আর্জি ছিল, আদালতের পর্যবেক্ষণ না-হওয়া পর্যন্ত গণনা পিছিয়ে দেওয়া হোক। পুনর্নির্বাচনেরও আবেদন জানিয়েছিলেন।
ভোট গণনার ক্ষেত্রে আদালত এদিন স্থগিতাদেশ না দিলেও মামলার চূড়ান্ত রায়ের উপর নির্ভর করবে কাঁথি নির্বাচনের ভবিষ্যৎ। ১১ মার্চ এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে তার আগেই, ৭ মার্চের মধ্যে আদালতে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। মামলার আবেদনকারীকেও জবাব দেওয়ার জন্য এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে।
কাঁথি পুরসভার নির্বাচন সংক্রান্ত মামলার শুনানির শুরুতেই মামলাকারীর তরফে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়, আদালতের নির্দেশ ছিল শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। অথচ, রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরির ছেলে সুপ্রকাশ গিরি প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছেন। তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বিকেল ৫টা পর্যন্ত খুনের হুমকিও দিয়েছেন। কাঁথি পুরসভার সর্বত্র বুথ দখল করা হয়েছে। এ নিয়ে একাধিক অভিযোগ করা সত্ত্বেও কমিশনের তরফে কোনওরকম পদক্ষেপ করা হয়নি। পুলিশও নিষ্ক্রিয় ছিল।
আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও কাঁথি পুরসভায় ভোটের দিন সিসিটিভি ক্যামেরা কাজ করেনি বলে তিনি অভিযোগ করেন। পাটুয়ালিয়ার দাবি, সিসিটিভি ক্যামেরা সব বুথে লাগানোর নির্দেশ থাকলেও ১০০টির মধ্যে ৬৭-৬৮ সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। যদিও নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন।
আরও পড়ুন- School Service Commission: স্কুলের নিয়োগ দুর্নীতি, একক বেঞ্চের রায় চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্য
সওয়াল-জবাবের সময় ভোটগ্রহণ ঘিরে ওঠা অভিযোগগুলোর সত্যতা কমিশন কী করে পর্যালোচনা করছেন, তা জানতে চান প্রধান বিচারপতি। জবাবে জয়ন্ত মিত্র জানান, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অবজারভাররা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কমিশনের আইনজীবী আরও বলেন, আদালত আগে দেখুক বিজেপি প্রার্থীদের অভিযোগ সত্যি কি না। তিনি জানান, ১০৮টি পুরসভায় ১০৮ জন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার অফিসার পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। কমিশনের হয়ে তাঁরাই ফিল্ড ওয়ার্ক করেন।
ভোটগ্রহণের সময় সবক’টি সিসিটিভি ক্যামেরা ঠিকঠাক কাজ করছিল কি না, কমিশনের আইনজীবীর কাছে তা-ও জানতে চান প্রধান বিচারপতি। সিসিটিভি ক্যামেরা অডিটের জন্য নিরপেক্ষ কোনও সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার কথা কমিশন ভাবছে কি না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়। কমিশনের আইনজীবী জানান, সমস্ত অভিযোগের তদন্ত কমিশন করেছে।
এর পরেই প্রধান বিচারপতি পাটুলিয়ার কাছে জানতে চান, উনি ঠিক কী চাইছেন? কারণ, সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
জবাবে পাটুয়ালিয়া বলেন, ‘আমি চাইছি আদালতের পর্যবেক্ষণ না-হওয়া পর্যন্ত গণনা পিছিয়ে দেওয়া হোক। আমরা পুনর্নির্বাচন চাই।’
এর বিরোধিতা করে কমিশনের আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র পালটা প্রশ্ন তোলেন, ‘ভোটগণনা কী ভাবে স্থগিত করা যায়? আইনি কোনও সংস্থান নেই।’
এর প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশে হাইকোর্ট জানিয়েছে, কাঁথি পুরসভার সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। সিসিটিভি ফুটেজগুলি কোন নিরপেক্ষ সংস্থাকে দিয়ে অডিট করানো যায়, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে সেই প্রস্তাবও চেয়েছে হাইকোর্ট।