শ্রেয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা:পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বন্দিদশার বর্ষপূর্তি। গত বছর ২২ জুলাই সকালে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে ইডি আধিকারিকেরা ঢুকেছিলেন পার্থর নাকতলার বাড়িতে। সকাল থেকে মাঝরাত পর্যন্ত তল্লাশি এবং জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে পরের দিন ভোরে ইডি গ্রেফতার করে তৃণমূল সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে (Partha Chatterjee)। তারপর থেকে বছরভর প্রেসিডেন্সি জেলেই দিন কাটছে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর। গত একবছর ধরে বারংবার জামিনের আবেদন জানালেও তা খারিজ হয়ে গিয়েছে। যেকোনও শর্তে জামিনের কাতর আবেদনও খারিজ করে দিয়েছে আদালত। এখন প্রেসিডেন্সি জেলই রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীর বর্তমান ঠিকানা।
শুক্রবারই ছিল তৃণমূলের শহীদ দিবস। ধর্মতলার সমাবেশ মঞ্চ থেকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে শোনা গিয়েছে, আজ একুশে জুলাই। দেখবেন, কাল-পরশু থেকে ফের ইডি-সিবিআইয়ের তৎপরতা বাড়বে। ওরা আমাকেও গ্রেফতার করতে পারে। তাতে অবশ্য আমি ভয় পাই না। গত বছরও একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে মমতার (Mamata Banerjee) হুঁশিয়ারি ছিল, আমাকে ইডি, সিবিআই (ED-CBI)দেখিয়ে ভয় পাওয়ানো যাবে না। ঘটনাচক্রে ঠিক তার পরের দিনই পার্থর বাড়িতে ম্যারাথন তল্লাশি চলে। পার্থকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তাঁর বাড়িতে নথিপত্র মেলার সূত্রেই তাঁর বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের (Arpita Mukherjee) নাম উঠে আসে। অর্পিতার দুটি ফ্ল্যাট থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হয়। গ্রেফতার হন পার্থর বান্ধবীও। পার্থর মতো অর্পিতাও সেদিন থেকে জেলেই দিন কাটাচ্ছেন।
দীর্ঘ এক বছর ধরে শূন্য নাকতলার বিজয়কেতন। এক সময় যে বিজয়কেতন এবং সংলগ্ন এলাকা তৃণমূলের নেতা কর্মীদের ভিড়ে গমগম করত, আজ সেই এলাকা জনশূন্য। পার্থর প্রিয় কুকুরেরা এর তার বাড়িতে দিন কাটাচ্ছে। এই এক বছরে তাদের ঠিকমতো খাওয়াদাওয়াও জোটেনি। ফলে সৌখীন সেই পোষ্যদের চেহারাওঅনেকটাই খারাপ হয়ে গিযেছে। শুনশান বিডয়কেতন পাহারা দেন গুটি কয়েক হোমগার্ড।
আরও পড়ুন: West Bengal Assembly | সোমবারই রাজ্য বিধানসভার অধিবেশন, অনুমোদন রাজ্যপালের
বেহালা পশ্চিম কেন্দ্র থেকে লাগাতার বিধায়ক হয়ে আসছেন পার্থ। সেই বিধানসভা কেন্দ্রে এখন ইতিউতি চোখে পড়ে ‘পার্থ চোর’ লেখা পোস্টার। সম্প্রতি স্থানীয় সিপিএম পার্থ বিধায়ক পদ খারিজ চেয়ে নতুন নির্বাচনের দাবিতে সই সংগ্রহ করেছে।
পার্থ জেলবন্দি অবস্থায় বারবার দলের প্রতি সীমাহীন আনুগত্য দেখালেও তৃণমূল নেতারা কিন্তু দলের প্রাক্তন মহাসচিবের থেকে অনেকটাই দূরত্ব অবলম্বন করছেন। পঞ্চায়েত ভোটের আগেও আদালতে যাতায়াতের পথে পার্থর দাবি ছিল, তৃণমূলই জিতবে। কিন্তু দল তাঁর কথা মনে রাখেনা। শুক্রবার শহীদ দিবসের অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে শাসকদলের কোনও নেতার মুখেই একবারের জন্য পার্থর নাম শোনা যায়নি।
গ্রেফতার হওয়ার দিন ছয়েকের মধ্যেই দল তাঁর মন্ত্রিত্ব এবং মহাসচিবের পদ কেড়ে নেয়। বস্তুত, তারপর থেকে তৃণমূল মহাসচিব পদের অস্তিত্ব আর রাখেনি। যে পার্থ এক সময় তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ডের মতো গুরুত্ব পেতেন, এখন সেই পার্থকেই দলের তাবড় নেতার এড়িয়ে চলেন। তাদের বলতে শোনা যায়, যে পার্থকে আমরা চিনতাম, এই পার্থ তিনি নন।