কলকাতা : পুলিশের গাফিলতির জন্য কোনও অভিযুক্ত নিজের সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারে না। যদি হয় সেক্ষেত্রে বরখাস্ত হবেন পুলিশ আধিকারিক। সোমবার এমনটাই মন্তব্য হাইকোর্টের। একটি জামিন সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে এই মন্তব্য করেন বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তের ডিভিশন বেঞ্চ।
২০২০ সালের ২১ শে নভেম্বর রায়গঞ্জ থানার একটি মোবাইলের দোকান থেকে ৮০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে রায়গঞ্জ থানার পুলিশ। এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় মুন্না মুস্তাফা ও শহীদ মোহাম্মদ কে। অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সাথে জড়িত উঠে আসে রফিক আলীর নাম। চলতি বছরে ২১ জুন পুলিশ গ্রেফতার করে রফিককে। নিম্ন আদালতে তার জামিনের আবেদন খারিজ হওয়ার পর তিনি কলকাতা হাইকোর্টে জামিনের আবেদন জানান।
জামিন সংক্রান্ত মামলার শুনানি দিন অনেকবার ধার্য হওয়ার পরেও সরকার পক্ষের আইনজীবীর পক্ষ থেকে আদালতে কেস ডায়েরি জমা দেওয়া হয়নি। বারবার কেস ডায়েরি তলবের পরেও না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয় হাইকোর্ট চলতি বছরের ১৮ নভেম্বর রায়গঞ্জ থানার তদন্তকারী আধিকারিককে সশরীরে হাইকোর্টে হাজিরার নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন – গ্রুপ ডি নিয়োগ মামলায় সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ হাইকোর্টের
সোমবার এই মামলার শুনানি চলাকালীন সরকার পক্ষের আইনজীবী অন্তরীক্ষ বসু আদালতে জানান-এই মামলার তদন্তকারী আধিকারিক রায়গঞ্জ থেকে মালদা স্থানান্তরিত হয়েছেন।যে কারণে কেস ডায়েরি আদালতে পেশ করা সম্ভব হয়নি। এরপরেই বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন জানতে চান এই সমস্ত ক্ষেত্রে আপনাদের কি নিয়মনীতি রয়েছে?
উত্তরে আইনজীবী বসু জানান কোনও তদন্তকারী আধিকারিক স্থানান্তরিত হলে প্রতিটি পুলিশ স্টেশনে একজন করে সাব ইন্সপেক্টর থাকেন।তাঁর দায়িত্ব তদন্তকারী আধিকারিকের অনুপস্থিতিতে আদালতের নির্দেশ মতো কেস ডায়েরি আদালতে হাজির করে থাকেন।সেই মোতাবেক আদালতে হাজির ছিলেন সাব ইন্সপেক্টর এনজামুল হক। এদিন তিনি আদালতের প্রশ্নের কাছে নিজের গাফিলতির কথা স্বীকার করেন।
গাফিলতির কথা প্রকাশ্যে আসার পরই বিচারপতি ট্যান্ডন বলেন আপনাদের মতো পুলিশ আধিকারিকদের চাকুরীতে থাকার কোন অধিকার নেই।এরপরেই বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্ত বলেন, আপনার অপরাধের জন্য একজন বিচারপ্রার্থী র তাঁর সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।এই ধরণের ঘটনাকে প্রশ্রয় দেওয়া যায় না। আবেদনকারীর জামিন মঞ্জুর করে পুলিশ আধিকারিকের চাকুরী থেকে বরখাস্ত করার মন্তব্য করে আদালত।
এরপরেই সরকার পক্ষের আইনজীবী বসু আবেদন করেন সাব ইন্সপেক্টর এনজামুল হককে চাকুরী থেকে বরখাস্ত না করা হয়। সরকারি আইনজীবীদের অনুরোধে পুলিশ সাব ইন্সেক্টরকে বরখাস্ত করা না হলেও পুলিশের এই ধরণের গাফিলতির ভবিষ্যতে বরদাস্ত করা হবে না বলে জানিয়েছে আদালত।